ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীর সময় কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ খানিকটা ভারী হয়ে আসছিল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আসলেই বিদায়বেলায় নিজের আবেগ সামলানো খুব কঠিন। আন্দ্রে রাসেলের মতো ইস্পাতদৃঢ় মানসিকতার মানুষও আজ সেটা পারলেন না।

নিজ দেশ জ্যামাইকাতেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলবেন, সেটা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু আগেই জানিয়েছিলেন রাসেল। জন্মশহর কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি হয়ে থাকল ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রাসেলের বিদায়টা রাঙাতে পারেনি, অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে ৮ উইকেটে।

তবে বিদায়লগ্নে হার-জিতকে খেলার অংশ হিসেবেই দেখছেন রাসেল। ৩৭ বছর বয়সী তারকা বলেছেন, ‘ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে আসেনি। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। দিন শেষে আমি খুশি। গত দুই ম্যাচে দর্শকেরা ছিল অসাধারণ। আমরাও নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে দুঃসময় চলছে। দলটি যেন জিততেই ভুলে গেছে। আর ৭ মাস পরেই আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে তাঁর অভিজ্ঞতাকে নিশ্চয় কাজে লাগাতে চাইত ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কিন্তু বিশ্বকাপের আগেই কেন অবসর নিলেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রাসেল, ‘আমার মনে হয়েছে এখনই থেমে যাওয়ার সময় এসেছে এবং এখান থেকেই ছেলেরা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে) এগিয়ে নেবে। দলে কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় আছে। (রোমারিও) শেফার্ড বেশ আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে। (শেরফান) রাদারফোর্ড, আলজারি (জোসেফ) এবং (জেসন) হোল্ডারের মতো খেলোয়াড়ও দলে আছে।’

রাসেল টেস্ট খেলেছেন মাত্র একটি। ওয়ানডে খেলেছেন ৫৬টি, যার শেষটি বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৯ বিশ্বকাপে। বিশ্ব ক্রিকেট তাঁকে মনে রাখবে মূলত টি-টোয়েন্টির জন্যই।

আরও পড়ুন১৩ দেশ মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাহলে অলিম্পিক ক্রিকেটে খেলবে কোন দেশ১৬ মে ২০২৫

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তো বটেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও কয়েকটি ম্যাচ জিতিয়েছেন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে। অনেক স্মরণীয় পারফরম্যান্সের মধ্যে মুম্বাইয়ে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতকে স্তব্ধ করে দেওয়া ইনিংটাই (২০ বলে অপরাজিত ৪৩) তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত বলে কদিন আগে জানিয়েছিলেন ।

আজ জানালেন দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় (২০১২ ও ২০১৬) নিয়ে নিজের গর্বের কথাও, ‘আমার মনে পড়ছে দুইবার বিশ্বকাপ জয়ের পর আমাদের পতাকা কতটা উঁচুতে উড়েছে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে নিজের শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বক প

এছাড়াও পড়ুন:

সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন

নিলামঘর সদবিস গতকাল শুক্রবার ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলানের তৈরি সম্পূর্ণ সোনার টয়লেটটি নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেছে। এ ভাস্কর্যটির নাম ‘আমেরিকা’।

সদবিস জানিয়েছে, এ শিল্পকর্ম এটাই দেখাতে চায়, কখনো কখনো শিল্পের ‘মূল্য’ আর তার বাজারে বিক্রির ‘মূল্য’ এক নয়। এটি শুধু শিল্পকর্মই নয়, একটি পুরোপুরি ব্যবহারযোগ্য টয়লেটও। এ টয়লেটেরই অনুরূপ একটি সংস্করণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদ থেকে চুরি হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।

১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। টয়লেটটির সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে এর সোনার বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০১ দশমিক ২ কিলোগ্রাম (২২৩ পাউন্ড) খাঁটি সোনা, যার দাম এখন প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মার্কিন ডলার (প্রায় ১২২ কোটি টাকা)।

সদবিসের নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান ডেভিড গ্যালপারিন বলেন, ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।

ক্যাটেলান শুধু বিতর্ক সৃষ্টিকারীই নন; বরং অত্যন্ত সফল শিল্পী। তাঁর আরেকটি কাজ, ‘কমেডিয়ান’। অর্থাৎ দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা। গত বছর নিউইয়র্কের এক নিলামে ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল শিল্পকর্মটি।

‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।

এর আগে ২০১৬ সালে ক্রিস্টিস নিলামে ক্যাটেলানের আরেকটি ভাস্কর্য ‘হিম’ ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। ভাস্কর্যটিতে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেখা যায়।

ক্যাটেলান নিজেই বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’

‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।

মরিজিও ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।ডেভিড গ্যালপারিন, সদবিস-এর নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান

ওই সময় গুগেনহাইম ভাস্কর্যটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে ধার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কারণ তিনি জাদুঘর থেকে একটি ভ্যান গঘ চিত্রকর্ম ধার নিতে চেয়েছিলেন।

২০১৯ সালে ‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হয় উইনস্টন চার্চিলের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদে। কিন্তু প্রদর্শনীর কয়েক দিনের মধ্যেই একদল চোর ভবনে ঢুকে সেটি পাইপলাইন থেকে খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।

চলতি বছরের শুরুতে দুই ব্যক্তিকে ওই চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সোনার টয়লেটটি আজও উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এটি সম্ভবত ভেঙে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।

গ্যালপারিন বলেন, তিনি অনুমান করতে চান না ‘আমেরিকা’ শেষ পর্যন্ত কত দামে বিক্রি হতে পারে। তবে তাঁর ভাষায়, ক্যাটেলানের ‘ডাকটেপে আটকানো কলা’ শিল্পকর্মটি যেমন ‘অমূল্য ধারণা থেকে মূল্য তৈরি করা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, ‘আমেরিকা’ ঠিক তার উল্টো। এখানে মূল উপকরণটিই (সোনা) অত্যন্ত মূল্যবান, যা বেশির ভাগ শিল্পকর্মে থাকে না।

ক্যাটেলান বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’

‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হবে সদবিসের নতুন নিউইয়র্ক কার্যালয় ব্রয়্যার বিল্ডিংয়ে, ৮ নভেম্বর নিলাম শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। এটি একটি বাথরুমে স্থাপন করা হবে, যা দর্শকেরা কাছ থেকে দেখতে পাবেন।

তবে গুগেনহাইম ও ব্লেনহাইম প্রাসাদের মতো এবার দর্শকদের টয়লেটটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। তাঁরা শুধু দেখতে পারবেন, কিন্তু ফ্লাশ করতে পারবেন না।

আরও পড়ুনসোনার আস্ত একটি কমোড চুরি করেছিলেন তিনি০৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন