বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেছেন, তাঁরা অবৈধ মজুতদার, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর। তা ছাড়া ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্চি হেলাল ও সানজিদুল ইসলাম ইমনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

আজ মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রেজাউল করিম মল্লিক। অবৈধ অস্ত্র, ছিনতাইকারী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও মাদক–সংশ্লিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার ২৭ জনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিবি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২৭ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে খিলগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে চায়নিজ পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি এবং ছয়টি রামদাসহ নাসির উদ্দিন ও ইমরান হোসেন নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে রাত ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী ও হাজারীবাগ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছিনতাইয়ের অভিযোগে আজ ভোরে মিরপুর এলাকা থেকে পাঁচজন, লালবাগ থেকে দুজন, মতিঝিল থেকে দুজন ও উত্তরা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদক সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এবং সাইবার অপরাধে যুক্ত আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, কেউ অবৈধ কোনো কাজ করলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, ছিনতাইকারী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোনো অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি রক্তচক্ষুকে ভয় পান না বলেও জানান।

আরও পড়ুনঅপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় পেশাদার অপরাধীরা তৎপর, উদ্বেগ৪ ঘণ্টা আগে

নগরবাসীর কাছে অপরাধ ও অপরাধী–সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকলে তা গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করার আহ্বান জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেন, নগরবাসীর সহযোগিতা ডিবি পুলিশকে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। 

এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা। 

বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।

যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ