পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতে উদ্বেগ ৩৩ বিশিষ্টজনের
Published: 20th, October 2025 GMT
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ৩৩ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ সোমবার এক বিবৃতিতে তাঁরা এই উদ্বেগ জানান।
গতকাল রোববার পার্বত্য জেলা রাঙামাটি শহরে এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি জটিলতা নিরসনে কাজ করছে এ কমিশন। তবে কমিশনের এই বৈঠকের আগেই বৈঠক বাতিলের দাবিতে রাঙামাটির সচেতন ছাত্র-জনতার ব্যানারে হরতালের ডাক দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পক্ষ থেকে এ বৈঠক স্থগিতের কথা জানানো হয়।
আজ বিশিষ্টজনদের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর ক্ষোভ, উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, পার্বত্য তিন জেলায় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হলেও গত ২৪ বছরে এ কমিশন বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেনি। তবে ২০১৬ সালে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনের পর ভূমি কমিশনের কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ইতিমধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ২৬ হাজারের বেশি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু এই বিরোধীয় বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করতে একান্ত প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, এমনকি কমিশন পরিচালনার জন্য যথাযথ লোকবল এবং প্রয়োজনীয় বাজেটসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। এর আগের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যানরাও এই সভা করার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এবং নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজও সব পরিস্থিতি জানার পরও তথাকথিত নাগরিক পরিষদ ও তার ক্ষমতার পেছনের স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের হাতে জিম্মি হয়ে একই পথে চলে সভা অনুষ্ঠান না করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের ভেতরের একটি প্রভাবশালী মহল প্রচ্ছন্নভাবে, কখনো কখনো প্রকাশ্যে এই চুক্তিবিরোধীদের সহিংস ও ধংসাত্মক তৎপরতায় ইন্ধন জুগিয়ে আসছে বলে অনেক দিন থেকেই অভিযোগ রয়েছে। তাদেরই মদদে এই কথিত নাগরিক পরিষদ সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা বাতিলের জন্য রাঙামাটি সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে অবরোধের হুমকি দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভূমি বিরোধের জেরে একের পর এক পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা, বাড়িঘরে অগ্মিসংযোগ, লুটপাট, পাহাড়ি নারীদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণসহ পাহাড়িদের হত্যা, অপহরণ, মিথ্যা মামলা, হয়রানি ক্রমেই এই জনপদকে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এই অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার মাত্রা দিন দিন শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, এটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধান। এটি না করে এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত না করে দিনের পর দিন নিরাপত্তার চশমা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীদের বঞ্চনার সমস্যাকে বারবার শুধু উপেক্ষা করা হচ্ছে। সেটলার অপাহাড়িদের মধ্যে কিছু লোককে বা একটি সহিংস গোষ্ঠীকে তাদের ওপর হামলা নির্যাতন চালাতে উৎসাহ ও ইন্ধন দিয়ে এবং যেকোনো ঘটনায় পাহাড়িদের ওপরই দোষ চাপিয়ে গুলি, হত্যা, গ্রেপ্তারের নিপীড়নের শিকার বানিয়ে সমস্যাকেই কেবল জটিল করে তোলা হচ্ছে। আর স্থানীয় পাহাড়িসহ সাধারণ নাগরিকদের দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা অনুষ্ঠানে বারবার কারা বাধা দিচ্ছে, আর কেন একই অজুহাতে সভা স্থগিত করা হচ্ছে, উচ্চপর্যায়ের স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তার কারণ উদ্ঘাটনের দাবি করা হয় বিবৃতিতে। একই সঙ্গে সরকারের ভেতরের কোনো প্রভাবশালী মহলের এতে কোনো ইন্ধন ছিল বা আছে কি না, তা–ও সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও দাবি করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার বা সরকারের কোনো প্রভাবশালী মহলই শুধু পার্বত্যবাসী নয়, সমগ্র দেশবাসীর কাছে তার যেকোনো কাজ এবং অনভিপ্রেত আচরণের জবাবদিহির দায় কোনো অজুহাতেই এড়াতে পারে না। ’২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান সেই বার্তাই সবাইকে আর একবার দৃঢ়ভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, খুশী কবির, শিরীন পারভীন হক, শাহীন আনাম, ইফতেখারুজ্জামান, শামসুল হুদা, তবারক হোসেন, সালমা আলী, সুব্রত চৌধুরী, ফেরদৌস আজীম, জাকির হোসেন, খাইরুল চৌধুরী, তাসলিমা ইসলাম, তাসনীম সিরাজ মাহমুব, জোবাইদা নাসরীন, রেজওয়ানা করিম, মোশরেকা অদিতি হক, ফারহা তানজীম, পারভেজ হাসেম, রেজাউল করিম চৌধুরী, দীপায়ন খীসা, মনিন্দ্র কুমার নাথ, পল্লব চাকমা, সালেহ আহমেদ, সাইদুর রহমান, সাইফুর রহমান, মাহাবুবুল হক, পাভেল পার্থ, শাহেদ কায়েস, মেইনথিন প্রমীলা, সাঈদ আহমেদ, হানা শামস আহমেদ ও মুক্তাশ্রী চাকমা।
আরও পড়ুনভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত: পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্বেগ১৭ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য উদ ব গ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন দেশে আমরা ছিলাম পরাধীন: ফয়জুল করীম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ‘‘১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও বিগত সরকারের আমলে স্বাধীন দেশে আমরা ছিলাম পরাধীন। চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর আশা করেছিলাম, দেশ সঠিক পথে এগোবে। কিন্তু, আজকের বাস্তবতায় সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা পাঁচ দফা দাবির মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেছি। ৩১টি দল ঐক্যমত্য কমিশনে অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে, ২৫টি দল পিআরের পক্ষে মত দিয়েছে এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দাবি করেছেন। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ঐক্যমত হওয়া ৮৪টি বিষয়ে তালবাহানা না করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে।’’
সোমবার (২০ অক্টোবর) নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ চত্বরে ইসলামী আন্দোলন নোয়াখালী জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ফয়জুল করীম বলেন, ‘‘৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে কেউ (শেখ হাসিনা) সরকার গঠন করে। তারপর সংবিধানকে নিজেদের খেলার মাঠ বানায়। এটা চলতে পারে না। ৪০ শতাংশ ভোটের সরকার হলে বাকি ৬০ শতাংশ ভোটের মূল্য কোথায়?’’
তিনি বলেন, ‘‘আগামীতে পরীক্ষিত দুর্নীতিবাজ, খুনি ও জুলুমবাজদের ক্ষমতায় নেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ নিজেদের দেশের মালিক আর জনগণকে তাদের দাস মনে করত। তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বললেই গুম, খুন করেছে। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আছে জানিয়ে জনগণকে মিথ্যে গল্প শুনিয়েছে। অথচ দেশের কোনো ব্যাংকে টাকা নেই। সব টাকা তারা পাচার করেছে। বৈদেশিক ঋণের চাপে দেশের অগ্রযাত্রা থমকে যাচ্ছে।’’
ঢাকা/সুজন/রাজীব