ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভিরসহ তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আজ রোববার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

পদত্যাগ করা ইতামার ইসরায়েলের কট্টর জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় দল জিউইশ পাওয়ার পার্টির নেতা। তার দলের আরও দুই সদস্য পদত্যাগ করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে।

জিউইশ পাওয়ার পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আর ক্ষমতাসীন জোটের অংশ নয়। তবে দলটি বলছে, তারা সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করবে না। ইতামারের দল এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোর বিরোধিতা করে আসছে। তারা এটিকে ‘কলঙ্কজনক’ যুদ্ধবিরতি চুক্তি বলে অভিহিত করেছে।

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হ্যান্ডেলে এক পোস্ট দেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি। এর মধ্য দিয়ে টানা ১৫ মাস চলা এ যুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিরতি শুরু হচ্ছে। 

পোস্টে মাজেদ আল-আনসারি বলেন, হামাস ও ইসরায়েল এবং মধ্যস্থতাকারীদের সমন্বয়ে স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

গাজাবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাইকে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং সরকারি সূত্র থেকে নির্দেশনা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা শুক্রবার ছয় ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক শেষে গভীর রাতে চুক্তিটি অনুমোদন করে।

চুক্তি অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপেই হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, তার বিনিময়ে ইসরায়েলও তাদের জেলে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে।

এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীতে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও ছাড়তে হবে, আর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পাবে বাড়ি ফেরার অনুমতি। এই সময়ে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় ঢোকারও সুযোগ দেবে তেল আবিব।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। এই ধাপেই মুক্তি পাবে পুরুষ ইসরায়েলি সেনারা। তৃতীয় ও শেষ ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন, যা শেষ হতে লাগবে কয়েক বছর।

তবে হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি স্থায়ী না হলে এবং ইসরায়েলি বাহিনী গাজা না ছাড়লে তারা প্রথম ধাপের পর আর কোনো জিম্মিকে ছাড়বে না।

চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, প্রথম ধাপে যে জিম্মিরা মুক্তি পাচ্ছেন তাদের মধ্যে বেসামরিক নারী, শিশু, নারী সেনা, বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত বেসামরিকরা রয়েছেন।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন রোববারই তিন জিম্মির মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী, পরবর্তী ছয় সপ্তাহে নিয়মিত বিরতিতে এরকম ছোট ছোট দলে বাকিরাও মুক্তি পাবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলায় এক হাজার ২০০ নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার প্রত্যুত্তরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্নে সামরিক অভিযানে নামে।

এরপর ১৫ মাসের অবিরাম যুদ্ধ গাজার প্রায় ৪৭ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য বলছে। প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দাকে হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল প রথম ধ প ইসর য় ল র পদত য গ মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।

গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ