মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে জান্তা ও একটি সশস্ত্র জোটের যুদ্ধবিরতি
Published: 20th, January 2025 GMT
চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং দেশটির একটি সশস্ত্র জোট ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) এর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী শনিবার থেকে দুই পক্ষের মধ্যে এই চুক্তি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে চীন সীমান্তে যুদ্ধ বন্ধ করেছে জান্তা ও এমএনডিএএ।
জান্তার সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের এই জোটের প্রতিধিনিরা চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ে বৈঠক করে। এতে মধ্যস্থতা করেছে বেইজিং।
আরো পড়ুন:
মিয়ানমার থেকে এল দেড় হাজার বস্তা ডাল
কাচিনের বাজারে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত ১৫
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সোমবার (২০ জানুয়ারি) নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত করা মিয়ানমার এবং এই অঞ্চলের সব দেশের সব পক্ষের জন্য একটি সাধারণ স্বার্থ, যা চীন ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখবে।”
মাও নিং বলেন, “চীন সক্রিয়ভাবে শান্তি ও সংলাপের জন্য প্রচার চালিয়ে যাবে এবং উত্তর মিয়ানমারে শান্তি প্রক্রিয়ায় সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে যাবে।”
এমএনডিএএ হলো কয়েকটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি জোট, যারা তাদের অঞ্চল থেকে সামরিক বাহিনীকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করে আসছে।
এমএনডিএএ সশস্ত্র জোটটি তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে তথাকথিত ‘থ্রি ব্রাদারহুড’ অ্যালায়েন্সের অংশ। ২০২৩ অক্টোবরের শেষের দিকে চীনের সীমান্তের কাছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এমএনডিএএ।
মিয়ানমারের চিন প্রদেশের জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে এমএনডিএএ গঠন করা হয়। গত জুলাইয়ে তারা চীনা সীমান্তের কাছে একটি বড় সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।
রয়টার্স লিখেছে, বিশ্লেষকরা বলছেন- মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী শক্তির অগ্রগতি নিয়ে চিন্তিত চীন। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জান্তা বাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মান্দালয়ের কেন্দ্রীয় শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিদ্রোহীরা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে নেয়। তখন থেকে সংকটে নিমজ্জিত রয়েছে মিয়ানমার।
চীনের আশঙ্কা, মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্তে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে থাকলে তা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।
বেইজিং এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে উত্তর সীমান্তে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল কিন্তু কয়েক মাস পরে চুক্তিটি ভেস্তে যায়। এবারও যে চুক্তি তাদের মধ্যস্থতা হলো, তা কতদিন টেকে, সেটিই দেখার বিষয়।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।
আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।
তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল