গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
Published: 14th, June 2025 GMT
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা বাগেরহাটের ছাত্র সামিউল ইসলাম এখন চরম অসহায়ত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন। হামলায় গুরুতর আহত হওয়ায় তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। এমনকি, ঠিকভাবে বসতেও পারেন না সামিউল।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বাগেরহাট কোর্ট চত্বরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার শিকার হন সামিউল ইসলাম। এতে তার হাতের পেশি কেটে যায় এবং মাথা ও পিঠে গুরুতর আঘাত লাগে। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরও পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি।
এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা সামিউল ইসলামের। ২৬ জুন শুরু হতে যাওয়া পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা দাবি জানিয়েছেন, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়, সেরকম ব্যবস্থা করা হোক সামিউলের জন্যও।
সামিউলের প্রতিবেশী শামসুদ্দোহা বলেছেন, “সামিউল হামলায় আহত হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যায় ভুগছে। সরকারিভাবে যেভাবে অসুস্থদের সহায়তা দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেভাবে তাকেও সুযোগ দেওয়া হোক।”
সামিউলের বাবা আইয়ুব আলী শেখ বলেছেন, “আমার একমাত্র ছেলে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। এখনো তার পিঠ ও হাতে ব্যথা আছে। অনেক খরচ করে চিকিৎসা করালেও উন্নতি হয়নি। সরকার যেন উন্নত চিকিৎসা ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়।”
সামিউলের মা রুবিয়া বেগম বলেছেন, “ছাত্রলীগের হামলায় ওর যা অবস্থা হয়েছে, তা বলার মতো না। আমরা ওকে ভয়ে কোথাও নিতে পারিনি। এখন সে কিছুই করতে পারে না। পরীক্ষা দিতে পারলে হয়ত ভবিষ্যতের একটা রাস্তায় পৌঁছাতে পারত।”
সামিউল ইসলাম বলেছেন, “আমি এখনো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। খেতেও কষ্ট হয়। লেখালেখি করতে পারি না। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু এখনো সুস্থ না হওয়ায় সব অনিশ্চিত হয়ে গেছে। আমি চাই, সরকার যেন আমাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয় এবং উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।”
আন্দোলনের সহযোদ্ধা মো.
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাগেরহাট জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম শেখ বলেছেন, “সামিউলের চিকিৎসা এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। সে আমাদের আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। তার বর্তমান অবস্থা আমাদের ব্যথিত করে।”
রাংদিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন বলেছেন, “সামিউল মেধাবী শিক্ষার্থী। সরকার যদি তাকে বিশেষ সুবিধা দেয়, তাহলে সে ভালো ফল করতে পারবে।”
ঢাকা/শহিদুল/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ য় অ শ স ম উল র বল ছ ন অন শ চ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই ৩৬ কর্ণার’ উদ্বোধন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্তিতে মাসব্যাপী গৃহীত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘জুলাই ৩৬ কর্নার’ উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ কর্নার উদ্বোধন করেন। এতে গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন আলোকচিত্র, পেপার কাটিং, গ্রন্থসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট রাখা হয়েছে।
এ সময় উপাচার্য বলেন, “সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতা তাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে। আমার বিশ্বাস ‘জুলাই ৩৬ কর্নার’ তারই একটি স্থায়ী অবস্থান। এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল এই কর্নারে মাধ্যমে তা স্থায়ী রূপ নিতে ভূমিকা রাখবে।”
আরো পড়ুন:
রাকসু: দীর্ঘ ৩৫ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটাবে যে নির্বাচন
কুয়েটে অচলাবস্থার ১৬০ দিন, ক্লাস শুরু মঙ্গলবার
তিনি আরো বলেন, “জুলাই-আগস্টে যে আত্মত্যাগের ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে তা বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অনাগত প্রজন্ম আরো গবেষণার মধ্য দিয়ে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস তৈরি করবে। এজন্য যাদের কাছে নতুন তথ্য ও ডকুমেন্ট আছে, তাদের এখানে জমাদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের মতো জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানও একই স্পিরিটে স্মরণ করা হবে।”
কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার উদ্রেক যেন না হয়, সেজন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য।
উদ্বোধন শেষে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মো: আব্দুল হাকীম।
এরপর অতিথিবৃন্দ ‘জুলাই ৩৬ কর্নার’ ঘুরে দেখেন। শেষে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের আশেপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করেন তারা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, জুলাই গণঅভ্যুত্থান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আশরাফুল আলমের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, অগ্নিবীণা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. হারুনুর রশিদ, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আহমেদ শাকিল হাসমী, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও জুলাই গণঅভ্যুথান উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব মো. অলি উল্লাহ, গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহা. আজিজুর রহমান প্রমুখ।
ঢাকা/মুজিবুর/মেহেদী