কুয়েটে অচলাবস্থা কাটছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে পারে ক্লাস
Published: 27th, July 2025 GMT
অচলাবস্থার মধ্যে নতুন উপাচার্য পেয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। পাঁচ মাস ধরে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার প্রত্যাশা, এবার যেন ক্লাস শুরু হয়। সেই প্রত্যাশা নিয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। দায়িত্ব নিয়েই ক্লাস শুরু করতে একের পর এক বৈঠকে বসছেন। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার থেকে চালু হতে পারে একাডেমিক কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার নিয়োগ পাওয়ার পরদিনই খুলনায় এসে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। শনিবার তিনি বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রোববার সকালে লেকচারার ও সহকারী অধ্যাপকদের সঙ্গে এবং দুপুরে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন উপাচার্য।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত পাঁচ মাসে কুয়েট দেশের অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। ১৯তম ব্যাচের শিক্ষাজীবন মার্চে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস শুরু হয়নি। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোববার সন্ধ্যার পর শিক্ষক সমিতির সঙ্গে উপাচার্য মহোদয়ের কথা বলার কথা আছে। ক্লাস শুরু করতে হবে—এটা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। অধ্যাপকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁরা ক্লাসে ফেরার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফেরাতে যেসব জিনিস দরকার, সেগুলো তিনি (উপাচার্য) এগিয়ে নেবেন—সেভাবেই আলোচনা হয়েছে।
কবে শুরু হচ্ছে জানতে চাইলে ফারুক হোসেন বলেন, ‘হয়তো কাল (সোমবার) নোটিশ দিয়ে দিতে পারে প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের আসার তো সুযোগ দিতে হয়। মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হতে পারে বলে মনে করছি।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী মো.
এ বিষয়ে জানতে কুয়েটের রেজিস্ট্রার মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়াকে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। এর আগে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নতুন উপাচার্য বলেন, দায়িত্ব নিয়েই তিনি সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে সবার বক্তব্য শুনছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। ডিনদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কুয়েট-সংলগ্ন তিন থানার ওসিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনার কথা জানান।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয়। সেই থেকে শিক্ষকেরা আর ক্লাসে ফেরেননি। আর শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে ২২ মে অধ্যাপক হজরত আলী পদত্যাগ করেন। পরে ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার। পরে গত বৃহস্পতিবার বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত, একজন গ্রেপ্তার
পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ার নিজ বাড়িতে জওহরলাল বসাক তুলশী (৭৭) নামের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শহরের আবদুল হামিদ সড়কে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও সেচ্ছাসেবক দল মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনায় করা মামলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁর নাম–পরিচয় প্রকাশ করেনি।
আরও পড়ুনপাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখম, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন২৮ জুলাই ২০২৫স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকেই জেলা শহরের বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুপুর ১২টার দিকে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সেই সঙ্গে অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মাসুম, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হিমেল রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইয়ামিন খান, সদস্যসচিব কমল শেখ, যুগ্ম আহ্বায়ক দীপঙ্কর সরকার প্রমুখ।
বক্তারা জানান, জহুরলাল বসাক সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষক। তিনি মানুষ গড়ার কারিগর। দেশব্যাপী তাঁর হাজার হাজার ছাত্র রয়েছে। তাঁর মতো একজন মানুষের ওপর এই হামলা ন্যক্কারজনক। এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
নুর মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘স্যার (জওহরলাল বসাক তুলশী) একজন সাদামাটা ও হাসিখুশি মানুষ। তাঁর মতো মানুষের ওপর হামলা আমাদের জন্য লজ্জাকর। আমরা ছাত্র হিসেবে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।’
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরই পুলিশের বিভিন্ন শাখা আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি হামলার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে ঢাকা থেকে পাবনায় আনা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত অন্যজনকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, আহত জওহরলাল বসাক পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। গত রোববার বিকেলে দুই ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে আহত করে ও আসবাবপত্র তছনছ করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন জওহরলাল বসাক। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দুপুরে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং শহরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে মানববন্ধন করেন।