দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মোট বাজার মূলধন গত মে মাসের শেষে ৩ লাখ ৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় নেমেছে।  এক মাস আগে এপ্রিলের শেষে যা ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ারের বাজার মূলধন ২০ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমেছে। তবে গত ডিসেম্বরের শেষের তথ্য বিবেচনায় নিলে পাঁচ মাসে বাজার মূলধন কমেছে ৫১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৪ শতাংশ। ওই সময় ঢাকার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ার ও ৩৭ মিউচুয়াল ফান্ডের মোট বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। 

অবশ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে বাজার মূলধনের যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, সে হিসাবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা এবং গত ডিসেম্বরের তুলনায় ১৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাজার মূলধন গত মে মাসের শেষে ছিল ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। আদতে সরকারি ট্রেজারি বন্ড এবং করপোরেট বন্ডের বাজার মূলধন যোগ করে বাজার মূলধন হিসাব করছে স্টক এক্সচেঞ্জটি।
সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় জিডিপির আকার বিবেচনায় দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন অনেকটাই কম। এটি বাড়িয়ে দেখাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নির্দেশে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে মূলধনি বাজারের সঙ্গে বন্ড বাজারের বাজার মূলধন যোগ করে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশে বন্ড বাজারকে বাজার মূলধনে যোগ করা হয় না। 

কৃত্রিমভাবে শেয়ারবাজারকে বড় করে দেখানোর এমন নিয়ম এখনও অনুসরণ করে যাচ্ছে ডিএসই। এতে শেয়ারবাজারের দর পতনের সার্বিক চিত্র বাজার মূলধনের পতনে প্রতিফলিত হচ্ছে না। একদিকে শেয়ারবাজারের লাগাতার দরপতন হচ্ছে,  অন্যদিকে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ট্রেজারি বন্ডের দর বাড়ছে। আবার নতুন ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর কারণে এ খাতের বাজার মূলধন বাড়ছে। ট্রেজারি বন্ডের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পাওয়ায় শেয়ারবাজারের বড় পতন অনেকটাই ছোট হয়ে আসছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সব খাতেরই বাজার মূলধন  কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে গত ডিসেম্বরের তুলনায় সর্বাধিক বাজার মূলধন কমেছে ব্যাংক খাতের। এর পরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে টেলিযোগাযোগ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, ওষুধ এবং রসায়ন খাতের।

ব্যাংক খাতে বড় পতন
গত ডিসেম্বরের তুলনায় ব্যাংক খাতের বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত এপ্রিলেই কমেছে ৪ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের বাজার মূলধন ছিল সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, যা মে মাস শেষে নেমেছে ৬০ হাজার ৩৯৩ কোটিতে। ডিসেম্বর শেষে মোট বাজার মূলধনে যেখানে এ খাতের অংশ ছিল ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত মে মাসের শেষে তা ১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমেছে। 

টেলিকম ও ফার্মা খাতে স্থিতিশীলতা
টেলিকম খাতে ডিসেম্বরে বাজার মূলধন ছিল ৬০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা মে মাসে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৭১৪ কোটি টাকায়। মোট বাজার মূলধনে খাতটির অংশ ১৭ দশমিক ০৮ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। টাকার অঙ্কে বাজার মূলধন কমলেও শতাংশ বিবেচনায় বৃদ্ধির কারণ হলো অন্য খাতে তুলনামূলক দর পতন বেশি হয়েছে। 
ফার্মাসিউটিক্যালস খাতেও পতন হয়েছে, যদিও তুলনামূলক তা নিয়ন্ত্রিত। ডিসেম্বর শেষে এ খাতের বাজার মূলধন ছিল ৫৬ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, যা মে শেষে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮৯৯ কোটিতে। কমেছে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে বাজারে খাতটির অবস্থান বেড়ে হয়েছে ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।

খাদ্য খাতে কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা
খাদ্যপণ্য খাতে ডিসেম্বরে বাজার মূলধন ছিল ৩১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা, যা মে মাসে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৫৩৯ কোটিতে। পাঁচ মাসে এ খাতের ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি মূলধন ঝরে গেছে। বাজার অংশীদারিত্ব ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে নেমেছে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশে।

প্রকৌশল ও জ্বালানি খাতে পতন অব্যাহত
প্রকৌশল খাতের বাজার মূলধন ডিসেম্বরে ছিল ২৮ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। মে মাসে তা কমে দাঁড়ায় ২৪ হাজার ১৪৬ কোটিতে। জ্বালানি খাতেও রয়েছে পতনের প্রবণতা। ডিসেম্বরে ২৯ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা থেকে মে মাসে ২৭ হাজার ১৫৮ কোটিতে নেমেছে।

টেক্সটাইল খাতে মূল্য কমেছে
টেক্সটাইল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ও পরিশোধিত মূলধন (৭৪৬৫ কোটি টাকা) তুলনামূলক বেশি হলেও বাজার মূলধনে তার প্রতিফলন নেই। ডিসেম্বর শেষে খাতটির
বাজার মূলধন ছিল ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, যা মে মাসের শেষে নেমে এসেছে ১০ হাজার ১০৬ কোটিতে। 
বীমা ও অন্যান্য খাত
বীমা খাতে মে মাসে বাজার মূলধন ছিল ১০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। তবে বাজারে খাতটির অংশীদারিত্ব একই রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও প্রায় একই ধারা বজায় আছে। ডিসেম্বরে বাজার মূলধন ছিল ২৭৭৩ কোটি টাকা, মে মাসে যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮২৬ কোটিতে। সিরামিক, সিমেন্ট, সার্ভিস, ট্রাভেল, ট্যানারি, জুট, পেপার খাতগুলোতে বাজার মূলধনে সামান্য ওঠানামা থাকলেও সামগ্রিক বাজারে তাদের প্রভাব তুলনামূলক কম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র খ ত র ব জ র ম লধন ব জ র ম লধন ছ ল ম ট ব জ র ম লধন ড স ম বর শ ষ শ য় রব জ র বন ড র প রক শ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ