চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং দেশটির একটি সশস্ত্র জোট ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) এর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে।

রয়টার্স লিখেছে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী শনিবার থেকে দুই পক্ষের মধ্যে এই চুক্তি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে চীন সীমান্তে যুদ্ধ বন্ধ করেছে জান্তা ও এমএনডিএএ।

জান্তার সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের এই জোটের প্রতিধিনিরা চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ে বৈঠক করে। এতে মধ্যস্থতা করেছে বেইজিং।

আরো পড়ুন:

মিয়ানমার থেকে এল দেড় হাজার বস্তা ডাল

কাচিনের বাজারে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত ১৫

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সোমবার (২০ জানুয়ারি) নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত করা মিয়ানমার এবং এই অঞ্চলের সব দেশের সব পক্ষের জন্য একটি সাধারণ স্বার্থ, যা চীন ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখবে।”

মাও  নিং বলেন, “চীন সক্রিয়ভাবে শান্তি ও সংলাপের জন্য প্রচার চালিয়ে যাবে এবং উত্তর মিয়ানমারে শান্তি প্রক্রিয়ায় সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে যাবে।”

এমএনডিএএ হলো কয়েকটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি জোট, যারা তাদের অঞ্চল থেকে সামরিক বাহিনীকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করে আসছে।

এমএনডিএএ সশস্ত্র জোটটি তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে তথাকথিত ‘থ্রি ব্রাদারহুড’ অ্যালায়েন্সের অংশ। ২০২৩ অক্টোবরের শেষের দিকে চীনের সীমান্তের কাছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এমএনডিএএ।

মিয়ানমারের চিন প্রদেশের জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে এমএনডিএএ গঠন করা হয়। গত জুলাইয়ে তারা চীনা সীমান্তের কাছে একটি বড় সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।

রয়টার্স লিখেছে, বিশ্লেষকরা বলছেন- মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী শক্তির অগ্রগতি নিয়ে চিন্তিত চীন। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জান্তা বাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মান্দালয়ের কেন্দ্রীয় শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিদ্রোহীরা।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে নেয়। তখন থেকে সংকটে নিমজ্জিত রয়েছে মিয়ানমার।

চীনের আশঙ্কা, মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্তে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে থাকলে তা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।

বেইজিং এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে উত্তর সীমান্তে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল কিন্তু কয়েক মাস পরে চুক্তিটি ভেস্তে যায়। এবারও যে চুক্তি তাদের মধ্যস্থতা হলো, তা কতদিন টেকে, সেটিই দেখার বিষয়।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সশস ত র

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদাবাজ রিয়াদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ মিশনপাড়া

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশনপাড়ায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, হুমকি ও হয়রানিমূলক মামলার ভয়ঙ্কর এক চক্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রিয়াদ  দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে দোকান বসানো পর্যন্ত সবকিছুতেই চাঁদা দাবি করেন তিনি ও তাঁর অনুসারীরা।

চাঁদা না দিলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা, পরে দেওয়া হয় সাজানো মামলা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রয়েছে রহস্যজনকভাবে নীরব।

স্থানীয়রা বলছেন, রিয়াদ নিজে কোনো রাজনৈতিক আদর্শের লোক না হলেও, একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাঁদের ব্যবহার করেন নিজের স্বার্থে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রিয়াদ এতটাই দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন যে, থানায় একাধিক অভিযোগের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামিও এই রিয়াদ। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় তাঁর নামে একাধিক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা রয়েছে।

এমনকি তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তারপরও তিনি দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আদায় করে চলেছেন চাঁদা, দখল করে নিচ্ছেন জমি, দোকান।

মিশনপাড়ায় বর্তমানে যেসব ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় প্রতিটির কাজেই বাধা দেওয়া হয়েছে রিয়াদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাড়ির মালিক বলেন, “আমরা পরিবার নিয়ে এখানে থাকি।

নিজের পৈতৃক জমিতে ভবন নির্মাণ করছি। হঠাৎ একদিন ৪-৫ জন যুবক এসে জানায়, বসের অনুমতি ছাড়া কাজ হবে না। পরে রিয়াদ নিজেই ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। না দিলে মালামাল ফেলে দেওয়া, শ্রমিকদের মারধরের হুমকি দেয়।”

এই অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। অন্তত ৮-১০ জন ভবন মালিক এবং কয়েকজন ঠিকাদার একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, রিয়াদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিতভাবে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। কেউ না মানলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা-মামলা আর হয়রানির স্বীকারে।

মিশনপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিয়াদ এলাকায় একটি ভয়ঙ্কর ‘মিনি মাফিয়া নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছেন। ভবন নির্মাণ, দোকান বসানো, এমনকি ফুটপাতে ব্যবসা করতেও তাঁকে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় চলতে থাকে ভয় দেখানো, ভাঙচুর, এমনকি জীবননাশের হুমকি। অনেকেই বলেন, তাঁরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন রিয়াদ ও তাঁর চক্রের হাতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার পৈতৃক জমিতে ভবন করতে গিয়ে বিপদে পড়েছি। ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। না দিলে শ্রমিকদের মারধর করবে বলে হুমকি দিয়েছে। থানায় গিয়ে অভিযোগ করলাম, কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং রিয়াদ খবর পেয়ে হুমকি দিয়ে চাঁদার পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

একজন ঠিকাদার বলেন, “ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের এখন বেশি খরচ হয় রিয়াদকে সামলাতে। কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। যে যেখানে ইচ্ছা চাঁদা চাচ্ছে, না দিলে মামলা, মারধর। কোথাও নালিশ করতে পারি না, বরং নালিশ করলেই বিপদ আরও বাড়ে।”

আরেকজন ঠিকাদার বলেন, “রিয়াদ এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা। কাজ শুরু করলেই তার লোকজন এসে বলে, বসের অনুমতি লাগবে। চাঁদা না দিলে মালামাল উধাও, শ্রমিক পালায়, পরে থানায় গিয়ে দেখি আমার নামে নাকি মারামারির মামলা!”

ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু ভীতি ও চাঁদাবাজি নয়, রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা একটি সংঘবদ্ধ আইনি হয়রানির চক্রও তৈরি করেছেন। কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। পরবর্তীতে সেই মামলা আপোষে নিষ্পত্তির জন্য আবারও দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রিয়াদের এতোসব অপরাধ কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে, কেন এই নীরবতা? তাঁর নামে একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকার পরও কীভাবে তিনি খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ান? পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে আড়াল করছে?

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এলাকাবাসীর দাবি ভিন্ন।

তাঁরা বলছেন, শুধু অভিযোগ নয়, ভিডিও প্রমাণ, অডিও ক্লিপস, এমনকি লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি তাঁরা। বরং অভিযোগ জানানোর পর হুমকির মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বা কাজ বন্ধ রেখেছেন।

রিয়াদের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছেও বহুবার গেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কেউই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসেননি। বরং অনেকে অভিযোগ করেন, রিয়াদ একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গ্রুপের ‘অঘোষিত কার্যকর্তা’ হিসেবে কাজ করেন, এবং সেই পরিচয়ের কারণেই তাঁকে ঘিরে রয়েছে এক ধরনের অদৃশ্য নিরাপত্তা।

মিশনপাড়ার এই অবস্থা এখন পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরের নিরাপত্তা ও সুশাসনের জন্য ভয়ঙ্কর এক সংকেত হয়ে উঠেছে। নাগরিক সমাজের প্রশ্ন , যদি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একাধিক মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে আইনের শাসন কোথায়? 

সচেতন মহলের দাবি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রিয়াদ ও তাঁর চক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন শুধু মিশনপাড়া নয়, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি প্রান্তেই গড়ে উঠবে এমন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।

এখনই সময় রিয়াদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার, নয়তো ঘটতে পারে ভয়ংকর অপ্রীতিকর কোন ঘটনা। আক্রান্ত হতে পারে ভুক্তভোগীরা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ