আটকের পর সাবেক ছাত্রদল নেতার মৃত্যু, মারধর ও চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ
Published: 14th, January 2025 GMT
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা হাসপাতালে মারা গেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। আটকের পর মারধর এবং সময়মতো চিকিৎসা না দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজন ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা। তবে পুলিশ অভিযাগ অস্বীকার করেছে।
নিহত আবদুর রহমান (৩৪) সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামের ছায়েদুল হকের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আবদুর রহমানের চাচাতো ভাই মো.
হানিফের দাবি, পুলিশে সোপর্দ করার পর থানায় গিয়ে দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু দুজনকে বিকেল পাঁচটায় আদালতে পাঠানো হয়। আদালত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বললে পুলিশ সাড়ে পাঁচটার দিকে দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পর আবদুর রহমান মারা যান।
পুলিশ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে সারা দিন থানায় রাখায় আবদুর রহমান মারা গেছেন অভিযোগ করে হানিফ আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অত্যাচারের কারণে ২০১২ সালের পর থেকে এলাকাছাড়া ছিলেন আবদুর রহমান। ৫ আগস্টের পর এলাকায় আসেন তিনি।’
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজিব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ আবদুর রহমান ও হাবিবুর রহমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে আবদুর রহমান মারা যান। তাঁদের দুজনেরই শরীরে জখম ছিল। তবে কাটাছেঁড়া ছিল না।
এক প্রশ্নের জবাবে রাজিব আহমেদ বলেন, হাবিবুরের অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তিনি আতঙ্কিত বোধ করছেন বলে মনে হয়েছে।
জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে যৌথ বাহিনী পুলিশের কাছে আবদুর রহমান ও হাবিবুর রহমানকে হস্তান্তর করে। তখন তাঁদের অবস্থা ভালো ছিল না। এ কারণে তখনই তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে ১০টা ৫০ মিনিটে থানায় আনা হয়। এরপর তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ৩টা ১০ মিনিটে আদালতে পাঠানো হয়।’
ওসি আরও বলেন, আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় মারামারির ঘটনায় দায়ের হওয়া আগের তিনটি মামলা রয়েছে। হাবিবুরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাঁদের কাছ থেকে রাইফেলের দুটি গুলি ও তিনটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যৌথ বাহিনীর অভিযানে সন্দেহভাজন হিসেবে সাবেক ছাত্রদল নেতা আবদুর রহমানসহ চারজনকে আটক করা হয় বলে শুনেছি। তাঁদের মধ্য থেকে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয় আর দুজনকে আটক ও মারধর করা হয়। সময়মতো আদালতে না পাঠিয়ে থানায় আটকে রাখায় চিকিৎসার অভাবে আবদুর রহমান মারা গেছেন। আমরা ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা