অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে ৪৪ জনকে হত্যার পর যুদ্ধবিরতি পুনঃকার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। রবিবার (১৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বিকেলে গাজাজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। খবর বিবিসির।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ ) জানিয়েছে, রবিবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ হামাসের হামলায় তাদের দুই সেনা নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হয়। এর জবাবে রাফাহ সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

আরো পড়ুন:

শান্তিচুক্তির মধ্যেই গাজায় ফের ইসরায়েলের বিমান হামলা

হামাসকে নিরস্ত্র করার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের, কিন্তু কীভাবে তা বললেন না

আইডিএফ দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিলঙ্ঘন করে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা একটি অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে দুই সৈন্যকে হত্যা করে। ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলার জবাবেই অভিযান চালানো হয়।

এদিকে হামাসের সামরিক শাখা জানায়, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে এবং রাফাহ এলাকায় সংঘর্ষ সম্পর্কে অবগত নয়।

অন্যদিকে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, হামাসের প্রায় ৪০টি পৃথক সেল রয়েছে, যাদের অনেকেই এখনো নিরস্ত্র হয়নি। তিনি বলেন, “কিছু সেল হয়তো যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে, কিন্তু অনেকেই তা করবে না।”

ভ্যান্সের মতে, হামাসকে নিরস্ত্র করতে হলে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোকেই মাঠে নেমে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে হবে।

গাজার আল-আওদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আল-জাওয়াইদা শহরে চালানো এক হামলায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের এক কমান্ডারসহ আরো কয়েকজন নিহত হয়েছেন।

একইদিন, মধ্য গাজার একটি আবাসিক এলাকায় চালানো আরেক হামলায় ধ্বংস হয় একটি মিডিয়া প্রোডাকশন কোম্পানির ভ্যান ও সম্প্রচার সরঞ্জাম। নিহত হন কোম্পানির একজন সম্প্রচার প্রকৌশলী ও তার শিশু সন্তান। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ওই এলাকাটি ছিল সম্পূর্ণ বেসামরিক এবং সেখানে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও কাজ করছিলেন। এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে সামরিক বাহিনীকে ‘দৃঢ়ভাবে’ প্রতিক্রিয়া জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাজনৈতিক পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি আবার কার্যকর করা হয়েছে। তবে গাজায় প্রবেশ করা সব ত্রাণবাহী ট্রাকের চলাচল আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

বার্ষিক পরীক্ষায় স্কুলে ‘শাটডাউন’: আলোচনা করে পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বাড়বে

তিন দফা দাবি আদায়ে এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দুই অংশ মিলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি শুরু করেছেন। এর ফলে আজ চতুর্থ দিনের মতো দেশের অনেক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা নিজেরাই ফটকে তালা লাগিয়েছেন। কোথাও কোথাও পরীক্ষা হলেও তা অনেকটা ‘আধামাধা’ভাবে হচ্ছে; কিন্তু এভাবে পরীক্ষা হলেও উত্তরপত্র মূল্যায়ন সঠিকভাবে হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন বা বার্ষিক পরীক্ষা বড় রকমের সমস্যায় পড়ল।

এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে উল্টো শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন এবং আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিচ্ছে। এরই মধ্যে একাধিক শিক্ষক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ রকম হুমকিতে শিক্ষকেরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।

তবে বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে কর্মবিরতিতে সন্তানের পড়াশোনার ক্ষতিতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, বার্ষিক পরীক্ষার এ সময়ে এমন পরিস্থিতিতে আসল ক্ষতিটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ—প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উচিত দ্রুত শিক্ষকদের সঙ্গে বসে তাঁদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা। আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান আসতে পারে। না হলে কার্যত শিক্ষার্থীদের ক্ষতি আরও বাড়বে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেল আপাতত ১১তম গ্রেড দেওয়া, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতার নিরসন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি দেওয়া। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডে আছেন (শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা)।

আরও পড়ুনপ্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোথাও তালা, কোথাও পরীক্ষা১৮ ঘণ্টা আগে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরা পাঠদান করেন। সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। শিক্ষক রয়েছেন পৌনে চার লাখের বেশি। সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন।

গত ২৭ নভেম্বর থেকে তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। গত সোমবার তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও শুরু করে। এই পরিষদ গতকাল বুধবার থেকে বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছে।
প্রায় একই দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের আরেকটি সংগঠন ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর কর্মবিরতি পালন করেছিল।

ঐক্য পরিষদও আজ বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যালয়ে ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি শুরু করেছে। দুই পরিষদের নেতারা সভা করে এখন যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’–এর একজন আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন জানান, আজ সকালে নিজের নোয়াখালী সদর উপজেলায় কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কলাপসিবল গেটে তালা লাগাতে দেখা যায়। এই শিক্ষক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের সরকারি বিদ্যালয়েই তাঁদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে।

আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় কয়েকজন অভিভাবক বসা। শিক্ষকদের বসার কক্ষে সহকারী শিক্ষকেরা বসা। একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, সহকারী শিক্ষকেরা পরীক্ষা নিচ্ছেন না। তবে প্রধান শিক্ষক নিজে এবং সাবেক একজন শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহায়তায় পরীক্ষা নিচ্ছেন। সেখান থেকে দোতলায় একটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেল শিশুরা পরীক্ষা দিচ্ছে। ওই সময়ে কক্ষে কোনো শিক্ষক দেখা যায়নি।

প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার বেগম জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা হচ্ছে।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার থানা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাঁকা শ্রেণিকক্ষ। ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ