আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ দলের নেতারাই দেশের গণতন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু নিজ দলে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের তার উদাহরণ। তিনি সারাক্ষণ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু নিজে দল পরিচালনা করেন স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায়। তিনি নিজেকে দাবি করেন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু দলের নেতা-কর্মীদের সামান্য মতামতের মূল্য তাঁর কাছে না থাকলেও তিনি নিজের স্ত্রীর মতামতকে প্রাধান্য দেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ কথা বলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, এটা ছিল জাতীয় পার্টির যৌথ সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন এম এ রাজ্জাক খান। তাঁর পরিচয়ে জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক লেখা হয়েছে।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের দলীয় সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর গত বুধবার অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ। আদালতের এ আদেশের পর সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের এখন পর্যন্ত যাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা আইনিভাবে বৈধ নয়। ফলে তিনি সম্প্রতি দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কেন্দ্রীয় নেতা সোলাইমান আলম শেঠ, জহিরুল ইসলাম, নাজমা আকতার, মোস্তফা আল মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খানসহ যে ১১ জন নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন, তাঁরা স্বপদে বহাল রইলেন।

রাজ্জাক খানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকালের সভায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশে প্রতিদিন খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। এর মধ্যে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। দেশের সাধারণ মানুষ আজ দিশাহারা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। সাধারণ মানুষকে আশা-ভরসা দেওয়ার মতো রাজনৈতিক দল একমাত্র জাতীয় পার্টি। তাঁরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর ঐক্য করে জাতীয় পার্টিকে পরিচালিত করবেন। তাঁরা কোনো একক নেতৃত্বে বিশ্বাসী নন। আগামী দিনে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি পরিচালিত হবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে, যেখানে থাকবে তৃণমূলের মতামতের প্রাধান্য।

আরও পড়ুনজাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় জি এম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা১৭ ঘণ্টা আগে

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জি এম কাদের স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বহিষ্কার করেছিল। কিন্তু আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরাজয় হয়েছে। এখন থেকে জাতীয় পার্টিতে কোনো কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরতন্ত্রের স্থান নেই। জাতীয় পার্টির তৃণমূলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা যেমন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তার আগে নিজ দলে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনা করে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

আরও পড়ুনশামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব করলেন জি এম কাদের০৭ জুলাই ২০২৫

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান, নাসরিন জাহান, লিয়াকত হোসেন, এ টি ইউ তাজ রহমান, শফিকুল ইসলাম, নাজমা আকতার, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম, আরিফুর রহমান খান, মাসরুর মাওলা, জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, জাপার ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব মো.

বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এস এম আল জুবায়ের, যুগ্ম সম্পাদক শরফুদ্দিন আহমেদ, মাসুক রহমান, শাহনাজ পারভীন প্রমুখ। সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ নূরুল ইসলাম মিলন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা নাজনিন সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

জাতীয় পার্টির চার অংশ এক মঞ্চে, নেই জিএম কাদেরের জাপাজাপায় এবার ‘ছাঁটাই রাজনীতি’, মহাসচিব বদলসহ ৭ দিনে ১১ নেতাকে অব্যাহতিএবার আনিসুল ইসলাম, রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হককে অব্যাহতি দিলেন জি এম কাদেরতিন জ্যেষ্ঠ নেতাসহ ১৬ প্রেসিডিয়াম সদস্য বললেন, তাঁরা দল ছাড়বেন না, কাউন্সিলে যাবেন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র পর চ ল র জন ত মত মত রহম ন গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব’
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কেমন সংবিধান চান, জানালেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন
  • বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় ইইউ