তদন্ত সাপেক্ষে টিউলিপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন স্টারমার
Published: 13th, January 2025 GMT
তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন ক্যাবিনেট মন্ত্রী পিটার কাইল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানোর পর, ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী পিটার কাইল এই মন্তব্য করলেন।
গতকাল রবিবার স্কাই নিউজের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পিটার কাইল বলেন, ‘স্বাধীন তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।’
আরো পড়ুন:
টিউলিপের পর এবার যুক্তরাজ্যে আলোচনায় সালমানপুত্র শায়ান
‘এটি স্পষ্ট ডাকাতির ঘটনা’: টিউলিপ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে ইউনূস
বাংলাদেশ সরকার টিউলিপ সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করার পর, কনজারভেটিভ নেতা ব্যাডেনোচ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তিনিই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।”
টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের জন্য বিরোধীদলের দাবি বিজ্ঞান মন্ত্রী পিটার কাইল প্রত্যাখান করেছেন। কারণ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ট্রেজারির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অর্থনৈতিক অপরাধ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ অর্থায়ন মোকাবিলার দায়িত্বে আছেন। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। তার বিরুদ্ধে হাসিনার শাসনামলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে লন্ডনে একাধিক ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তবে টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়ে স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে গত সোমবার চিঠি লিখেছেন।
টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সংসদীয় তদন্ত দাবি করে সঠিক কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞান মন্ত্রী পিটার কাইল। তিনি বলেন, “আমি মনে করি টিউলিপ ঠিকই করেছেন। তিনি নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আবেদন করেছেন। সেই তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে। আপনারা জানেন, তদন্ত সাপেক্ষে কিয়ার স্টারমার অবশ্যই কর্তৃপক্ষের কথা শুনবেন।’
একই দিনে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারও বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক সম্পূর্ণভাবে সঠিক কাজ করেছেন। টিউলিপের ওপর তার ‘আস্থা’ রয়েছে বলেও জানান কিয়ার স্টারমার।
তবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারকে শেখ হাসিনার শাসনামলে দেওয়া সম্পত্তি ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্য সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “টিউলিপের লন্ডনের সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, তিনি ‘প্লেইন (সরাসরি) ডাকাতি’র সুবিধাভোগী, তাহলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।”
টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদচ্যুত হন এবং দুর্নীতির তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর পর, যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করে বলেন, “কিয়ার স্টারমারের টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসেছে।
টিউলিপের পদত্যাগের দাবি করেছেন শ্যাডো চ্যান্সেলর মেল স্ট্রাইডও। তিনি বলেছেন, ‘টিউলিপ দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী, তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে তার পক্ষে এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা কঠিন। তাই তার পদত্যাগ করা উচিত এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত।’
মেল স্ট্রাইড আরো বলেন, “আমি মনে করি, এমন পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে আপনি এমন পরিস্থিতিতে আছেন যে আপনি আসলে কার্যকরভাবে আপনার কাজ করতে পারবেন না। এখন দেখুন, চ্যান্সেলর চীন সফরে চলে গেছেন; আমার ধারণা ছিল টিউলিপ সিদ্দিক ওই সফরে যাবেন। কিন্ত তিনি যেতে পারেননি। তদন্তের মুখে তাকে এখানে অবস্থান করতে হচ্ছে। তার চারপাশের পরিস্থিতি এখন এরকম।”
“সুতরাং এই মুহূর্তে, তিনি সরকারে তার ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম নন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাকে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং তাকে সরিয়ে দেওয়া।’
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি