অচলাবস্থার মধ্যে নতুন উপাচার্য পেয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। পাঁচ মাস ধরে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার প্রত্যাশা, এবার যেন ক্লাস শুরু হয়। সেই প্রত্যাশা নিয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। দায়িত্ব নিয়েই ক্লাস শুরু করতে একের পর এক বৈঠকে বসছেন। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার থেকে চালু হতে পারে একাডেমিক কার্যক্রম।

বৃহস্পতিবার নিয়োগ পাওয়ার পরদিনই খুলনায় এসে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। শনিবার তিনি বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রোববার সকালে লেকচারার ও সহকারী অধ্যাপকদের সঙ্গে এবং দুপুরে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন উপাচার্য।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত পাঁচ মাসে কুয়েট দেশের অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। ১৯তম ব্যাচের শিক্ষাজীবন মার্চে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস শুরু হয়নি। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোববার সন্ধ্যার পর শিক্ষক সমিতির সঙ্গে উপাচার্য মহোদয়ের কথা বলার কথা আছে। ক্লাস শুরু করতে হবে—এটা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। অধ্যাপকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁরা ক্লাসে ফেরার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফেরাতে যেসব জিনিস দরকার, সেগুলো তিনি (উপাচার্য) এগিয়ে নেবেন—সেভাবেই আলোচনা হয়েছে।

কবে শুরু হচ্ছে জানতে চাইলে ফারুক হোসেন বলেন, ‘হয়তো কাল (সোমবার) নোটিশ দিয়ে দিতে পারে প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের আসার তো সুযোগ দিতে হয়। মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হতে পারে বলে মনে করছি।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী মো.

ওবায়দুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছেন স্যার। আজ রোববার রাতে নোটিশ দেওয়া হবে। পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে তারিখ নির্ধারণ করে নিতে বলেছেন। তদন্তসহ অন্যান্য প্রক্রিয়াও ক্লাস শুরুর সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলবে। আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা তুলেছিলাম। বিষয়টি নিয়ে স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

এ বিষয়ে জানতে কুয়েটের রেজিস্ট্রার মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়াকে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। এর আগে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নতুন উপাচার্য বলেন, দায়িত্ব নিয়েই তিনি সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে সবার বক্তব্য শুনছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। ডিনদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কুয়েট-সংলগ্ন তিন থানার ওসিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনার কথা জানান।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয়। সেই থেকে শিক্ষকেরা আর ক্লাসে ফেরেননি। আর শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে ২২ মে অধ্যাপক হজরত আলী পদত্যাগ করেন। পরে ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার। পরে গত বৃহস্পতিবার বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা

বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।

নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’

সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’

সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গজারিয়ায় পরিবারকে জিম্মি করে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল: নূর খান
  • মাঝে মধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কী আমাদের লোক’: আইজিপি
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • মবের ঘটনা নানাভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়: এনসিপি নেতা আদীব