ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার সরকারের ডানপন্থী জোটের নেতাদের তীব্র সমালোচনা ও পদত্যাগের হুমকির মুখে পরেছেন। মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ইসরায়েলের জন্য "বিপর্যয়" এবং "হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ" বলে অভিহিত করেছেন। 

নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম X-এ একটি পোস্টে জানান, এই যুদ্ধ বিরতি চুক্তি যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী অর্জনগুলি মুছে দেবে যা আমাদের যোদ্ধাদের দ্বারা অর্জিত হয়েছে।

এই মন্ত্রী দাবি করেছেন যে, গত এক বছরে রাজনৈতিক চাপের মাধ্যমে বারবার যুদ্ধবিরতির চুক্তি প্রতিরোধ করতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন এবং তিনি নেতানিয়াহুকে গাজায় সহায়তা, জ্বালানি এবং পানি প্রবাহ বন্ধ করতে এবং হামাস পুরোপুরি পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরেক মন্ত্রিসভার সদস্য, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ, সম্ভাব্য চুক্তিকে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য "বিপর্যয়" বলে অভিহিত করেছেন এবং হামাস পরাজিত ও বন্দীরা ফেরত আসা পর্যন্ত গাজা দখলের আহ্বান জানিয়েছেন।

এই দুই মন্ত্রীর দলগুলো যদি জোট থেকে সরে যায়, তাহলে নেতানিয়াহুর সরকার একটি সংখ্যালঘু প্রশাসনে পরিণত হবে এবং অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ

বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।

খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।

এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।

এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ