বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী: ডিবিপ্রধান রেজাউল
Published: 14th, January 2025 GMT
বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেছেন, তাঁরা অবৈধ মজুতদার, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর। তা ছাড়া ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্চি হেলাল ও সানজিদুল ইসলাম ইমনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
আজ মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রেজাউল করিম মল্লিক। অবৈধ অস্ত্র, ছিনতাইকারী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও মাদক–সংশ্লিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার ২৭ জনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিবি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২৭ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে খিলগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে চায়নিজ পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি এবং ছয়টি রামদাসহ নাসির উদ্দিন ও ইমরান হোসেন নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে রাত ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী ও হাজারীবাগ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছিনতাইয়ের অভিযোগে আজ ভোরে মিরপুর এলাকা থেকে পাঁচজন, লালবাগ থেকে দুজন, মতিঝিল থেকে দুজন ও উত্তরা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদক সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এবং সাইবার অপরাধে যুক্ত আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, কেউ অবৈধ কোনো কাজ করলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, ছিনতাইকারী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোনো অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি রক্তচক্ষুকে ভয় পান না বলেও জানান।
আরও পড়ুনঅপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় পেশাদার অপরাধীরা তৎপর, উদ্বেগ৪ ঘণ্টা আগেনগরবাসীর কাছে অপরাধ ও অপরাধী–সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকলে তা গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করার আহ্বান জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেন, নগরবাসীর সহযোগিতা ডিবি পুলিশকে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।