কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
Published: 13th, June 2025 GMT
ইরানে আজ শুক্রবার ভোররাতে বিমান হামলা করেছে ইসরায়েল। তেহরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠকের একদিন আগেই এ হামলা চালাল ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কয়েকবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। তেহরানে ইসরায়েলের আজকের এই হামলার ফলে দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। খবর রয়টার্সের
ইসরায়েল ও ইরানের শত্রুতা নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরে দুই দেশ স্থল, সমুদ্র, আকাশ এবং সাইবার হামলাসহ একে অপরের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আসছে। এসব সংঘাত তাদের সম্পর্ককে বৈরিতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, যা এখন ধীরে ধীরে প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গত কয়েক দশকে হওয়া প্রধান কিছু ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো—
১৯৭৯: ইরানের বিপ্লব
ইরানের পশ্চিমাপন্থি নেতা মোহাম্মদ রেজা শাহ ইসরায়েলকে মিত্র দেশ হিসেবে বিবেচনা করতেন। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের ফলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এই বিপ্লবের ফলে ইরানে শিয়াপন্থি ধর্মতন্ত্রভিত্তিক একটি নতুন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শাসনব্যবস্থার আদর্শগত নীতির অন্যতম ভিত্তি ছিল ইসরায়েলবিরোধিতা।
১৯৮২: হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠা
ইসরায়েল ১৯৮২ সালে লেবাননে আক্রমণ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির শিয়া মুসলিম নেতারা সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ গড়ে তোলেন। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)। পরবর্তী সময়ে এই আধাসামরিক সংগঠনটি সীমান্তে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়।
১৯৮৩: লেবাননে ইসরায়েলি সেনাঘাঁটিতে হামলা
লেবানন থেকে পশ্চিমা ও ইসরায়েলি বাহিনীকে বিতাড়িত করতে ইরানসমর্থিত হিজবুল্লাহ আত্মঘাতী বোমা হামলার কৌশল গ্রহণ করে। এ বছরের নভেম্বর মাসে বিস্ফোরক ভর্তি একটি গাড়ি লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক সদরদপ্তরে ঢুকে হামলা চালায়। এরপর ইসরায়েল লেবাননের বেশির ভাগ এলাকা থেকে সরে আসে।
১৯৯২-৯৪: আর্জেন্টিনায় হামলা
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে ১৯৯২ সালে ইসরায়েলি দূতাবাস এবং একটি জুইশ সেন্টারে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বহু মানুষ নিহত হন। আর্জেন্টিনা ও ইসরায়েল এ হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইরান ও হিজবুল্লাহকে দায়ী করে। তবে ইরান ও হিজবুল্লাহ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০০২: ইরানোর পরমাণু কর্মসূচি
ইরানের গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি ফাঁস হওয়ার ফলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় যে, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে। আর এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে তা হবে দেশটির আন্তর্জাতিক চুক্তির পরিপন্থি। যদিও ইরান এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। অন্যদিকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
২০০৬: ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ
লেবাননে ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ মাসব্যাপী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইসরায়েল ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হিজবুল্লাহকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে কার্যকরী একটি সমঝোতার মধ্য দিয়ে ওই যুদ্ধের অবসান ঘটে।
২০০৯: ‘ইসরায়েল হচ্ছে ক্যানসার’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বক্তৃতায় ইসরায়েলকে ‘একটি বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী ক্যানসার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
২০১০: পরমাণু স্থাপনায় সাইবার হামলা
ওই বছর তেহরানের নাতাজ এলাকায় একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় সাইবার হামলা চালানো হয়। এ হামলায় স্টাক্সনেট নামের একটি কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই ভাইরাস তৈরি করেছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়। ওই হামলাকে শিল্প যন্ত্রপাতির ওপর প্রথম কোনো প্রকাশ্য সাইবার হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০১২: ইরানি বিজ্ঞানী নিহত
নিজ গাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী মোস্তফা আহমাদি রোশন নিহত হন। তেহরানে একটি মোটরসাইকেল আরোহী তার গাড়িতে বোমাটি স্থাপন করে। এক স্থানীয় কর্মকর্তার অভিযোগ, ওই হামলার পেছনে ইসরায়েলের হাত ছিল।
২০১৮: সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা
ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেন তিনি। এর আগে বছরের পর বছর ধরে ট্রাম্প প্রশাসন ওই চুক্তির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল।
মে মাসে ইসরায়েল জানায়, তারা সিরিয়ায় ইরানের একটি সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। এর আগে দেশটির ইসরায়েল–নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমিতে রকেট ছুড়েছিল ইরানি সামরিক বাহিনী। ওই সময় গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল তেহরান।
২০২০: কাসেম সুলাইমানিকে হত্যা
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের বিদেশি শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডকে স্বাগত জানায় ইসরায়েল। ইরাকের বাগদাদে একটি মার্কিন ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হয়েছিলেন। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরাকে বিভিন্ন মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এসব হামলায় প্রায় ১০০ মার্কিন সামরিক সদস্য আহত হন।
২০২১: ইরানের পরমাণু কর্মসূচির পরিকল্পনাকারীকে হত্যা
মোহসেন ফখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে ইরান। মোহসেনকে ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করত পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে ইরান লম্বা সময় ধরে এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে।
২০২২: যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল চুক্তি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ এক যৌথ প্রতিশ্রুতিনামায় স্বাক্ষর করেন। এতে তারা একসঙ্গে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণে বাধা দিতে সম্মত হন। দীর্ঘদিন ধরে তেহরান ইস্যুতে কূটনৈতিকভাবে বিভক্ত মিত্রদেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতীক হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এই প্রতিশ্রুতি মূলত ‘জেরুজালেম ঘোষণার’ একটি অংশ। এটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের ইসরায়েলে প্রথম সফরের সেরা অর্জন। এর ঠিক একদিন আগে বাইডেন স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বলেন, প্রয়োজনে ইরানের বিরুদ্ধে শেষমেশ ‘শক্তি প্রয়োগ’ করতেও প্রস্তুত তিনি।
এপ্রিল ২০২৪: ইরানি দূতাবাসে হামলা
সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাস প্রাঙ্গণে সন্দেহভাজন ইসরায়েলি বিমান হামলায় রেভল্যুশনারি গার্ডের সাত কর্মকর্তা নিহত হন। এর মধ্যে দুজন সিনিয়র কমান্ডারও ছিলেন। যদিও ইসরায়েল এ হামলার দায় স্বীকার বা অস্বীকার করেনি।
২০২৪: পাল্টাপাল্টি হামলা
১৩ এপ্রিল ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো সরাসরি আঘাত করে। ১৯ এপ্রিল ইসরায়েল ইরানের ভূখণ্ডে পাল্টা হামলা চালায় বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
অক্টোবর ২০২৪
গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের বৈরুতের দক্ষিণ উপশহরে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং এর আগে ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানীতে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়। এর প্রতিশোধ নিতে গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলে ১৮০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান।
জবাবে ওই মাসের শেষ দিকে ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। তবে এসব হামলা খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করে ইরান।
জুন ২০২৫
ইসরায়েল ইরানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েল বলেছে, তেহরানের পারমাণবিক অবকাঠামো এবং পারমাণবিক বোমার জন্য কাজ করা বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ হামলায় ইরানের কমান্ডার ও ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলোও নিশানা করা হয়। ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, এ হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী ফারেদুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা এই অভিযানে কোনো সহায়তা করেনি। এ হামলার একদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন কর্মীদের সরানো হচ্ছে। কারণ, ‘অঞ্চলটি বিপজ্জনক হতে পারে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র ও ইসর য় ল ইসর য় ল র র ইসর য় ল য় ইসর য় ল পদক ষ প ল ব নন পরম ণ বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ
পাঁচ বছরে দেশের ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে হবে ৫৬ দশমিক ৬ ০ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পাবে ৫০ শতাংশ। অর্থ বিভাগের করা সাম্প্রতিক এক প্রক্ষেপণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ঋণের স্থিতি ছিল আঠারো লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ঋণের এই স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসেবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণের স্থিতি টাকার অঙ্কে বৃদ্ধি পাবে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
গত ২ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২৫-২০২৬ হতে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ধারবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ১৫.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১.৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছে।
পূর্বাভাষ অনুযায়ী, ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এটি জিডিপি’র ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ হবে। যদিও বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি’র অনুপাত বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত নিরাপদ সীমার মধ্যে রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে নিবিড় মনিটরিং ও সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।
একটি স্থিতিশীল এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি নিশ্চিত করার পথে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম রাজস্ব সংগ্রহ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধ ব্যয়-বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতে ঋণ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিলেও এটি মুদ্রার বিনিময় হার ঝুঁকি, ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারের ওপর অর্থায়নের চাপ থাকছে। অন্যদিকে, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজন।
এ প্রেক্ষাপটে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে একটি মধ্যমেয়াদি ঘাটতি অর্থায়ন কৌশল অনুসরণ করছে। ঘাটতি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ট্রেজারি বন্ড ও বিল এবং জাতীয় সঞ্চয় স্কিম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক উৎসসমূহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে নমনীয় ও অ-নমনীয় ঋণ উল্লেখযোগ্য।
ঋণ প্রোফাইলের এক চিত্র উপস্থাপন করে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষে মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, যার মধ্যে ২১.৫২ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ১৬ .১০ শতাংশ বৈদেশিক উৎস থেকে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণের সিংহভাগ (৫৮%) এসেছে ব্যাংকিং খাত থেকে, এরপর রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় স্কিম যার অবদান ৩৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ পাওয়া গেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সি (আইডিএ) থেকে, এরপর আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান।
ঋণ স্থিতির মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র অনুপাতে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের শেষে মোট ঋণ জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ হতে পারে জিডিপি’র ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ হতে পারে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিগত বছরগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বন্টন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ফলে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে অনুদান এবং নমনীয় ঋণ (কম সুদের হার, দীর্ঘ পরিশোধকাল) পাওয়ার সুবিধাদি ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে তুলনামূলক উচ্চ সুদের হার ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। যার ফলে ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এসময় বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির মধ্যমেয়াদী চিত্র অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের গৃহীত কার্যকর কৌশলগুলোর বাস্তবায়নের ওপর।
যদি রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ঋণ ব্যবস্থপনায় কার্যকর সংস্কার না আনা যায়, তাহলে ঋণের স্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। তবে, মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ এই উত্তরণের পথ দক্ষতার সাথে অতিক্রম করতে পারবে এবং উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থানের সুফল গ্রহণের পাশাপাশি একটি টেকসই ঋণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
ঢাকা/এস