ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও ঢাকার সাবেক এমপি সাদেক খানকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম জি এম ফারহান ইসতিয়াক শুনানি শেষে গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন।
এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর বিভিন্ন থানার পৃথক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ চারজনকে। গ্রেপ্তার দেখানো অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– ডিবির রমনা জোনের সাবেক দুই ডিসি মশিউর রহমান ও জুয়েল রানা। এদিন সকালে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
এদিন মোহাম্মদপুর থানায় ইনসান হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানিতে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি আদালতের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, এরই মধ্যে পলকের ৫৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আবার হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। একজন মানুষকে আর কতবার রিমান্ডে নেওয়া হবে? তখন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘রিমান্ড তো মাত্র শুরু হয়েছে। জুলাই-আগস্টে গণহত্যা হয়েছে। বহু মানুষ শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম সহযোগী হলেন পলক। হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বসে তিনি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেছেন।’ উভয় পক্ষের শুনানির পর আদালত পলক, সাদেক খান ও সলিম উল্লাহর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নাফিজ সরাফাতের ফ্ল্যাট ও ভিলা ক্রোকের আদেশ
দুবাইয়ে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের নামে থাকা বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট ও একটি ভিলা ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গতকাল এ আদেশ দেন। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি ঢাকায় চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামে থাকা ২২টি ফ্ল্যাট, দুটি বাড়িসহ সব প্লট ও জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।
চকলেট খেলেন কামাল মজুমদার
সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে মিরপুর থানার পৃথক দুই হত্যা মামলায় নতুন করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদিন তাঁকে আদালতে আনা হলে শুনানির পর কাঠগড়ার এক পাশে গিয়ে কামাল মজুমদার তাঁর এক আইনজীবীকে ডেকে চকলেট খেতে চান। কিছুক্ষণ পর ওই আইনজীবী সাদা কাগজের ব্যাগে তাঁর জন্য চকলেট আনেন। শুনানি শেষে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় কামাল মজুমদারকে চকলেট দেওয়া হয়।
এস কে সুর পরিবারের লকার জব্দের আদেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরী পরিবারের লকার জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাঁর বাসা থেকে উদ্ধার ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ট্রেজারিতে রাখা এবং তাঁর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব গতকাল এ আদেশ দেন।
তৈয়বুর কারাগারে
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সই জাল করে প্লট বরাদ্দ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগে গ্রেপ্তার সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী তৈয়বুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জাজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
নেজামুদ্দিন নদভী রিমান্ডে
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে দুই মামলায় দু’দিন করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুমিনুন্নিসা খানম এ আদেশ দেন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থানার হত্যা চেষ্টা এবং বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় নদভীকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
শাহীন চাকলাদারের কারাদণ্ড
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারকে চার বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৩৮ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের মামলায় গতকাল যশোর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম এই রায় দেন।
সাবেক এমপি আবু জাহিরের সম্পদ ক্রোক
হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে সাড়ে ১০ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সম্পদ ক্রোক ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সিনিয়র স্পেশাল জজ জেসমিন আরা বেগম এ আদেশ দেন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন আদালত প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধি)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ র কর ন র পর গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।
এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।
পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।