পাঁচ মাসে বাজার মূলধন কমেছে ৫১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা
Published: 12th, June 2025 GMT
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মোট বাজার মূলধন গত মে মাসের শেষে ৩ লাখ ৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় নেমেছে। এক মাস আগে এপ্রিলের শেষে যা ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ারের বাজার মূলধন ২০ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমেছে। তবে গত ডিসেম্বরের শেষের তথ্য বিবেচনায় নিলে পাঁচ মাসে বাজার মূলধন কমেছে ৫১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৪ শতাংশ। ওই সময় ঢাকার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ার ও ৩৭ মিউচুয়াল ফান্ডের মোট বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
অবশ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে বাজার মূলধনের যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, সে হিসাবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা এবং গত ডিসেম্বরের তুলনায় ১৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাজার মূলধন গত মে মাসের শেষে ছিল ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। আদতে সরকারি ট্রেজারি বন্ড এবং করপোরেট বন্ডের বাজার মূলধন যোগ করে বাজার মূলধন হিসাব করছে স্টক এক্সচেঞ্জটি।
সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় জিডিপির আকার বিবেচনায় দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন অনেকটাই কম। এটি বাড়িয়ে দেখাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নির্দেশে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে মূলধনি বাজারের সঙ্গে বন্ড বাজারের বাজার মূলধন যোগ করে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশে বন্ড বাজারকে বাজার মূলধনে যোগ করা হয় না।
কৃত্রিমভাবে শেয়ারবাজারকে বড় করে দেখানোর এমন নিয়ম এখনও অনুসরণ করে যাচ্ছে ডিএসই। এতে শেয়ারবাজারের দর পতনের সার্বিক চিত্র বাজার মূলধনের পতনে প্রতিফলিত হচ্ছে না। একদিকে শেয়ারবাজারের লাগাতার দরপতন হচ্ছে, অন্যদিকে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ট্রেজারি বন্ডের দর বাড়ছে। আবার নতুন ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর কারণে এ খাতের বাজার মূলধন বাড়ছে। ট্রেজারি বন্ডের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পাওয়ায় শেয়ারবাজারের বড় পতন অনেকটাই ছোট হয়ে আসছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সব খাতেরই বাজার মূলধন কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে গত ডিসেম্বরের তুলনায় সর্বাধিক বাজার মূলধন কমেছে ব্যাংক খাতের। এর পরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে টেলিযোগাযোগ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, ওষুধ এবং রসায়ন খাতের।
ব্যাংক খাতে বড় পতন
গত ডিসেম্বরের তুলনায় ব্যাংক খাতের বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত এপ্রিলেই কমেছে ৪ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের বাজার মূলধন ছিল সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, যা মে মাস শেষে নেমেছে ৬০ হাজার ৩৯৩ কোটিতে। ডিসেম্বর শেষে মোট বাজার মূলধনে যেখানে এ খাতের অংশ ছিল ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত মে মাসের শেষে তা ১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমেছে।
টেলিকম ও ফার্মা খাতে স্থিতিশীলতা
টেলিকম খাতে ডিসেম্বরে বাজার মূলধন ছিল ৬০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা মে মাসে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৭১৪ কোটি টাকায়। মোট বাজার মূলধনে খাতটির অংশ ১৭ দশমিক ০৮ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। টাকার অঙ্কে বাজার মূলধন কমলেও শতাংশ বিবেচনায় বৃদ্ধির কারণ হলো অন্য খাতে তুলনামূলক দর পতন বেশি হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস খাতেও পতন হয়েছে, যদিও তুলনামূলক তা নিয়ন্ত্রিত। ডিসেম্বর শেষে এ খাতের বাজার মূলধন ছিল ৫৬ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, যা মে শেষে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮৯৯ কোটিতে। কমেছে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে বাজারে খাতটির অবস্থান বেড়ে হয়েছে ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।
খাদ্য খাতে কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা
খাদ্যপণ্য খাতে ডিসেম্বরে বাজার মূলধন ছিল ৩১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা, যা মে মাসে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৫৩৯ কোটিতে। পাঁচ মাসে এ খাতের ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি মূলধন ঝরে গেছে। বাজার অংশীদারিত্ব ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে নেমেছে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশে।
প্রকৌশল ও জ্বালানি খাতে পতন অব্যাহত
প্রকৌশল খাতের বাজার মূলধন ডিসেম্বরে ছিল ২৮ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। মে মাসে তা কমে দাঁড়ায় ২৪ হাজার ১৪৬ কোটিতে। জ্বালানি খাতেও রয়েছে পতনের প্রবণতা। ডিসেম্বরে ২৯ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা থেকে মে মাসে ২৭ হাজার ১৫৮ কোটিতে নেমেছে।
টেক্সটাইল খাতে মূল্য কমেছে
টেক্সটাইল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ও পরিশোধিত মূলধন (৭৪৬৫ কোটি টাকা) তুলনামূলক বেশি হলেও বাজার মূলধনে তার প্রতিফলন নেই। ডিসেম্বর শেষে খাতটির
বাজার মূলধন ছিল ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, যা মে মাসের শেষে নেমে এসেছে ১০ হাজার ১০৬ কোটিতে।
বীমা ও অন্যান্য খাত
বীমা খাতে মে মাসে বাজার মূলধন ছিল ১০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। তবে বাজারে খাতটির অংশীদারিত্ব একই রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও প্রায় একই ধারা বজায় আছে। ডিসেম্বরে বাজার মূলধন ছিল ২৭৭৩ কোটি টাকা, মে মাসে যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮২৬ কোটিতে। সিরামিক, সিমেন্ট, সার্ভিস, ট্রাভেল, ট্যানারি, জুট, পেপার খাতগুলোতে বাজার মূলধনে সামান্য ওঠানামা থাকলেও সামগ্রিক বাজারে তাদের প্রভাব তুলনামূলক কম।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র খ ত র ব জ র ম লধন ব জ র ম লধন ছ ল ম ট ব জ র ম লধন ড স ম বর শ ষ শ য় রব জ র বন ড র প রক শ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদলের ১২ দাবি
আসন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সংগঠনটির নেতারা জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসানের কাছে এসব দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
আরো পড়ুন:
২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ
২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির
স্মারকলিপিতে ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী সংবিধি ও আচরণবিধি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে। তারা বিশ্বাস করে, নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য দায়বদ্ধ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ছাত্রদলের ১২ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে; নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে; স্বচ্ছ গ্লাসের ব্যালট বাক্স ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতিটি বাক্সে আলাদা নম্বর থাকতে হবে; ব্যালট ছাপানোর সংখ্যা, কাস্টিং ভোটার ও নষ্ট ব্যালটের সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে; কোনো মিডিয়া ট্রায়ালের ক্ষেত্রে (ভুল তথ্য প্রচার হলে) সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তবে সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে অবাধ স্বাধীনতা দিতে হবে; পোলিং এজেন্টরা নিজ কেন্দ্রেই অবস্থান করবেন, তবে অন্য কেন্দ্রে প্রবেশ বা অনুমতি ছাড়া পরিবর্তন করা যাবে না।
বাকি দাবিগুলো হলো- ডাকসু, চাকসু, রাকসু ও জাকসুর নির্বাচনের সময়সূচি বিবেচনা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের সুবিধা অনুযায়ী যথাযথ সময় রেখে জকসু নির্বাচন নির্ধারণ করতে হবে; আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন হলে নির্বাচনী প্রচারণার আচরণবিধি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে, পাশাপাশি ফাউন্ডেশনের চুক্তি ও অবস্থান বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে; অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমফিল শিক্ষার্থীদেরও জকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে এবং বিধিমালা থেকে তাদের বাদ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
এছাড়া জকসুর আচরণবিধির ৬ নম্বর ধারার আলোকে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্যদের জন্য বিশেষ কার্ড দিতে হবে, যা নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে কার্যকর হবে; রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নির্বাচনী প্রচার ও অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচি চলমান রাখার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন।
নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, যেন একটি গণতান্ত্রিক, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, যেখানে সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। অন্যথায়, কমিশন কোনো গোষ্ঠীর প্রভাব বা চাপের মুখে পড়ছে বলে শিক্ষার্থীদের মনে হতে পারে।
ছাত্রদলের নেতারা জানান, তারা সন্তোষজনকভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি উপস্থাপন করেছে এবং কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকার ওপর তাদের আস্থা রয়েছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী