সুরা তালাকে বিবাহবিচ্ছেদে যা মানতে বলা হয়েছে
Published: 11th, January 2025 GMT
সুরা তালাক পবিত্র কোরআনের ৬৫তম সুরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ। এতে ২ রুকু, ১২ আয়াত। এ সুরায় আছে বিবাহবিচ্ছেদের বিস্তারিত বিবরণ। বিয়ে সুখের কারণ না হয়ে দুঃখের কারণ হলে তালাক দেওয়া যুক্তিসংগত। তালাকের বিধিনিষেধ মেনে চলা কর্তব্য।
এ সুরায় তালাক ও ইদ্দতের বিধান দেওয়া হয়েছে। এ সুরায় আল্লাহ বলেছেন, ‘হে নবী! তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে চাইলে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ রেখে ওদের তালাক দিয়ো। তোমরা ইদ্দতের হিসাব রেখো। আর তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। তোমরা ওদের বাসগৃহ থেকে বের করে দিয়ো না। আর ওরাও যেন বের হয়ে না যায়, যদি না ওরা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর বিধান।
যে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে, সে নিজেরই ওপর অত্যাচার করে। তুমি জানো না, আল্লাহ হয়তো এরপর কোনো উপায় বের করে দেবেন। ওদের ইদ্দত পূরণের কাল শেষ হয়ে এলে হয় তোমরা ওদের ভালোভাবে রেখে দেবে, না হয় ভালোভাবে ওদের ছেড়ে দেবে। আর তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহকে মনে রেখে সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে এ দিয়ে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পথ করে দেবেন, আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে জীবনের উপকরণ দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; আল্লাহ তার ইচ্ছা পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্য নির্দিষ্ট মাত্রা স্থির করেছেন। তোমাদের যেসব স্ত্রীর ঋতুমতী হওয়ার আশা নেই, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমাদের সন্দেহ হলে জেনে রেখো, তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনো রজঃস্বলা হয়নি, তাদের ইদ্দতকালও হবে তা-ই। আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।
আরও পড়ুনআজানের সময় দোয়া কবুল হয়২১ ডিসেম্বর ২০২৩আল্লাহকে যে ভয় করে, তিনি তার সমাধান সহজ করে দেন। এটা আল্লাহর বিধান, যা তিনি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহকে যে ভয় করে, তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে বড় পুরস্কার দেবেন। তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যে রকম বাড়িতে বাস করো, তাদেরও সে রকম বাড়িতে বাস করতে দাও। তোমরা তাদের উত্ত্যক্ত করে বিপদে ফেলো না। তারা গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য ব্যয় করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদের স্তন্য দেয়, তবে তাদের পারিশ্রমিক দেবে এবং সন্তানের মঙ্গলের ব্যাপারে তোমরা নিজেদের মধ্যে ভালোভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পরকে সহ্য করতে না পারো, অন্য স্ত্রীলোক দিয়ে স্তন্য পান করাবে।’ (সুরা তালাক, কোরান শরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)
আরও পড়ুনসুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে২০ ডিসেম্বর ২০২৩এ সুরায় তালাকের পর ইদ্দতের হিসাব করে রাখার কথা বলা হয়েছে। গর্ভবতী নারীর ইদ্দত সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। আর ঋতুমতী নারীর ইদ্দত তিন ঋতু পর্যন্ত। যাঁদের ঋতুস্রাব হয় না, তাঁদের ইদ্দত তিন মাস। ইদ্দতকালে স্ত্রীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা স্বামীকে করতে হবে। তালাক ও ইদ্দতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার দেওয়া বিধানের বাইরে গিয়ে স্ত্রীর ওপর কোনোরূপ জুলুম-নির্যাতন ও হয়রানি করার সুযোগ নেই।
বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলে স্ত্রীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালকে বিশ্বাস করে, আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য বিকল্প একটা ব্যবস্থা করেই দেবেন। এমন জায়গা থেকে তাকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন, যা সে কল্পনাও করত না। যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’
আরও পড়ুনআজান কেমন করে এল ২০ ডিসেম্বর ২০২৩.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।
প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।
তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।
সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”
তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক