‘সংস্কারের নামে দেশে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে’
Published: 13th, January 2025 GMT
সংস্কারের নামে দেশে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান। তিনি বলেন, ‘চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। চারদিকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। আমরা মনে করি, অতি শিগগির একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের মাধ্যমেই মানুষের মৌলিক অধিকার, সামাজিক অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব।’
আজ সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর হাতিয়া এ এম উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দেশবিরোধী অপতৎপরতা রুখতে ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে এ কথাগুলো বলেন মাহবুবের রহমান। হাতিয়া উপজেলা বিএনপি এই জনসমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মী ও সমবেত জনতার উদ্দেশে মাহবুবের রহমান বলেন, ‘আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা রাজপথে ছিলাম বলেই গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আজকের এই স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ কারও একক অর্জন নয়, এটা বাংলাদেশের আপামর মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে।’
মাহবুবের রহমান বলেন, ২০২৪-এর স্বৈরাচারমুক্ত আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ নেতা-কর্মী শাহাদাতবরণ করেছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা গত ১৭ বছরে গুম-খুন, হামলা, মামলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁর বাবার মতো বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাংলার আপামর মানুষ একটি সুসংগঠিত গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমাবেশে মাহবুবের রহমান বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা বিগত সময়ে এত অপকর্ম করার পরেও তারা এখনো প্রকাশ্যে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, অনতিবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে হাতিয়ার সাধারণ মানুষ এর কঠিন জবাব দেবে।
মাহবুবের রহমান আরও বলেন, ‘হাতিয়া একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল, কিন্তু এখানকার সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগের শেষ নেই। যাতায়াতের জন্য ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। ভালো কোনো হাসপাতাল নেই। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে হাতিয়া হবে একটি পর্যটন এলাকা। এখানকার জলপথ ও স্থলপথের যাতায়াতব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। এ ছাড়া যেসব এলাকায় নদীভাঙন রয়েছে, সেখানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। হাতিয়াবাসীর বাণিজ্যিক উন্নয়নের জন্য এখানে একটি নৌবন্দর করা হবে। হাতিয়ার মানুষ চিকিৎসার জন্য যাতে মাইজদী ও ঢাকা না যাওয়া লাগে, সে জন্য উন্নত মানের হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে জনসমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দীন চৌধুরী, সভাপতি আলা উদ্দিন, সাবেক আহ্বায়ক শওকত হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিচানুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কাদের হালিমী, হাতিয়া পৌরসভা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোকাররম বিল্লাহ, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেন ওরফে আজাদ প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ মে থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় তিনটি দল ও সংগঠন পৃথক জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি ঘিরে ছুটির তিন দিনে রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।
১ মে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। পরদিন ২ মে শুক্রবার আওয়ামী লীগের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। ৩ মে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বেলা দুইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এই সমাবেশ আয়োজনে যুক্ত রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। ঢাকা মহানগরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সমাবেশে অংশ নেবেন।
নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সমাবেশটি অনেক বড় করার। আশা করি, আপনারা সেদিন উপস্থিত থাকলে দেখতে পাবেন।’
পরদিন শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এই কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারও দাবি করা হবে।
২১ এপ্রিল থেকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিলের মতো কর্মসূচি করছে এনসিপি। শুক্রবারের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।
এনসিপির সমাবেশের পরদিন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের দিকে অনেকের দৃষ্টি। এক মাস ধরে সংগঠনটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদনসহ কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও আঞ্চলিক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টায় মহাসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এই মহাসমাবেশে তাঁদের মুখ্য দাবি হবে মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। কারণ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলাগুলোকে পুঁজি করে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও একই কাজ করতে পারে। তাই মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে তাঁদের মুখ্য দাবি। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।
উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের ঘটনা ঘটে।
আগামী ৫ মে সোমবার সরকারি কর্মদিবস। সপ্তাহের মাঝখানে রাজধানীতে সমাবেশ করলে বড় ধরনের জনদুর্ভোগে সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সে জন্য হেফাজতে ইসলাম ছুটির দিনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া হেফাজত ৫ মে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করে না। এ ধরনের দিবস পালন ইসলামের নীতিবিরোধী। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ৩ মে মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংগঠনের নেতাদের নামে থাকা অতীতের মামলা-মোকদ্দমাগুলো প্রত্যাহারে সরকারের ওপর চাপ তৈরি, একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য করারও একটি লক্ষ্য রয়েছে।