ক্রিকেট যে কতটা অনিশ্চয়তার খেলা, তার এক জীবন্ত প্রমাণ মিলল ঐতিহাসিক লর্ডসের সবুজ মাঠে। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করেছিল ৩৮৭ রান। ভারতের জবাবও থামল ঠিক সেই সংখ্যাতেই। টেস্ট ইতিহাসে মাত্র নবমবার এমন ঘটনাই ঘটল, যেখানে দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে সমান রানে। ২০১৫ সালের পর আবার এমন বিরল সমতার দেখা মিলল। আর লর্ডসে তো এই প্রথম।

ম্যাচের শুরুতে ব্যাট করা ইংল্যান্ডের ইনিংস ছিল সুশৃঙ্খল। তবে ভারতের ব্যাটিং যেন ধীরে ধীরে গড়ে উঠা এক নাটক, যার শেষ অঙ্কে মাত্র ১১ রানের ব্যবধানে হারায় চারটি মূল্যবান উইকেট। তাতেই সমত। যা একসময় লিড হওয়ার সম্ভাবনাকে মুছে দেয়।

ভারতের পক্ষে লোকেশ রাহুল দারুণ এক সেঞ্চুরি করেন, থেমেছেন ১০০ রানে। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দেন ঋষভ পান্ত (৭৪) ও রবীন্দ্র জাদেজা (৭২)। ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিস ওকস ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার। নিয়েছেন ৩টি উইকেট। দীর্ঘ চার বছর পর টেস্টে ফেরা জোফরা আর্চার এবং বেন স্টোকসের ঝুলিতে গেছে দুটি করে উইকেট।

আরো পড়ুন:

লর্ডসে ব্যতিক্রমী ধৈর্য, রুটের ৯৯ রানে ভর করে লড়াইয়ে ইংল্যান্ড

লর্ডস টেস্টে টস জিতে ব্যাট করছে ইংল্যান্ড

এই রকম সমান স্কোরে শেষ হওয়া টেস্টে সাধারণত ফল হয় ড্র। আগের চারবার এমনটিই হয়েছে। তাই ম্যাচের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ হবে এখন বাকি থাকা দ্বিতীয় ইনিংস আর শেষ দুই দিনের খেলায়। ইংল্যান্ড এরই মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ২ রান তুলেছে বিনা উইকেটে, যদিও ওপেনারদের মাঠে নামা নিয়ে কিছু বিতর্ক তৈরি হয় দিনের শেষদিকে।

ভারতের ইনিংস শেষ হবার পর ১০ মিনিটের বিরতির সুযোগে ইংলিশ ওপেনাররা ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নেন মাঠে নামতে। এমনকি জ্যাক ক্রাউলি চোটের ভান ধরে সময়ক্ষেপণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল যেন দিনের আলোয় দ্বিতীয় ইনিংসে বেশি ওভার না খেলতে হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় মাঠের প্রান্তে থাকা গিল ও বুমরাহ রীতিমতো হাততালি দিয়ে ঠাট্টা করেন এই কৌশল নিয়ে। এক ওভার খেলার পরই আম্পায়ার খেলা বন্ধ ঘোষণা করেন।

এই ঘটনা শুধু স্কোরের সমতায় নয়, উত্তেজনায়ও ম্যাচটিকে দিয়েছে বাড়তি মাত্রা। ইতিহাস বলছে, ১৯১০ সালে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে প্রথমবার দুই দল এক ইনিংসে সমান ১৯৯ রান করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে লিডসে ইংল্যান্ড করেছিল ঠিক ৩৫০ রান, যা প্রতিপক্ষও ছুঁয়ে ফেলেছিল। লর্ডসে সেই ইতিহাস আবার ফিরে এসেছে, সঙ্গে এনেছে অনিশ্চয়তার মোড় ঘোরানো এক টেস্ট নাটক।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ