মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবি করে “অবিলম্বে ফল বাতিল করো করতে হবে’, ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, ‘মেডিকেলের ফলাফল-পুনঃপ্রকাশ করতে হবে’ সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ,’মেডিকেলে কোটা কেন, প্রশাসন জবাব চাই,’৪০ পেয়ে চান্স হয়, ৭৩ কেন বাদ হয়, ’আমার সোনার বাংলায়,বৈষম্যের ঠাঁয় নাই’ সহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) সহযোগী অধ্যাপক ডা.

ইদ্রিস আলী বলেন, “আমার একজন ছেলে বা মেয়ে ৭৩ পেয়েও মেডিকেলে চান্স পাচ্ছে না অথচ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৬ বা ৩৭ পেয়েও চান্স পেয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে কেনো এই বৈষম্য থাকবে। আমরা এই ফল মানি না।”

সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডা. আব্দুল ওহাব বলেন, “মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কেউ ফোরটি, ফোরটি ওয়ান পেয়ে চান্স পেয়েছে। অথচ এর ডাবল মার্ক পেয়েও অনেকে চান্স পায়নি, এটা কি বৈষম্য না।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক নাদিম মাহমুদ শুভ জানান, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃপ্রকাশের জন্য আজ তারা স্মারকলিপি দিতে যাবেন এবং ফলফল পুনঃপ্রকাশ না করলে লাগাতার কর্মসূচি দেবেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তানবীর আহসান বলেন, “ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেলে, ডাক্তারের দোষ হয়। মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হয় ডাক্তার তৈরির জন্য, সেখানে যদি কোটার মাধ্যমে অযোগ্যদের নেওয়া হয় তাহলে তো রোগী মারা যাবে ভুল চিকিৎসায়। প্রয়োজনে সারা দেশের সব মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে নামবো। সুতরাং এই আন্দোলনকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। আজকের মধ্যেই ফল বাতিল করতে হবে।” 

শহীদ মিনারে আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিক্ষকরা এসে সংহতি জানান।

গতকাল ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়।

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ