পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ৩৩ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ সোমবার এক বিবৃতিতে তাঁরা এই উদ্বেগ জানান।

গতকাল রোববার পার্বত্য জেলা রাঙামাটি শহরে এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি জটিলতা নিরসনে কাজ করছে এ কমিশন। তবে কমিশনের এই বৈঠকের আগেই বৈঠক বাতিলের দাবিতে রাঙামাটির সচেতন ছাত্র-জনতার ব্যানারে হরতালের ডাক দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পক্ষ থেকে এ বৈঠক স্থগিতের কথা জানানো হয়।

আজ বিশিষ্টজনদের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর ক্ষোভ, উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, পার্বত্য তিন জেলায় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হলেও গত ২৪ বছরে এ কমিশন বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেনি। তবে ২০১৬ সালে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনের পর ভূমি কমিশনের কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

বিবৃতিদাতারা বলেন, ইতিমধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ২৬ হাজারের বেশি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু এই বিরোধীয় বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করতে একান্ত প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, এমনকি কমিশন পরিচালনার জন্য যথাযথ লোকবল এবং প্রয়োজনীয় বাজেটসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। এর আগের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যানরাও এই সভা করার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এবং নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজও সব পরিস্থিতি জানার পরও তথাকথিত নাগরিক পরিষদ ও তার ক্ষমতার পেছনের স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের হাতে জিম্মি হয়ে একই পথে চলে সভা অনুষ্ঠান না করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের ভেতরের একটি প্রভাবশালী মহল প্রচ্ছন্নভাবে, কখনো কখনো প্রকাশ্যে এই চুক্তিবিরোধীদের সহিংস ও ধংসাত্মক তৎপরতায় ইন্ধন জুগিয়ে আসছে বলে অনেক দিন থেকেই অভিযোগ রয়েছে। তাদেরই মদদে এই কথিত নাগরিক পরিষদ সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা বাতিলের জন্য রাঙামাটি সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে অবরোধের হুমকি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভূমি বিরোধের জেরে একের পর এক পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা, বাড়িঘরে অগ্মিসংযোগ, লুটপাট, পাহাড়ি নারীদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণসহ পাহাড়িদের হত্যা, অপহরণ, মিথ্যা মামলা, হয়রানি ক্রমেই এই জনপদকে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এই অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার মাত্রা দিন দিন শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে।

বিবৃতিদাতারা বলেন, এটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধান। এটি না করে এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত না করে দিনের পর দিন নিরাপত্তার চশমা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীদের বঞ্চনার সমস্যাকে বারবার শুধু উপেক্ষা করা হচ্ছে। সেটলার অপাহাড়িদের মধ্যে কিছু লোককে বা একটি সহিংস গোষ্ঠীকে তাদের ওপর হামলা নির্যাতন চালাতে উৎসাহ ও ইন্ধন দিয়ে এবং যেকোনো ঘটনায় পাহাড়িদের ওপরই দোষ চাপিয়ে গুলি, হত্যা, গ্রেপ্তারের নিপীড়নের শিকার বানিয়ে সমস্যাকেই কেবল জটিল করে তোলা হচ্ছে। আর স্থানীয় পাহাড়িসহ সাধারণ নাগরিকদের দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে।

পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা অনুষ্ঠানে বারবার কারা বাধা দিচ্ছে, আর কেন একই অজুহাতে সভা স্থগিত করা হচ্ছে, উচ্চপর্যায়ের স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তার কারণ উদ্‌ঘাটনের দাবি করা হয় বিবৃতিতে। একই সঙ্গে সরকারের ভেতরের কোনো প্রভাবশালী মহলের এতে কোনো ইন্ধন ছিল বা আছে কি না, তা–ও সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার বা সরকারের কোনো প্রভাবশালী মহলই শুধু পার্বত্যবাসী নয়, সমগ্র দেশবাসীর কাছে তার যেকোনো কাজ এবং অনভিপ্রেত আচরণের জবাবদিহির দায় কোনো অজুহাতেই এড়াতে পারে না। ’২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান সেই বার্তাই সবাইকে আর একবার দৃঢ়ভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, খুশী কবির, শিরীন পারভীন হক, শাহীন আনাম, ইফতেখারুজ্জামান, শামসুল হুদা, তবারক হোসেন, সালমা আলী, সুব্রত চৌধুরী, ফেরদৌস আজীম, জাকির হোসেন, খাইরুল চৌধুরী, তাসলিমা ইসলাম, তাসনীম সিরাজ মাহমুব, জোবাইদা নাসরীন, রেজওয়ানা করিম, মোশরেকা অদিতি হক, ফারহা তানজীম, পারভেজ হাসেম, রেজাউল করিম চৌধুরী, দীপায়ন খীসা, মনিন্দ্র কুমার নাথ, পল্লব চাকমা, সালেহ আহমেদ, সাইদুর রহমান, সাইফুর রহমান, মাহাবুবুল হক, পাভেল পার্থ, শাহেদ কায়েস, মেইনথিন প্রমীলা, সাঈদ আহমেদ, হানা শামস আহমেদ ও মুক্তাশ্রী চাকমা।

আরও পড়ুনভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত: পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্বেগ১৭ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য উদ ব গ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৪ প্রবাসীর নিবন্ধন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোট দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৪ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধন করা ভোটারদের মধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৯ পুরুষ ও ১৮ হাজার ৯৬৫ নারী রয়েছেন।

আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পোস্টাল ভোটিং আপডেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সঠিক ঠিকানা প্রদান

পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের সময় সঠিক ঠিকানা দেওয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুরোধ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধনের সময় আপনার (প্রবাসী) অবস্থানকালে দেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সঠিক ঠিকানা দিন। প্রয়োজনে কর্মস্থল অথবা পরিচিতজনের ঠিকানা দিন।

আরও বলা হয়, নিবন্ধনের সময় ভুল ঠিকানা দিলে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধনের জন্য মোবাইল অ্যাপের এডিট মেনু ব্যবহার করুন। সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দেওয়া ছাড়া পোস্টাল ব্যালট পেপার ভোটারদের কাছে পাঠানো সম্ভব হবে না।

আজ আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি–এসডিআই) প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমদ খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

দেশভিত্তিক নিবন্ধনের মধ্যে সৌদি আরবের ৩৮ হাজার ২৬৯ ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ হাজার ২৭১ প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন।

২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া ১৮ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধনের প্রক্রিয়া বিশ্বের সব দেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিংয়ের ব্যাপারে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়িয়ে ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়েছে। এখন বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকেই আমাদের এই অ্যাপ ডাউনলোড করে যে কেউ ভোটার নিবন্ধন করতে পারেন।’

ইসি সচিব জানান, নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা, আইনি হেফাজতে থাকা ভোটার ও নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও ইন–কান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং (আইসিপিভি) প্রক্রিয়া চালু করা হবে।

আখতার আহমেদ আরও জানান, আইসিপিভি ইন–কান্ট্রি পোস্টাল ভোটের বিষয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ দিনের মেয়াদে নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি চালু করা হবে।

গত ১৮ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৪৮টি নির্দিষ্ট দেশে ভোটার নিবন্ধনের সময়সূচি ঘোষণা করেন।

পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের জন্য প্রবাসী ভোটারকে অবশ্যই যেখান থেকে ভোট দেবেন, সেই দেশের মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

নিবন্ধনের জন্য প্রথমে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে হবে। বিদেশে ব্যালট প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক ঠিকানা দেওয়া অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ