গত ৯ জানুয়ারি সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবায় কর-শুল্ক বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়াছিল, কতিপয় ক্ষেত্রে উহা পুনর্বিবেচনা করা হইতেছে বলিয়া শুক্রবার সমকাল জানাইয়াছে। জনপ্রত্যাশা পূরণে যথেষ্ট না হইলেও, সরকারের এই পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভাশেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানাইয়াছেন, রেস্তোরাঁর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) পূর্বের ন্যায় ৫ শতাংশই থাকিবে, ৯ জানুয়ারি যাহা ১৫ শতাংশ করা হইয়াছিল। পাশাপাশি ই-বুকের আমদানি ও সরবরাহে আরোপিত যথাক্রমে ১৫ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটও প্রত্যাহার করা হইয়াছে। একইসঙ্গে হজযাত্রীর বিমানের টিকিটের উপর কোনো আবগারি শুল্ক না রাখা, ঔষধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত বাড়তি ভ্যাট কার্যকর না করা এবং মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবার বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও আসিতেছে বলিয়া জানা গিয়াছে। তবে ই-বুকের ভ্যাট অব্যাহতির যুক্তি সংবাদপত্র, পত্রিকা, সাময়িকী ও জার্নালের ক্ষেত্রেও কেন প্রযোজ্য হইল না তাহা আমাদের বিস্মিত করিয়াছে। সরকার বলিয়াছে, দেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর জন্য পুস্তকের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে ই-বুক সেবা সর্বজনীন ও সহজলভ্য করিতে এই খাতের ভ্যাট তুলিয়া লওয়া হইয়াছে। এই সিদ্ধান্ত সংবাদপত্র, পত্রিকা, সাময়িকী ও জার্নালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না। পোশাক, মিষ্টি, নন-এসি হোটেল সেবা এবং মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপের ওপর ভ্যাট ১০ শতাংশ রাখাও অন্তত বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অগ্রহণযোগ্য। এইগুলি ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের পর্যায়ে পড়ে, বিশেষত নানা কারণে শিক্ষার আলোবঞ্চিত তরুণ-যুবাদের কর্মসংস্থানে যেই খাতের ভূমিকা বিপুল। করোনা মহামারির পর হইতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের সর্বাধিক ধাক্কা ইহাদেরই মোকাবিলা করিতে হইতেছে। ইহাও বলা প্রয়োজন, কর-শুল্ক বৃদ্ধির শিকার শত পণ্য ও সেবার মধ্যে সাবান, ডিটারজেন্ট ও এলপি গ্যাসের ন্যায় বহু খাত আছে, যেগুলিকে গৃহস্থালি পর্যায়ে অত্যাবশ্যকীয় বলিলে ভুল হইবে না। গত দুই বৎসর যাবৎ দেশে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলিতেছে, উহাতে এই সকল পণ্যের বর্ধিত মূল্যের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। সাম্প্রতিক কর-শুল্ক বৃদ্ধি এই সকল পণ্যের মূল্যে আরেক দফা উল্লম্ফন ঘটাইবে, যাহার ধাক্কা নিম্নআয়ের পাশাপাশি সাধারণ মধ্যবিত্তকেই অধিকতর হারে সামলাইতে হইবে। পূর্বের ন্যায় এখনও আমরা মনে করি, কর-শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এমন সময়ে আসিল যখন বিপুল সংখ্যক মানুষের রোজগার তো বাড়েই নাই, উল্টা তাহাদের অনেকে চাকরি হারাইয়াছেন; বিশেষত বেসরকারি চাকুরিজীবীদের অনেকের বেতন-ভাতাও সংকুচিত হইয়াছে।
সত্য, চলমান অর্থবৎসরে নানা কারণে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ হ্রাস পাইয়াছে। তদুপরি রহিয়াছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের বাড়তি ঋণের শর্তের প্রতিপালন। অর্থাৎ একপ্রকার বাধ্য হইয়াই সরকার কর-শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে। ইহাও সত্য, আলোচ্য খাতসমূহের উদ্যোক্তা ও সেবাপ্রত্যাশীরা বরাবরই কর-শুল্ক পরিশোধ করিয়া আসিতেছেন, তাহাদেরই উপর আরও করের বোঝা সরকার চাপাইল। সমগ্র দেশে অসংখ্য ব্যবসায়ী আছেন, যাহা অদ্যাবধি কর-শুল্কের আওতামুক্ত। করহার কমাইয়া এই সকল ব্যবসায়ীকে শুল্কের আওতায় আনা যাইত। বৃহৎ ব্যবসায়ীদের একটা অংশের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহিত যোগসাজশের মাধ্যমে বিপুল কর-শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রহিয়াছে। সংগৃহীত কর-শুল্কের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ লুট হইবার অভিযোগও পুরানা। এনবিআর এহেন কর ফাঁকি ও চুরি বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিত। দুঃখজনকভাবে, বহু প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও এই ক্ষেত্রে পূর্বসূরিদেরই পথ অনুসরণ করিতেছে। সরকার কর-শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি হয় সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করিলে তাহা হইবে উত্তম পদক্ষেপ। মধ্যম হইতে চাহিলে অন্তত জনস্বার্থঘনিষ্ঠ অধিকাংশ পণ্য ও সেবাকে এই খড়গ হইতে অব্যাহতি দিবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর শ ল ক ব দ ধ র ব যবস য় পর য য় হইয় ছ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
ইউনূস-তারেক বৈঠক
রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে: যৌথ বিবৃতি
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, “বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”
বৈঠকে লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সব রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।”
ঢাকা/হাসান/মাসুদ