শেরপুরে ছাত্রদলের ২ নেতাকে পুলিশে দিলো বিএনপি
Published: 24th, July 2025 GMT
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি এবং চাঁদা না পেয়ে লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেওয়ার অভিযোগে শেরপুর সদরের লছমনপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সবুজ আহাম্মেদ (৩৫) ও বর্তমান সভাপতি আল আমিন ইসলাম সাগরকে (২৬) পুলিশে সোপর্দ করেছে ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতা-কর্মীরা।
বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে লছমনপুর ইউনিয়নের কুসুমহাটি বাজারে লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে তাদেরকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।
আটক সবুজ আহাম্মেদ লছমনপুর ইউনিয়নের বড় ঝাউয়েরচর এলাকার আলতাব হোসেনের ছেলে এবং আল আমিন ইসলাম সাগর কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন লছমনপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, লছমনপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সবুজ আহাম্মেদ ও বর্তমান স্থগিতকৃত সভাপতি আল আমিন ইসলাম সাগর দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে আসে না। তারা বিভিন্ন স্থানে দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
কয়েকজন অনুসারী নিয়ে তারা গতকাল বুধবার চাঁদার দাবিতে বলায়েরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে পরিষদে লাঞ্চিত করে। পরে লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদে এসে চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ও পরিষদের সচিবসহ অন্যদের বের করে দিয়ে পরিষদের ভবনে তালা দেয়।
কুসুমহাটি বাজারে আশাপাশের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করে তারা। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতা-কর্মীরা মিলে সবুজ ও সাগরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ ঘটনার পরপরই লছমনপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো.
তারা জানান, এর আগে গত ১৭ জুলাই দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মো. আল-আমিন ইসলাম সাগরের লছমনপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতির পদ স্থগিত করা হয়েছিল।
এদিকে, এ ঘটনায় লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও মহিলা দলের নেত্রী আলেয়া বেগম বাদী হয়ে সবুজ ও সাগরসহ পাঁচ জনকে আসামি করে শেরপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, লছমনপুর ইউনিয়নের বড় ঝাউয়েরচর এলাকার আলতাব হোসেনের ছেলে মো. সবুজ আহাম্মেদ (৩৫), কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে মো. আল আমিন ইসলাম সাগর (২৬), একই এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে ছায়দুর রহমান (৩২), লছমনপুর এলাকার মৃত এরশাদ আলীর ছেলে মো. নূর শাহ আলম পাপ্পু (৩৮), ঘীনাপাড়া এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. নূরনবী ইসলাম (২৫)-সহ অজ্ঞাত ৬/৭ জন মিলে চাঁদাবাজি করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
এ ব্যাপারে সাবেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও বণিক সমিতির সভাপতি এংরাজ আলী মেম্বার বলেন, “সবুজ ও সাগরসহ কয়েকজন মিলে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা তুলছে। এতে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এজন্য আমরা তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছি।”
লছমনপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বলেন, “এই ছেলেগুলোর কারণে আমাদের এবং দলের চরম ক্ষতি হচ্ছে। তারা পরিষদে তালা দিয়েছে, পাশের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে লাঞ্চিত করেছে।”
লছমনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব সফিকুল ইসলাম বলেন, “বলায়েরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে লাঞ্চিত করেছে তারা। লছমনপুরের চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। পরিষদে তালা দিয়েছে। ব্যবসায়ী ফারুকের কাছে চাঁদা চেয়েছে, ইদ্রিস কোম্পানিতে গিয়ে চাঁদা চেয়েছে। এসব অপরাধের কারণে আমরা তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা তাদের বিচার চাই।”
ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, “আমাদের পরিষদে তারা চাঁদার জন্য আসে। খুব বিরক্ত করছে। আমরা এসব ছেলেদের বিচার চাই।”
লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শরিফ আল জায়েদ বলেন, “চেয়ারম্যানকে না পেয়ে, আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে তালা দিয়েছে তারা।”
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলম বলেন, “অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/তারিকুল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ছ ত রদল র ছ ত রদল র স ন ব এনপ র ভ বম র ত দল র ন এল ক র চ ত কর ব যবস সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।