গ্রামের মেঠোপথে শিশির ভেজা বাতাস, দূরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছোট ছোট ক্ষেত। অথচ এর মধ্যেই শুরু হয়ে যেত একজন মানুষের পথচলা, আমার বাবা। তিনি ছিলেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামে তখনও আধুনিকতার ছোঁয়া আসেনি, পাকা রাস্তাও ছিল না, আর যাতায়াত বলতে পায়ে হাঁটা- একটাই উপায়।
স্কুল শুরু হতো সকাল ৯ টায়, কিন্তু বাবা পৌঁছে যেতেন প্রায় ঘণ্টাখানেক আগেই। তাঁর যুক্তি ছিল সোজাসাপ্টা আমি যদি সময়মতো না পৌঁছাই, তবে ছাত্ররা কী শিখবে? সময়ানুবর্তিতা যেন তাঁর রক্তে মিশে ছিল। তিনি শুধু সময়মতো হাজিরই হতেন না বরং সময়ের আগে গিয়ে অপেক্ষা করতেন তাঁর ছাত্রদের জন্য।
শিক্ষক ও স্বপ্নদ্রষ্টা
শুধু পাঠদান করাই বাবার কাজ ছিল না। তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। গ্রামের খেটে খাওয়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের মাঝে তিনি দেখে নিতে চাইতেন আগামীর সম্ভাবনা। কাঠের বেঞ্চ, টিনের ছাউনি আর ত্রিপাটি দেওয়া ক্লাসরুমে বসে তিনি তৈরি করতেন ভবিষ্যতের মানুষ।
তাঁর চেহারায় কখনো ক্লান্তি দেখিনি। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরলেও তাঁর মন পড়ে থাকত ছাত্রদের মধ্যেই। একদিন বলেছিলেন, ‘‘আমি ক্লাসে যেমন থাকি, ঘরেও সেই চিন্তায় থাকি কোন ছেলেটা কাল বুঝতে পারেনি, তাকে নতুনভাবে কীভাবে বোঝাব।’’
বর্ষায় ভিজে, রোদে হেঁটে যাওয়া
বর্ষাকালে গ্রামের রাস্তা এমনিতেই কাদায় ভরে যেত। হাঁটা যেত না। অথচ বাবা কোনোদিন সেই রাস্তা এড়িয়ে যাননি। তিনি বলতেন, যেদিন আমি যাই না, সেদিন ক্লাসে কেউ মনোযোগ দেয় না। আমি গেলে ওদের মুখে হাসি দেখি।
পায়ে হাঁটার সেই দীর্ঘ ৫০ মিনিটের যাত্রা ছিল শুধু দৈহিক নয়তা ছিল মানসিক দৃঢ়তা, আত্মত্যাগ, এক শিক্ষকের নিরব স্বপ্ন সাধনার মিছিল। এমনও দিন গেছে, ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে কাঁপতে কাঁপতে স্কুলে পৌঁছেছেন তিনি, কেবল যাতে ক্লাসটা বাতিল না হয়।
হাতে একটি ব্যাগ
বাবার হাতে সব সময় থাকত একটি পুরনো কাপড়ের ব্যাগ সেখানে থাকত বই, খাতা, রেজিস্টার, চকডাস্টার, আর অজস্র স্বপ্নের ভার। তাঁর কাঁধে থাকত একটি গামছা—যা দিয়ে কখনো ঘাম মুছতেন, আবার প্রচণ্ড রোদের নিচে মাথায় ছায়া দিতেন। ক্লাসরুমে বসে সেই ব্যাগ থেকে বের করে দিতেন সবার জন্য চক বা নিজের হাতে আঁকা চার্ট। বইয়ের পাতার বাইরেও শেখানোর চেষ্টা করতেন জীবনের পাঠ, নৈতিকতা, সহানুভূতি। এসবই শিখিয়েছেন তিনি, খুব সাধারণভাবে, খুব নিরবে।
ক্লান্তি নয়, ছিল উৎসব
মধ্যবয়স পার করে এসেছেন, তবু বাবার মুখে কোনোদিন ক্লান্তির ছাপ দেখিনি। কোনোদিন অভিযোগ শুনিনি, শরীর ভালো নেই” বা আজ যেতে ইচ্ছে করছে না। বরং যেদিন কোনো ছাত্র নতুন কিছু শিখে ফেলত, সেদিন তিনি যেন সবচেয়ে খুশি মানুষ হয়ে যেতেন।
একবার এক ছাত্র তাঁর ক্লাসে কবিতা আবৃত্তি করেছিল। বাড়ি ফিরে বাবা বললেন, আজ মনে হলো, আমার পরিশ্রম সার্থক। তাঁর কাছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ছিল ছাত্রদের অগ্রগতি, আর শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি ছিল ছাত্রদের চোখের আলোকচ্ছটা।
শ্রেষ্ঠ শিক্ষক কাগজের নয়, বাস্তবের স্বীকৃতি
জেলা পর্যায়ে একবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন বাবা। তখন আমি ছোট, তবু মনে পড়ে সেই দিনের কথা। তিনি কখনো নিজে থেকে এই নিয়ে গর্ব করেননি। শুধু বলেছিলেন, আমি আমার দায়িত্ব করেছি, এর বেশি কিছু না।
এই বাক্যেই যেন লুকিয়ে ছিল তাঁর চরিত্রের সারাংশ নিরব দায়িত্ব পালন, অহংকারহীন সফলতা, আর আত্মতৃপ্তি। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভালো কাজ করলে স্বীকৃতি আসবেই, না আসলেও দুঃখ নেই।
বাবার হাত ধরেই শুরু লেখালেখি
আমার নিজের লেখালেখির শুরুটা বাবার হাত ধরেই। প্রথম অক্ষর, প্রথম বাক্য, প্রথম রচনাটা তিনিই শিখিয়েছেন। বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের প্রতিটি পাতায় ছিল তাঁর কণ্ঠের প্রতিধ্বনি।
তিনি বলতেন, তুমি যা লেখো, তা যেন সত্যি হয়, আর ভালো হয়।” এখন যখন কেউ বলে ‘ভালো লিখেন ভাই’, তখন মনে হয়, বাবার সেই কথাগুলো আজও কলমে রয়ে গেছে। তিনি ছিলেন আমার প্রথম শিক্ষক, আর হয়তো চিরকালের সবচেয়ে ভালো শিক্ষকও।
২০১০ সালে থেমে যায় সেই পথচলা
২০১০ সালের এক সন্ধায় থেমে যায় বাবার সেই অবিচল হাঁটা। খুব সাধারণ এক সন্ধ্যা, কিন্তু আমাদের জীবনে গভীর শূন্যতা। মনে হয়েছিল, গ্রামের রাস্তায় আজ আর কারো পায়ের শব্দ নেই, যেন রাস্তারও জানার ছিল, তার শ্রেষ্ঠ পথচারী আর আসবেন না।
সেদিন অনেকেই এসেছিল বাবার জানাজায় কেউ ছাত্র, কেউ সহকর্মী, কেউ প্রতিবেশী। সবাই বলছিলেন, স্যার শুধু শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন একজন মানুষ গড়ার কারিগর। সে দিন চোখের জল ঠেকাতে পারিনি, তবু মনে হয়েছিল, এই মানুষটি নিঃশব্দে রেখে গেছেন বিশাল এক উত্তরাধিকার।
বাবারা থাকেন পেছনের সারিতে, তবু সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন
আমরা মা-বাবার মধ্যে মাকে নিয়ে বেশি বলি, লিখি, আবেগ প্রকাশ করি। কিন্তু বাবারা থাকেন পেছনে, নীরবে, দায়িত্বের দেয়ালে দাঁড়িয়ে। তাঁরাও ভালোবাসেন, কাঁদেন, ক্লান্ত হন-শুধু সেটা বলেন না।
বাবা কোনোদিন বলেননি আমার পা ব্যথা করছে বা আজ খুব কষ্ট হলো স্কুল যেতে। তাঁর দুঃখগুলো ছিল মাটির নিচে বীজের মতো নীরবে দায়িত্বের ফুল ফুটিয়ে যেত। তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন ছিল নিঃশব্দ ত্যাগের গল্প।
একদিন বাবার নয়, প্রতিদিনই তাঁর
বিশ্ব বাবা দিবসের এই দিনটিতে আমরা ছবি তুলি, ক্যাপশন লিখি, স্মৃতি শেয়ার করি। কিন্তু আমার বাবা ছিলেন একেবারে আলাদা। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, এসব ছবি দিয়ে কী হবে? দায়িত্বটাই বড় কথা।
তাঁর কাছে ভালোবাসা ছিল সময়নিষ্ঠতায়, দায়িত্বপালনে, নীরব আচরণে। তিনি শিখিয়েছিলেন, ভালোবাসা বলতে কিছু দেখাতে হয় না, শুধু ঠিকভাবে থাকা লাগে।
আমার কাছে বাবা মানে একটি প্রতিষ্ঠান যিনি আমাদের পরিবারে শুধু উপার্জনকারী নন, ছিলেন মূল্যবোধের মেরুদণ্ড।
বাবা, তোমার সেই প্রতিদিনের হাঁটা ঝড়-বৃষ্টি, কাদা-রোদ উপেক্ষা করে আমাদের পরিবারকে তৈরি করেছে এক শক্ত ভিতের ওপর। তোমার ওই ৫০ মিনিটের হাঁটা ছিল যেন আমাদের জীবনের প্রতিটি ইটের নিচে জমা কিছু স্বপ্নের যাত্রা। তুমি ছিলে একজন শিক্ষক, একজন পিতা, একজন অনুপ্রেরণা। আর এই লেখা কেবল আমার একার নয়, দেশের হাজারো শিক্ষকের সন্তানের পক্ষ থেকে বলা যাঁদের বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন নীরব আলোকবর্তিকা।
লেখক: সংবাদকর্মী
ঢাকা/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ল ন এক আম দ র করত ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
ফেসবুক পোস্টে দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ পরিবর্তন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার কিছু আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুর্নীতি নিয়ে একটি অংশের লেখা কিছুটা পরিবর্তন করেন তিনি।
মাহফুজ আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল রাত ২টা ৫১ মিনিটে দেওয়া পোস্টের এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’
এই পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ভোররাত ৪টা ২৮ মিনিটে পোস্টের এই অংশে পরিবর্তন আনেন মাহফুজ আলম। সংশোধিত পোস্টে এই অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে তিনি লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। বিভিন্ন দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সব ষড়যন্ত্রই প্রকাশ পাবে।’
প্রথমে দেওয়া পোস্টের এই অনুচ্ছেদের শেষ বাক্য ‘একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে’ সংশোধিত পোস্টে তিনি রাখেননি।
প্রথম পোস্টে মাহফুজ আলম তদবির চেষ্টার কথা উল্লেখ করে দুর্নীতির প্রস্তাব পাওয়ার একটি ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ‘তদবিরের কথা উঠল যখন, একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন ব্যক্তিকে আমার ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করায়। বিটিভির একটা টেন্ডারের কাজ করে দিলে তারা পার্সেন্টেজ দেবে এবং জুলাই নিয়ে কয়েকটা দেশে প্রোগ্রামের জন্য হেল্প করবে। আমি জানার পর এটা নিষেধ করে দেই। সদুদ্দেশ্যে হলেও রাষ্ট্রের আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পরবর্তীতে সে টেন্ডারের কাজও স্থগিত হয়।’
কথোপকথন রেকর্ড করে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ করে মাহফুজ আলম আরও লেখেন, ‘সে ব্যক্তি কনভারসেশন (কথোপকথন) রেকর্ড করে একজন সাংবাদিককে পাঠায়। সে সাংবাদিক যোগাযোগ করলে আমি বলে দিই, ভাই, আমরা এ কাজ করতে দেইনি। আর ওই লোক ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই জুলাইয়ের প্রোগ্রামের কথা বলে এ কাজ করেছে। উনি আমার কথা বিশ্বাস করে আর রেকর্ডটি পাবলিক করেননি।’
এরপরই নিজের পোস্টে দুর্নীতির বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নূতন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’
পোস্টের শেষে ‘পুনশ্চ’ দিয়ে মাহফুজ আলম যোগ করেন, ‘আমার নিকৃষ্ট শত্রুরাও গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ করলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ করেনি। একটি নূতন দলের মহারথীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে তাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। হাজার কোটি টাকার চাইতেও ইজ্জত ও রাষ্ট্রের আমানত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
সংশোধিত পোস্টে এই অংশেও পরিবর্তন এনেছেন মাহফুজ আলম। তাতে তিনি দুর্নীতির বিষয়ে করা তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন এবং ‘নূতন দলের মহারথী’র জায়গায় ‘বিভিন্ন দলের মহারথী’দের কথা উল্লেখ করেন। আর শেষের বাক্যটি বাদ দেন।
সংশোধিত পোস্টে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘কয়েকটা বাক্য নিয়ে অযথাই জল ঘোলা হচ্ছে, তাই এডিট করে দিলাম। জুলাই কতিপয় লোকের কাছে পলিটিক্যাল মবিলিটির ল্যাডার। একটা না, কয়েকটা দলের মহারথীরাই আমার/আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কিন্তু, সবার এখন গুজববাজ আর সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।’ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এই পোস্ট দিয়ে তাঁর ভাই মাহবুব আলমের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন।
‘মিথ্যা অভিযোগের জবাব!!’ শিরোনামে ওই ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন মাহবুব আলম। গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার অ্যাকাউন্টে গত ৬ মাসের বিবরণী এখানে দেওয়া হলো। আমার অ্যাকাউন্টটি এখনো সচল আছে। বনি আমিন নামক ব্যক্তি ও কিছু মিডিয়ার প্রচারিত তথ্য আসলে মিথ্যা বৈ কিছু নয়। আমি অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাকাউন্টটি ২৩ সাল থেকে খোলা।’
ভাইয়ের তদবিরের কোনো কাজ করেননি দাবি করে মাহবুব আলম লেখেন, ‘আমার ভাই মাহফুজ আলমের পক্ষ থেকে কোনো তদবিরের কাজ আমি করিনি। কাউকে সে আজ পর্যন্ত করতেও দেয়নি। আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা বাদে আমার কিংবা আমাদের পরিবারের কোনো আর্থিক লেনদেনের ইতিহাস নেই। আমাদের পরিবার গত ৩০ বছর ধরে ব্যবসায় জড়িত। আমার বাবা গত ১৬ বছর লীগের নিপীড়নের কারণে ঠিকমতো ব্যবসায় করতেই পারেননি।
‘আমার বাবার ও মাহফুজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো আমি ও আমার বাবা পরিচালনা করছি। এখানে কোনো অস্পষ্টতা নাই। সবই বাংলাদেশের আইন দ্বারা সিদ্ধ এবং পাবলিক ইনফরমেশন।’
ফেসবুক পোস্টে মাহবুব আলম আরও লিখেছেন, ‘গত নভেম্বরে দেশে ফিরে আসার পর থেকে অনেক তদবির এলেও মাহফুজ কোনো কাজই করেনি। বরং, আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের স্পষ্ট নিষেধ করা আছে, যাতে কোনো তদবির তাকে না করা হয়। তার বা আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অসংগতি কিংবা তদবির বাণিজ্যের কোনো প্রমাণ আজও কেউ দিতে পারেনি, পারবেও না। কারণ, আমরা করিনি।’
পোস্টের বিশেষ দ্রষ্টব্যে মাহবুব আলম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বনি আমিনকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
এর আগে ১৭ জুলাই রাজধানীর গুলশানে সাবেক নারী সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের পরিবারের কাছ থেকে চাঁদার টাকা নিতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতাসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনায় গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের এই প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের চাঁদাবাজি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে দুঃখজনকভাবে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।