৮ দিনে ৩২ দোকানে চুরি দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
Published: 23rd, January 2025 GMT
ঝিনাইদহ শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। গত ৮ দিনে সদর উপজেলার ৩২টি দোকান ও একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। ধারাবাহিক চুরির ঘটনা ও চোর চক্রকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, চলতি জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখ রাতে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারের ১৮টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৩টি দোকান থেকে ৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চোর চক্র। এ ছাড়া পাঁচটি দোকানের শাটার ভাঙলেও এসব দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেনি। একইভাবে ১৬ জানুয়ারি রাতে পার্শ্ববর্তী গোয়ালপাড়া বাজারে দুটি মার্কেটের ১০টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।
এর আগে ১২ তারিখ রাতে জেলা শহরের নতুন হাটখোলা ও ক্যাসেল ব্রিজ এলাকার চারটি দোকানে চুরি হয়। সর্বশেষ গত রোববার শহরের ঘোষপাড়া এলাকা-সংলগ্ন একটি বাড়ির গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢুকে নগদ লক্ষাধিক টাকা ও প্রায় ৭ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় চোররা। ভুক্তভোগী সদর উপজেলার সুরাট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব লুৎফা খাতুন বলেন, দিনে শহরের ভেতরে এমন ঘটনা ঘটবে তিনি ভাবতেও পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটগোপালপুর ও গোয়ালপাড়া বাজারের চুরির ধরন ছিল একই রকম। কোথাও এক সাইডের তালা ভেঙে, কোনো দোকানে লাঠি দিয়ে শাটারের মাঝখান থেকে বাঁকা করে চোররা দোকানের ভেতরে ঢোকে। এর পর শুধু ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে এসব চুরির ঘটনা ঘটে।
কয়েকজন দোকানি জানান, দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র একটি চক্র কাজে লাগিয়ে এগুলো ঘটাচ্ছে। কারণ রাতে গোয়ালপাড়া ও হাটগোপালপুর বাজারে দোকান মালিক সমিতির নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী থাকে। পাশাপাশি বাজার এলাকায় টহল পুলিশও থাকে।
গোয়ালপাড়া বাজারের সৌদিয়া সুপারমার্কেটের কসমেটিকস ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছেন। এভাবে চললে ব্যবসা করব কীভাবে?’
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হাটগোপালপুর বাজারে বিএনপির নেতাকর্মী ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। এতে আগের ২০২২ সালে গঠিত ১১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটির (নির্বাচন পরিচালনা কমিটিই দোকান মালিক সমিতির দায়িত্ব পালন করত) সঙ্গে তাদের বিরোধ শুরু হয়। আর গোয়ালপাড়া বাজারে আগের কমিটির কার্যক্রম না থাকায় সেখানে কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের মতো করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন।
হাটগোপালপুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সদর থানায় মামলা করা হয় ১৪ তারিখে। এ মামলায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গোয়ালপাড়ার ঘটনায় রাতেই চুরির সঙ্গে জড়িত একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় ১৬ তারিখ আটক ব্যক্তিসহ দু’জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দু’জনের বাড়িই গোয়ালপাড়া গ্রামে।
অন্যদিকে জেলা শহরের দোকান ও বাড়িতে চুরির ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটক বা চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতেও পারেনি পুলিশ। এতে মানুষের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।
গোয়ালপাড়া বাজারের রাত্রিকালীন নিরাপত্তার তদারককারী রুস্তম আলী বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা কিছুটা আছে। আবার বাজারে রাজনৈতিক কিছু সমস্যাও রয়েছে। চুরি থেকে বাঁচতে হলে ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। কারণ চোর চক্রের অনেকেই আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা।
হাটগোপালপুর নবগঠিত বাজার কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মিন্টু বলেন, আগের কমিটির আওয়ামী লীগের দোসররাও চুরির পেছনে জড়িত থাকতে পারে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইমরান জাকারিয়া বলেন, ‘কিছু দুষ্কৃতকারী সুযোগ বুঝে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে। কী কারণে এমন ঘটছে, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করব না। তবে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে, ধরতে পারলেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ সদর উপজ ল র চ র র ঘটন ব যবস য় কম ট র শহর র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।