যে কোনো সিরিজ শুরুর আগের সংবাদ সম্মেলন ভালো কথায় ভরপুর থাকে। নিজেদের চাওয়াকে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজের আগে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজ নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন।
টি২০ সিরিজ নিয়ে লিটন কুমার দাসও ভালো ভালো কথা বলেছেন। আসলে অধিনায়ক বা ক্রিকেটাররা কথায় যেমন ভালো ছিলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাঠে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসুন্দর ক্রিকেট প্রদর্শনী দেখতে হয়েছে সমর্থকদের। টি২০ অধিনায়ক লিটন ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যাশার কথা শোনালেন ‘যদি-কিন্তু’ রেখে। ওয়ানডে সিরিজ হারের পর গতকাল মাঠে অনুশীলনে এসেছিলেন কেবল ঢাকা থেকে আসা টি২০ স্কোয়াডের সদস্যরা। বাকিরা টিম হোটেলে বিশ্রামে ছিলেন। এদিন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু টি২০ নিয়ে কিছু বলতেই রাজি হলেন না। আসলে তিনি বলবেনই বা কী? ভালো কিছু বলার মতো ক্রিকেটই খেলতে পারছে না বাংলাদেশ। এর পরও শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে আর আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া টি২০ সিরিজ নিয়ে ইতিবাচক কথাই বলেছেন। লঙ্কান দলপতির বিশ্বাস, ২০ ওভারের ক্রিকেট সিরিজটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
পরিসংখ্যান আমলে নিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ ক্রিকেটে ভালো দল বাংলাদেশ।
২০১৬ সাল থেকে লঙ্কানদের বিপক্ষে টাইগারদের উত্থান এই সংস্করণে। লাসিথ মালিঙ্গাদের হারিয়ে ২০১৬ সালে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে টাইগার বাহিনী। শ্রীলঙ্কার মাটিতেও ধারাবাহিক ভালো করেছে তারা। মাশরাফি বিন মুর্তজার অবসরের ম্যাচটি জিতেছিল কলম্বোতে। ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি টি২০ টুর্নামেন্টে স্বাগতিকদের দর্শক বানিয়ে ভারতের সঙ্গে ফাইনাল খেলেছেন সাকিব আল হাসানরা। নাগিন ড্যান্স ও লঙ্কানদের সঙ্গে ক্রিকেট মাঠের বিরোধ ওই টুর্নামেন্ট দিয়েই শুরু। ২০২৪ সালের বিশ্বকাপেও লিটনরা জিতেছেন। সেদিক থেকে এবারের সিরিজে বাংলাদশকে ফেভারিট মনে হওয়া স্বাভাবিক। অথচ বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন শ্রীলঙ্কাকে ফেভারিটের তকমা দিলেন। তাঁর মতে, স্বাগতিকরা ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই ভালো করছে। বিশেষ করে তাদের রহস্যময় বোলারদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন লিটনরা। এই বোলারদের কীভাবে আজ মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে টিম মিটিংয়ে বিস্তর গবেষণা হলেও ব্যাটারদের কপাল থেকে চিন্তার ভাঁজ কমেনি। পাল্লেকেলের ব্যাটিং উইকেটে স্বাগতিক শক্তিশালী বোলিং ইউনিটকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন, সে চিন্তা টাইগার শিবিরে। তবে লিটন বলছেন, তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি সিরিজ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবেন, ‘ওদের বোলিং লাইনআপ বেশ ভালো। যে কয়জন রহস্যময় বোলার আছে, তাদের মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জি।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়কের এতটা রক্ষণাত্মক থাকার কারণ হলো, ব্যাটাররা ছন্দে নেই। যে কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হার আর পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে। সেই নেতিবাচক জায়গা থেকে নতুন একটি সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের এই সিরিজে অধিনায়ক লিটনকে ব্যাটিং ভালো করতে হবে। এই সিরিজে রান করতে না পারলে নেতৃত্ব হারানোর পাশাপাশি জাতীয় দল থেকেই বাদ পড়ার ঝুঁকি বাড়বে। বোলিং বিভাগে ছন্দে নেই বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। জাতীয় দলে তাঁর নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে। কারণ, দেশের চেয়ে আইপিএলে বেশি নিবেদন থাকে তাঁর। ১৬ জনের দলে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নেওয়ায় পেস বোলিং শক্তি বেড়েছে। তানজিম হাসান সাকিব ও সাইফউদ্দিনকে খেলালে ব্যাটিং লাইনআপটা বড় হবে। কারণ, তারা দু’জনই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। অবশ্য তাসকিন আহমেদ আর মুস্তাফিজকে খেলালে আজ একাদশে থাকবে না সাইফউদ্দিন। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন টি২০ তে অটো চয়েস। দু’জন স্পিনার খেলালে রিশাদের সঙ্গে বাঁহাতি নাসুম আহমেদ খেলতে পারেন। স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে শেখ মেহেদীও টিম ম্যানেজমেন্টের দরজায় কড়া নাড়ছেন। যদিও একাদশ চূড়ান্ত করা হবে আজ বিকেলে উইকেট দেখে। শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১৮০ রানের উইকেট হবে পাল্লেকেলেতে। জিততে হলে এই পরিমাণ রান করার মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে লিটনদের।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দলে একাধিক অলরাউন্ডার চান সাইফউদ্দিন
প্রায় ১৪ মাস পর টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে তাকে রেখে দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
সোমবার (৭ জুলাই) দেশ ছাড়ার আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন এই অলরাউন্ডার। দলের সঙ্গে সংযুক্তির পর সাইফউদ্দিন জানিয়ে দিলেন অলরাউন্ডারের প্রয়োজনীয়তা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পেসার তানজীম হাসান সাকিবের ক্যামিও ইনিংস প্রসঙ্গের সঙ্গে ইংল্যান্ড দলের উদাহরণও টেনেছেন সাইফউদ্দিন।
আরো পড়ুন:
‘প্রথম’ জয়ের ভেন্যুতেই কি প্রথম সিরিজ জয়?
সুযোগ পেয়েও লারার ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙা হলো না মুল্ডারের
“তানজিম সাকিবের গত ম্যাচের ব্যাটিং দেখেন, তার ছোটো একটি ক্যামিও বাংলাদেশ দলের কাজে লেগেছে। আপনি যদি দেখেন ইংল্যান্ড দলে ২-৩ জন পেস বোলিং অলরাউন্ডার খেলে। যত বেশি অলরাউন্ডার খেলবে তত দলের জন্য ভালো, দেশের জন্য ভালো।’’
দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা সাইফউদ্দিনের অন্যতম বাধা ইনজুরি। তার মতে সুযোগ পাওয়া থেকেও জায়গা ধরে রাখা কঠিন।
“প্রথমত জার্নিটা অনেক লম্বা ছিল আপনারা জানেন। ১৩ মাস পর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। সুযোগ পাওয়ার চেয়ে জায়গা পাওয়াটা অনেক কঠিন। সেই চেষ্টাই থাকবে। যেহেতু কয়েকটি ক্যাম্প করেছি মিরপুর এবং চিটাগংয়ে। চেষ্টা করেছি ভালো করার। সুযোগ অবশ্যই ক্রিকেটারদের জন্য কাজে আসে।’’ -বলেছেন সাইফউদ্দিন।
১০ জুলাই ক্যান্ডিতে শুরু হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। পরের দুটি হবে ১৩ ও ১৬ জুলাই ডাম্বুলা ও কলম্বোতে। একাদশে সুযোগ পেলে ব্যাটে বলে নিজের সেরাটা দিতে চান এই অলরাউন্ডার।
“আমি অবশ্যই চেষ্টা করব ভালো করার; সেটা ব্যাটিং হোক, বোলিং হোক। আরো যারা পেস বোলিং অলরাউন্ডার আছে ওরা ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারে। এটা দলের জন্য ভালো হবে।’’
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল