যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা দম্পতিকে গুলি করে হত্যা
Published: 15th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় অভিবাসী সংক্রান্ত ভোটের পর ডেমোক্র্যাটিক স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ মেলিসা হর্টম্যান ও তার স্বামী শনিবার ভোরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনাটিকে ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’ বলে উল্লেখ করেছেন গভর্নর টিম ওয়ালজ। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সপ্তাহের শুরুতে মিনেসোটা হাউসে একটি বিতর্কিত প্রস্তাব এইচএফ১-এর পক্ষে একমাত্র ডিএফএল (ডেমোক্র্যাটিক–ফার্মার–লেবার) ভোট প্রদান করেন হর্টম্যান। এই বিলের মাধ্যমে মিনেসোটা কেয়ার প্রোগ্রামের যোগ্যতা পরিবর্তন করে শুধুমাত্র নাগরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, যার ফলে প্রাপ্তবয়স্ক অনিবন্ধিত অভিবাসীরা আর রাষ্ট্র-অনুদানপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাবেন না।
হর্টম্যান ও তার স্বামী মার্ককে শনিবার সকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃত ঘোষণা করা হয়। একজন ব্যক্তি ভোরে তাদের বাড়িতে গিয়ে নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে গুলি চালায়। গভর্নর ওয়ালজ এই ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বন্দুকধারী আগে একই রাতে আরেকজন ডেমোক্র্যাট স্টেট সিনেটর জন হফম্যানের বাড়িতেও হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল। হফম্যান ও তার স্ত্রী ইভেট একাধিকবার গুলিবিদ্ধ হন। তাদের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ওয়ালজ বলেন, ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঘটেছে।
হাউসে ৬৮–৬৫ ভোটে বিলটি পাস হয়, যেখানে হর্টম্যানের একক ডেমোক্র্যাট ভোট রিপাবলিকানদের পক্ষে ভারসাম্য বজায় রাখে। ভোটের সময় তিনি কেঁদে ফেলেন। এই ভোট এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলসে বিক্ষোভ রূপ নেয় দাঙ্গায়। শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিনে দেশজুড়ে ‘নো কিংস’ নামে বিক্ষোভের পরিকল্পনা ছিল।
মিনেসোটা স্টেট পুলিশ জানায়, সন্দেহভাজনের গাড়িতে ‘নো কিংস’ লেখা প্রচারপত্র পাওয়া গেছে। রাজ্যজুড়ে এই বিক্ষোভ বাতিল করা হয়েছে। স্টেট প্যাট্রোল কর্নেল ক্রিস্টিনা বোগোইয়েভিক জনগণকে এসব বিক্ষোভে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানান।
মেলিসা হর্টম্যান কে ছিলেন?
হর্টম্যান ছিলেন মিনেসোটা হাউসের ডিএফএল ককাসের নেতা। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের শুরু পর্যন্ত তিনি হাউস স্পিকার ছিলেন। ২০০৪ সালে প্রথম নির্বাচিত হয়ে তিনি ১১তম মেয়াদে ছিলেন। তিনি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ডিগ্রি ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুল থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
জন হফম্যান কে?
হফম্যান ২০১২ সাল থেকে মিনেসোটার ৩৪তম জেলা থেকে ডিএফএল সদস্য হিসেবে সিনেটে রয়েছেন। তিনি ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাইনোরিটি হুইপ ছিলেন। বর্তমানে হিউম্যান সার্ভিসেস কমিটির চেয়ার। ভোটের রেকর্ড অনুযায়ী, হফম্যান এই বিতর্কিত বিলের বিপক্ষে ভোট দেন। বিলটি ১২ জুন গভর্নর ওয়ালজের কাছে উপস্থাপন করা হয়। হফম্যান ও তার স্ত্রী তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান হোপের সঙ্গে বসবাস করেন। তিনি সেন্ট মেরিজ কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি অব আইডাহো থেকে জ্বালানি নীতিতে একটি উচ্চতর সার্টিফিকেট অর্জন করেন।
কী ঘটেছিল সেই রাতে?
শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে ব্রুকলিন পার্ক পুলিশের কাছে একটি ফোন আসে। পুলিশ প্রধান মার্ক ব্রুলি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখে, বাড়ির সামনে পুলিশের এসইউভি গাড়ির মতো একটি গাড়ির আলো জ্বলছিল। একজন ব্যক্তি পুলিশ অফিসারের পোশাকে দরজায় ছিল। কিন্তু সেই ব্যক্তি ছিল একজন ছদ্মবেশী। আসলে তিনি পুলিশ নন। পুলিশের মুখোমুখি হলে ওই ব্যক্তি গুলি ছোড়ে, পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে সন্দেহভাজন ব্যক্তি বাড়ির পেছনের দিকে পালিয়ে যায়।
গভর্নর ওয়ালজ বলেন, ‘স্পিকার হর্টম্যান ছিলেন একজন সেবাপরায়ণ, হৃদয়বান ও হাস্যরসসম্পন্ন নেত্রী। তিনি মিনেসোটার জন্য বিশাল অবদান রেখে গেছেন।’
মিনেসোটা ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটির কমিশনার বব জ্যাকবসন বলেন, ‘এটি মিনেসোটা ও গণতন্ত্রের জন্য এক অন্ধকার দিন।’
ঘটনার আগে স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে সন্দেহভাজন ব্যক্তি প্রথমে হফম্যানের বাড়িতে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে কমিশনার জ্যাকবসন বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তি আমাদের ইউনিফর্মের প্রতি যে আস্থা জনগণের, তা ব্যবহার করেছে। এটি আমাদের জন্য গভীরভাবে ক্ষতিকর ও দুঃখজনক।’ এই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র গ ল ত ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
গুম করা হতো তিনটি ধাপে
শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তিদের কীভাবে গুম করা হতো, সেটি গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কমিশন বলেছে, ‘তিন স্তরের পিরামিড’–এর মাধ্যমে গুমের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হতো।
এই পিরামিডের সর্বোচ্চ স্তরে ছিল ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ছিলেন।
পিরামিডের দ্বিতীয় স্তরে ছিলেন বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। আর পিরামিডের তৃতীয় স্তরে থাকা বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৪ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে গুমের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।
আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থায় গত সাড়ে ১৫ বছরে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, যেখানে গুমের ঘটনায় নীরব সম্মতি থাকার বিষয়টি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিল বিষয়টি (গুমের মতো গুরুতর অপরাধেও নীরব থাকা)। গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি তখন অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো না।
■ গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে ১,৮৫০ অভিযোগ এসেছে। ■ যাচাই-বাছাই হয়েছে ১,৩৫০টি। ■ এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।গুমের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার মধ্যে নীরবতা কেন ছিল, তা খুঁজেছে কমিশন। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে তখন বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভেতরে বিষয়টি (গুম) অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো না। বরং সেগুলোকে হয়তো একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখা হয়েছে, যা বাহিনীর অভ্যন্তরে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ এবং ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষার’ প্রয়োজনে স্বাভাবিক ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এসব কাজকে বিচ্যুতি নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিত দায়িত্ব হিসেবেই পালন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত একজন কর্মকর্তার নথিতে তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের (পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে অবসরে যান, এখন পলাতক) মূল্যায়ন ছিল, ওই কর্মকর্তা কর্মদক্ষতার দিক থেকে ‘খুবই সন্তোষজনক’ এবং তাঁর নেতৃত্বগুণ ‘উচ্চমানের’।
ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে বেনজীর আরও লিখেছিলেন, তিনি ‘ভদ্র’, ‘সৎ স্বভাবের’ এবং ‘অত্যন্ত দক্ষ’। ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে নথিতে কোনো নেতিবাচক তথ্য লেখা হয়নি। যদিও তিনি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
অবশ্য অন্য একজন কর্মকর্তার বিষয়ে নথিতে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অনেক অভিযোগ লেখা আছে। এমনকি সেখানে বিস্তারিতভাবে বলা আছে, ওই কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিচালক জিয়াউল আহসানের (পরে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসির মহাপরিচালক হন, এখন কারাগারে) কাছে ‘ফিশ থেরাপি’ (মাছ উপহার) পাঠাতেন। তবে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য নথিতে উল্লেখ নেই।
গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশনকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ (সত্য উন্মোচন) শীর্ষক প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
কমিশনের প্রতিবেদনে একটি বন্দিশালায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করা একজনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। বন্দিশালায় প্রথম গিয়ে ওই প্রহরী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘বন্দীদের সাথে কখনো স্বাভাবিক আচরণ করা যাবে না, যেটা স্বাভাবিক মানুষের সাথে করা হয়। তাদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত রাখতে হবে, সব অধিকার থেকে। যাতে সে কষ্ট অনুভব করতে পারে।’
ওই প্রহরী কমিশনকে বলেছেন, বন্দিশালার দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যাহতি চেয়েছিলেন। তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, দায়িত্ব পালন না করলে তাঁর প্রাণের ঝুঁকি আছে।
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে গুমগত ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুমে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই ডিজিএফআইয়ের (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর) সাবেক মহাপরিচালক এবং একজন সাবেক পরিচালক। তাঁরা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদীন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদ-উল-ইসলাম।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ছয় কর্মকর্তা যখন ডিজিএফআইয়ের উচ্চ পদে ছিলেন, তখন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও হাসিনুর রহমান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান গোপন বন্দিশালায় আটক ছিলেন।
মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তা গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি যখন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (সিটিআইবি) পরিচালক ছিলেন, তখন আমান আযমীর গুমের বিষয়ে তিনি সাইফুল আলম ও আহমেদ তাবরেজ শামসকে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা কমিশনকে বলেছেন, আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা ডিজিএফআইয়ের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা গত নভেম্বর পর্যন্ত পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি) ছিলেন। তাঁরা তখনো সেনা আইনের অধীন ছিলেন। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাঁদের সেনাবাহিনীর অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ত। এখন তাঁদের হদিস নেই।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সমন্বিতভাবে অন্যায় নির্দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। কারণ, কর্মকর্তারা অন্যায় আদেশ মানতে বাধ্য নন। এই নীতির কথা সবাই জানতেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কর্তব্যে চরম অবহেলা ছিল। তাঁরা অধস্তনদের দিকনির্দেশনা বা মানসিক সহায়তার কোনো উদ্যোগ নেননি।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের ন্যায়সংগত আদেশ পালন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে কোনো অন্যায় আদেশ পালনে কেউ বাধ্য নন। গুম–খুনের আদেশ যাঁরা বাস্তবায়ন করেছেন, তাঁদের বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে। এসব অন্যায় আদেশ বাস্তবায়ন করা তাঁদের দায়িত্ব নয়, সেটি তাঁরা অনুধাবন করতে পারেননি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল।