বিক্রেতা কারাগারে, ক্রেতা লোকচক্ষুর আড়ালে, ক্রেতার মা–বাবা কারাগারে, ভাই–বোন মামলার আসামি। একটি ছাগল ঘিরে এত কিছু ঘটে গেল, কিন্তু সেই ছাগল রয়েছে ছাগলের জায়গায়।
বলছি মতিউরের সেই ছাগলের কথা। বাদামি গায়ে ছোপ ছোপ দাগ, আকারে বেশ বড়। ২০২৪ সালে পবিত্র ঈদুল আজহায় সবচেয়ে আলোচিত ছিল এই ছাগল।
যাঁরা ভুলে গেছেন, তাঁদের মনে করিয়ে দিই, ২০২৪ সালের পবিত্র ঈদুল আজহার আগে সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ছাগলটি কেনেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তৎকালীন সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় ঘরের সন্তান মুশফিকুর রহমান (ইফাত)। সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন তখন ছাগলটির দাম নেন ১৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন‘উচ্চবংশীয়’ ছাগলের খামার সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান গ্রেপ্তার০৩ মার্চ ২০২৫মতিউরের ছেলে মুশফিকুর ছাগলটির সঙ্গে একটি সেলফি তুলে ফেসবুকে দেন। সে–ই শুরু। নেটিজেন ও পরে সাংবাদিকেরা বের করে ফেলেন, এই ছাগলের ক্রেতা এনবিআরের একজন কর্মকর্তার ছেলে। একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলে কীভাবে এত দাম দিয়ে একটি ছাগল কেনেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মতিউর দাবি করেন, ছাগলের ক্রেতা তাঁর ছেলে নন। পরে অবশ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, মতিউরের আরেক স্ত্রী আছেন। সেই ঘরের সন্তান ছাগলের ক্রেতা মুশফিকুর।
ছাগল–কাণ্ডের পর মতিউর এনবিআর থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। অবশ্য সবকিছু সেখানে শেষ হয়ে যায়নি। বেরিয়ে আসতে থাকে নানা কেলেঙ্কারির তথ্য। চাপের মুখে ২০২৪ সালের ৩ জুলাই সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশে আমদানি–নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের পাঁচটি গরু উদ্ধার করা হয়। পরে মামলা দেওয়া হয় সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ও খামারমালিক সমিতির সভাপতি ইমরানের বিরুদ্ধে।
এদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। গত জানুয়ারিতে দুদক অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মতিউর ও তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, তাঁদের ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে। ১৫ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন মতিউর ও তাঁর স্ত্রী লায়লা।
আরও পড়ুনছাগল–কাণ্ড: গত বছর ঈদে ইফাত এক খামার থেকেই কেনেন ৬টি পশু ২২ জুন ২০২৪মতিউরের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মতিউর ও লায়লা কারাগারে আছেন। তাঁরা জামিন পাননি। মুশফিকুর মাইনর, অর্থাৎ ঘটনার সময় বয়স ১৮ হয়নি। তিনি বিদেশে আছেন।
মতিউরের প্রথম ঘরের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান, মেয়ে ফারজানা রহমান (ঈশিতা) এবং দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তার পলাতক।
ছাগলটি কোথায়
মুশফিকুর সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ছাগলটি কিনলেও তা শেষ পর্যন্ত নেননি। সেটি রয়ে যায় সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুরের খামারে। খামারটি ‘অবৈধ’ভাবে সরকারি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছিল জানিয়ে ২০২৪ সালের জুনে তার বড় অংশ ভেঙে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
সাদিক অ্যাগ্রো সূত্র জানায়, পরে তারা অন্যান্য গরু–ছাগলের সঙ্গে আলোচিত ছাগলটিও সরিয়ে সাভারে নিজেদের আরেক খামারে নেয়। এখনো ছাগলটি সেই খামারে আছে। গতকাল সাদিক অ্যাগ্রোর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ছাগলটি তাঁদের কাছেই আছে। বিক্রি না করে তাঁরা এটি দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন।
ছাগলের যা–ই হোক, ছাগল–কাণ্ডকে কেন্দ্র করে মতিউর–পরিবার বিচারের আওতায় আসছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র র রহম ন ছ গলট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ বাড়ল ২ হাজার কোটি টাকা
নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা জানিয়েছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী বছরের জুনের মধ্যে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেটি পড়বে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে। এ কারণে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
গত সোমবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, তাতে আগামী অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ আর ২২৯ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৭১৬ কোটি টাকা পরিচালন বরাদ্দ ও ৪২৬ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ বেড়েছে ১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা বা ১৫৯ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের এই বরাদ্দ নিয়ে অবশ্য কোনো কথা বলেননি। তবে বাজেটের মন্ত্রণালয় ও খাতভিত্তিক বরাদ্দ তালিকায় নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দের এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বরাদ্দের তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার সিংহভাগই পরিচালন খরচ বাবদ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের পরিচালন বাবদ বরাদ্দ ছিল ৭১৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের সেই বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিচালন খরচ বাবদ আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ২ হাজার ১১ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখেই নির্বাচন কমিশনের জন্য পরিচালন বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। যার বড় অংশই খরচ হবে নির্বাচন আয়োজনের কাজে।
দেশে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। সেটি ছিল ২০২৩–২৪ অর্থবছর। ওই বছর নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যার মধ্যে পরিচালন খরচ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ ছিল ২০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের সর্বশেষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের জন্য পরিচালন খরচ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ বাবদ বরাদ্দ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।