জালিয়াতির মাধ্যমে ছেলেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় কারাগারে থাকা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নারায়ণ চন্দ্র নাথ তাঁর ছেলের পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির মামলায় গত ১৭ জুন আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নারায়ণ তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। তাই ১৭ জুন থেকে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি আমরা জেনেছি। তবে আনুষ্ঠানিক চিঠি এখনো আসেনি।’

নারায়ণ চন্দ্র নাথ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৩ সালে সচিব থাকাকালে তাঁর ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের ৯ জুলাই তাঁকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়।

অন্যদিকে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) শৃঙ্খলা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদারের সই করা নির্দেশনায় বলা হয়, তদন্তে নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ও ছেলের ফলাফল বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

এইচএসসির পর বিদেশে পড়াশোনা, এসওপি-বৃত্তি পেতে কীভাবে নেবেন প্রস্তুতি

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-পরবর্তী সময় উত্তম সময়। দেশে স্নাতক করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কোর্স আউটলাইনসহ অনেক সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্নাতক স্তর থেকে বিদেশে পড়াশোনা শুরু করা গেলে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আর এ অসামঞ্জস্যতার আশঙ্কা থাকে না। তাই এইচএসসির পরপরই বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব হলে দূর ভবিষ্যতে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ মেয়াদে এই সুফলের জন্য দেশে থাকা অবস্থাতেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এইচএসসির পরপরই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক—

প্রবেশিকা পরীক্ষা

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন একাডেমিক পর্যায়ের প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পরীক্ষাগুলো হলো এসএটি (স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট) এবং এসিটি (আমেরিকান কলেজ টেস্টিং)। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর রিডিং, রাইটিং ও গাণিতিক বিশ্লেষণের মতো প্রাথমিক দক্ষতাগুলো যাচাই করা হয়। স্যাটে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ স্কোর তুলতে হয়, সেখানে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য এসিটিতে ২৫ থেকে ৩০ স্কোর প্রয়োজন হয়। যুক্তরাজ্যের জন্য ইসিএএস (ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজেস অ্যাডমিশন সার্ভিস) ট্যারিফ বা এ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।

এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক কিছু পরীক্ষার ফলাফলকেও গুরুত্ব দেয়। যেমন যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের জন্য বিএমএটি (বায়োমেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্ট) অথবা ইউসিএটি (ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল অ্যাপটিটিউড টেস্ট) পরীক্ষা দিতে হয়।

ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা—

আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এই আবশ্যকীয় যোগ্যতাটি যাচাইয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বেশ কিছু পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন—

আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম)

টোয়েফেল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাস ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ)

পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অব ইংলিশ)

ডুওলিঙ্গো

এগুলোর মধ্যে আইইএলটিএস ও টোয়েফেল বহু বছর ধরে ইংরেজি ভাষাভাষীসহ অন্য ভাষার দেশগুলোতেও অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইইএলটিএস স্কোর সাধারণত ৬ থেকে ৭ দশমিক ৫-এর মধ্যে থাকলে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে আবেদন করা যায়।

অপর দিকে টোয়েফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর দেখাতে হয়। কিছু ইউরোপীয় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসসির মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) বা পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি ভাষায় হলেই ভর্তি নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি মূলত শুধু ইংলিশ মিডিয়াম ও ইংরেজি ভার্সন কলেজগুলোর জন্য প্রযোজ্য।

ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার দেশগুলোতে অধ্যয়নের জন্য সেখানকার স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য আলাদা পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন জার্মানির ক্ষেত্রে টেস্টডিএএফ (টেস্ট অব জার্মান অ্যাস আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) বা ডিএসএইচ (জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সামিনেশন ফর ইউনিভার্সিটি এনট্রান্স) পাস করতে হয়। একইভাবে ফ্রান্সে গুরুত্ব দেওয়া হয় ডিএএলএফ (ডিপ্লোমা ইন অ্যাডভান্সড ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ) পরীক্ষার ফলাফলকে।

আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসনের প্রয়োজনীয় নথি তৈরি—

শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে কিছু দরকারি নথি প্রয়োজন হয়। প্রথমটি হচ্ছে স্টেটমেন্ট অব পার্পাস (এসওপি)। এখানে আবেদনকারীর একাডেমিক লক্ষ্য, দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা তার প্রোগ্রাম নির্বাচনের কারণগুলো উল্লেখ করতে হয়।

এরপরেই আসে লেটার অব রিকমেন্ডেশন (এলওআর)। এটি হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার ব্যাপারে সুপারিশনামা। সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা এই সুপারিশ করে থাকেন। সংগত কারণেই এই লেটারের কয়েকটি কপি তৈরি করে রাখতে হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ থেকে ৩টি এলওআর সরবরাহের প্রয়োজন হয়।

এসওপি ও এলওআরের সঙ্গে একটি সিভি বা রেজুমি ও কাভার লেটার বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট যুক্ত করা হলে আবেদনটি আরও শক্তিশালী হয়। সিভি বা রেজুমিতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে একাডেমিক ও একাডেমির বাইরের যাবতীয় অর্জনগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। পারসোনাল স্টেটমেন্টের আরও একটি নাম মোটিভেশনাল লেটার। এখানে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত কোর্সটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীর আবেগের বিষয়টি পেশাগত কায়দায় ফুটিয়ে তুলতে হয়।

সর্বোপরি, এসব নথি তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে।

ফাইল ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এইচএসসি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রে বেশি নম্বর পেতে হলে
  • এইচএসসি পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞানে ভালো নম্বর কীভাবে পাবে
  • চট্টগ্রামে এইচএসসি পরীক্ষায় দুই কেন্দ্রে তিনজন বহিষ্কার
  • সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরি
  • এইচএসসির পর বিদেশে পড়াশোনা, এসওপি-বৃত্তি পেতে কীভাবে নেবেন প্রস্তুতি