কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমে বাবা-ছেলের মৃত্যু
Published: 9th, June 2025 GMT
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে একসঙ্গে গোসলে নেমে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুর ২টার দিকে সৈকতের সায়মন বিচ পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন- শাহীনুর রহমান (৬০) এবং তার ছেলে সিফাত (২০)। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তারা রাজশাহী থেকে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছিলেন।
কলাতলী পয়েন্টে দায়িত্বরত সিসিএফ লাইফগার্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মী সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, বাবা-ছেলে একসঙ্গে গোসলে নেমে ভেসে যাচ্ছিলেন। তখন লাইফগার্ডের কর্মীরা দেখতে পেয়ে দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর দু’জনই অতিরিক্ত রক্ত বমি করেন। একপর্যায়ে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সিসিএফ লাইফগার্ডের আরেক কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর জানান, গেল কয়েকদিন ধরে সাগর উত্তাল। বিভিন্ন পয়েন্টে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে এবং উল্টো স্রোতের টানও তীব্র। এজন্য লাইফগার্ডের আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে লাল-হলুদ এবং বাইরে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। কিন্তু নিহত দুই পর্যটক লাইফ গার্ডের আওতার বাইরে গিয়ে গোসলে নামেন। এসময় সাগরের গর্তে পড়ে তারা স্রোতের টানে ভেসে যান।
তিনি আরও বলেন, মরদেহ দুটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এর আগে শনিবার সাগরে গোসলে নেমে এক পর্যটক এবং শখের বসে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা প্রাণ হারান। ফলে গত দুই দিনে সমুদ্রসৈকতে তিনজন পর্যটকসহ মোট ৪ জনের মৃত্যু হলো।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ইফগ র ড র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের ‘শুল্ক হামলা’ আসিয়ানের ঐক্যকে পোক্ত করবে
ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব দেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেনি, সেসব দেশের ওপর তিনি বাড়তি হারে শুল্ক (ট্যাক্স) বসাবেন। এই শুল্ক ৮ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
এই ঘোষণা শুনে অনেক দেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে; কারণ এতে তাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই তারা ভাবছে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান গোষ্ঠীর দশটি দেশ খুব দ্রুত ও সক্রিয়ভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।
এই দেশগুলোর নেতারা খুব ভালোভাবে বুঝেছেন, গত কয়েক দশকে অর্থনীতিতে তাঁদের দেশ অনেক এগিয়ে গেছে।
একসময় জাপানের অর্থনীতি আসিয়ানের চেয়ে অনেক বড় ছিল, এখন সেটি প্রায় সমান–সমান। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে আসিয়ানের সম্মিলিত অর্থনীতি জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, বাংলাদেশের সামনে পথ কী১৬ মে ২০২৫ইতিমধ্যেই ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আসিয়ান বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চেয়েও বেশি অবদান রেখেছে।
আসিয়ানের এই অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মুক্ত বাণিজ্য। ২০০৩ সালে আসিয়ানের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাদের ৬১৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ২.৮ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে আসল সাফল্যের রহস্য ছিল শক্তিশালী নেতৃত্ব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ এবং ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো—দুই ভিন্ন ধরনের নেতা হলেও তাঁরা একসঙ্গে কাজ করে আসিয়ানকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন।
আজকের দিনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিম (মালয়েশিয়া), প্রাবোও সুবিয়ান্তো (ইন্দোনেশিয়া), তো লাম (ভিয়েতনাম) এবং লরেন্স ওং (সিঙ্গাপুর)। তাঁদের কেউ কেউ দীর্ঘ সময় রাজনীতির বাইরে ছিলেন; কিন্তু এখন তাঁরা একসঙ্গে কাজ করছেন।
আসিয়ানের নেতারা নিজেদের দেশ এবং গোটা অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতি রাখার জন্য সব সময় মিলেমিশে, পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন। ইন্দোনেশীয় ভাষায় এই পরামর্শ ও ঐকমত্যের নীতিকে বলা হয় ‘মুস্যায়াওয়ারাহ’ ও ‘মুফাকাত’।
আরও পড়ুনট্রাম্পের প্রতিশোধমূলক শুল্ক থেকে বাংলাদেশ যেভাবে লাভবান হতে পারে০৪ এপ্রিল ২০২৫বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশে রাজনীতি নিয়ে হিংসা, সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা দেখা যায়, কিন্তু আসিয়ানে এমনটা খুব একটা হয় না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্য সব সময়ই যুদ্ধ ও অশান্তিতে থাকে। এমনকি ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার মতো বড় দেশগুলোর নেতারাও একে অপরের সঙ্গে কথাই বলেন না।
কিন্তু আসিয়ান ৪৮ বছর ধরে নিয়মিত বৈঠক করছে। তাদের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ১,০০০টি মিটিং হয়। এই নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমেই তারা গঠনমূলক সম্পর্ক গড়তে শিখেছে।
কেউ কেউ বলে আসিয়ান খুব ধীরে চলে, কিন্তু এই ধীর-স্থির ও মিলে-মিশে চলার নীতিই আসিয়ানকে এতগুলো বছর, এমনকি অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও একসঙ্গে টিকিয়ে রেখেছে।
এখন ট্রাম্পের শুল্ক নীতির জবাবে আসিয়ান একসঙ্গে কাজ করছে। যদিও ট্রাম্প প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা করে শুল্ক ধরেছেন। যেমন কম্বোডিয়ার জন্য ৪৯ শতাংশ আর সিঙ্গাপুরের জন্য ১০ শতাংশ। তবে আসিয়ান দেশগুলো বুঝেছে, এক সঙ্গে থাকলেই শক্তি বাড়ে।
তাই কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনে তারা ট্রাম্প ও আসিয়ানের ১০ দেশের নেতাদের নিয়ে একটি সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছে।
এর আগেও আসিয়ান ঘোষণা দিয়েছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও জোরালো ও ভবিষ্যৎমুখী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চায়। তারা এমন একটা সহযোগিতা চায় যাতে উভয় পক্ষ লাভবান হবে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও উচ্চ-মূল্যের খাতগুলোতে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্কে সি’র খেলা: পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কি ক্ষয়িষ্ণু?১২ এপ্রিল ২০২৫কারণ আসিয়ানের সেবা খাতে যুক্তরাষ্ট্র বড় মুনাফা করে এবং সেখানে আমেরিকার বিনিয়োগও অনেক। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
তবে আসিয়ান এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে না। তারা চীন ও গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সঙ্গে নতুন এক সম্মেলন করেছে।
এই ধরনের সম্মেলন এবারই প্রথম। এতে বোঝা যাচ্ছে, শুধু আমেরিকার দিকে নয়, আসিয়ান তার ভবিষ্যৎ গড়তে নানা দিকেই তাকাচ্ছে।
বিশ্ব যখন ট্রাম্পের একপক্ষীয় শুল্ক নীতির বিরোধিতা করছে, আসিয়ান তখন মুক্ত বাণিজ্যেই আস্থা রাখছে।
এখন তারা নন-ট্যারিফ বাধা দূর করতে চায় এবং গোষ্ঠীর ভেতরে পণ্য চলাচল সহজ করতে চায়। তাদের নিজেদের মধ্যে বর্তমানে ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত চলাচল জারি আছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি হয়তো স্বল্পমেয়াদে আসিয়ানের অর্থনীতিকে কিছুটা ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু এই সংকটই আসিয়ানকে আরও এক জোট হতে, নিজেদের মধ্যে ও অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এতে আসিয়ান আরও সমৃদ্ধ এবং টেকসই একটি গোষ্ঠীতে পরিণত হতে পারে।এ ছাড়া আসিয়ান দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতেও চায়। যদিও তাদের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য মোট বাণিজ্যের শতাংশ হিসেবে একটু কমেছে (২০০৩ সালে ছিল ২৫ %, আর ২০২৩ সালে তা হয়েছে ২১.৫ %), তবে তার কারণ বাইরের দেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য অনেক বেড়েছে।
এখন তারা নন-ট্যারিফ বাধা দূর করতে চায় এবং গোষ্ঠীর ভেতরে পণ্য চলাচল সহজ করতে চায়। তাদের নিজেদের মধ্যে বর্তমানে ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত চলাচল জারি আছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি হয়তো স্বল্পমেয়াদে আসিয়ানের অর্থনীতিকে কিছুটা ক্ষতি করতে পারে।
কিন্তু এই সংকটই আসিয়ানকে আরও এক জোট হতে, নিজেদের মধ্যে ও অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এতে আসিয়ান আরও সমৃদ্ধ এবং টেকসই একটি গোষ্ঠীতে পরিণত হতে পারে।
সত্ত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত
কিশোর মাহবুবানি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর-এর এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর অনারারি ফেলো।