পটুয়াখালীতে নারী পুলিশ কনস্টেবল ও কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সকালে পটুয়াখালী পুলিশ লাইনসের ব্যারাক থেকে কনস্টেবল তৃষ্ণা বিশ্বাস (২১) এবং পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রীনিবাস থেকে রিয়ামনি আক্তার মিলার (১৮) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দু’টি ঘটনারই তদন্ত করছে পুলিশ। 

কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবু নাহিয়ান নামে এক যুবককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। 

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আহমাদ মাইনুল হাসান জানান, তৃষ্ণার বাড়ি মাদারীপুর জেলার ডাসার থানার পূর্ব কমলাপুর গ্রামে। তিনি ২০২৩ সালের নভেম্বরে পুলিশে যোগদান করেন। তৃষ্ণা ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। তার রুমে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায় চিকিৎসা নেন। ওই চিকিৎসাপত্রে ‘আত্মহত্যার প্রবণতা’ লেখা রয়েছে। চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হাসপাতালে ভর্তি হননি এবং বিষয়টি কাউকে জানাননি। তিনি যে ওষুধ সেবন করতেন তাও জেলা পুলিশকেও অবহিত করেননি। পরিবারের সদস্যরা আসার পরে আইনি কার্যক্রম শেষে মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

এদিকে কলেজছাত্রী মিলার রুমমেট আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ‘মিলা রাতে হোস্টেলে ছিল না। কোথায় ছিল তাও জানি না। সকালে সে রুমে আসে এবং সোয়া ৯টার দিকে আমরা ডাইনিংয়ে যাই। সেখান থেকে ফিরে দেখি ভেতর থেকে দরজা আটকানো। ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় জানালার ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। তখন মিলাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখতে পাই। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকি। মিলা কখনও কিছু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেনি।’  

মিলার ফুফু মোসা.

ফাতিমা বেগম বলেন, ‘জানি না কি হয়েছিল। আমি ফোনে খবর পেয়ে এখানে এসেছি ওকে দেখতে। আমার ছেলে অসুস্থ, ওকে নিয়েও আমি হাসপাতালে আছি।’ 

কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোদাচ্ছের বিল্লাহ জানান, মিলা মেধাবী শিক্ষার্থী। কলেজ ছাত্রীনিবাসের দোতলায় ২০০১ রুমে থাকত। সকালে সহপাঠীদের অগোচরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় সে। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পমেক হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবু নাহিয়ান নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। 

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি ইমতিয়াজ মাহমুদ মুঠোফোনে জানান, কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় আবু নাহিয়ান নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ