ভোলায় চাহিদার তুলনায় বৈধ নৌযানের সংখ্যা কম হওয়ায় ঈদ উদ্‌যাপন শেষে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ইলিশা লঞ্চঘাটের যাত্রীরা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে কিংবা অবৈধ নৌযানে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ঈদের সময় এমন ভোগান্তি হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

আজ শুক্রবার ভোর থেকে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইলিশা লঞ্চঘাটে গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করে। আজ ভোর থেকে যাত্রীদের চাপ আগের তুলনায় আরও বেশি। তাঁদের অভিযোগ, গত ২৫ বছর ধরে এই নৌপথে ঈদ এলেই যাত্রীদের এমন ভোগান্তি দেখা যায়। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

আরও পড়ুনরাজধানীমুখী মানুষের ভিড়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট১ ঘণ্টা আগে

আজ সকালে ইলিশা লঞ্চঘাট–সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকা, রাস্তাঘাট, নদী তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। লঞ্চ-সিট্রাকগুলো ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে এসব যানে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। দুই-তিন গুণ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌযানগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। যাত্রী চাপের কারণে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লঞ্চঘাটে অপেক্ষা করছেন। অনেকেই সময় বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠে পড়েন অবৈধ স্পিডবোট ও স্টিল বডির ট্রলারে। অরক্ষিত এসব নৌযানে করে তাঁরা পাড়ি দিচ্ছেন উত্তাল মেঘনা।

ভোলায় কর্মরত বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) জসিম উদ্দিন জানান, ঈদ উপলক্ষে বাড়তি নৌযানের অনুমোদন আছে কি না, জানা নেই। এ নৌপথে চারটি সিট্রাক ছাড়াও ‘আবদুস সালাম’ নামের আরেকটি নৌযান চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি ডক-ইয়ার্ডে থেমে আছে।

অনেক যাত্রীই ঝুঁকি এড়াতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ঘাটে লঞ্চ কিংবা ফেরির অপেক্ষা করছেন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট

আজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • ডুবচরে আটকা পড়া ‘বোগদাদিয়া ৭’ এর যাত্রীরা নিরাপদে
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ