একসময় মাঠের নিচে দাঁড়িয়ে গোটা দেশের স্বপ্নকে আগলে রেখেছিলেন তিনি। এখন সেই মানুষই দাঁড়াচ্ছেন অন্য এক ময়দানে। যেখানে বল নয়, প্রতিপক্ষ হলো রাজনৈতিক প্রতিকূলতা, জনআকাঙ্ক্ষা আর সময়ের চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের এক অনন্য নাম, সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি গোলরক্ষক ‘আমিনুল হক’ এবার আনুষ্ঠানিকভাবে নাম লিখিয়েছেন রাজনীতির সবচেয়ে কঠিন প্রতিযোগিতায়- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন- ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন আমিনুল হক। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই যেন নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। একজন ফুটবল নায়কের, যিনি এখন রাজনীতির লড়াইয়ে নামছেন দেশ ও মানুষের জন্য।

আরো পড়ুন:

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই নেতা

পাবনায় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মতবিনিময় 

একসময় জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেশের গর্ব ছিলেন আমিনুল। গোলবারের নিচে তার প্রতিটি ডাইভ ছিল যেন একেকটি প্রার্থনা- বাংলাদেশের জয়। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে তার অসাধারণ গোলরক্ষার কল্যাণেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে তিনি শুধু একজন ফুটবলার নন, ছিলেন গোটা জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। পরবর্তীতে তার অধিনায়কত্বে এসএ গেমসেও স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ।

ক্লাব ফুটবলেও তার পদচিহ্ন বিস্তৃত। আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ জামাল- যেখানেই খেলেছেন, সেখানেই রেখে গেছেন অনন্য ছাপ। গোলকিপার হিসেবে তার ক্ষিপ্রতা, ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আর নেতৃত্বগুণ তাকে পরিণত করেছিল কিংবদন্তিতে।

ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০১৩ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় হন আমিনুল হক। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ফুটবলের চেয়ে রাজনীতির মাঠ অনেক কঠিন।” কথাটি বলেছিলেন অভিজ্ঞতার গভীরতা থেকেই। কারণ মাঠে প্রতিপক্ষ এগারোজন, কিন্তু রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ অগণিত। তবুও পিছু হটেননি তিনি। মাঠে যেমন দলকে জেতাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, রাজনীতিতেও ঠিক তেমনই সংগঠনের ভরসা হয়ে উঠেছেন।

প্রথমে বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দলের নেতৃত্বে যুক্ত হন। এরপর দায়িত্ব নেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব হিসেবে। বর্তমানে তিনি সেই শাখার আহ্বায়ক। যেখানে তিনি কেবল নেতৃত্বই দিচ্ছেন না, কর্মীদের মাঝে হয়ে উঠেছেন প্রেরণার প্রতীক।

তবে রাজনীতির পথ কখনোই মসৃণ ছিল না তার জন্য। আন্দোলন-মিছিল, মামলা-হামলা আর গ্রেফতারের মধ্য দিয়েই এগিয়েছে তার পথচলা। একাধিকবার কারাভোগ করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই ফিরে এসেছেন আরও দৃঢ় হয়ে, আরও বেশি জনসংযোগ ও সহানুভূতির বার্তা নিয়ে।

ফুটবল মাঠে তিনি ছিলেন শেষ প্রহরী, শেষ মুহূর্তে রুখে দিতেন গোল। এখন রাজনীতির মাঠেও যেন একই ভূমিকায়; প্রতিরোধ, স্থিরতা আর আশার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার জীবনকাহিনি প্রমাণ করে, নেতৃত্ব কেবল কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার ক্ষমতা নয়; নেতৃত্ব হলো মানুষকে নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি, যা তিনি ফুটবল মাঠে যেমন পালন করেছেন। এখন করতে চান দেশের মাটিতেও।

বাংলাদেশের ক্রীড়া অঙ্গনের এক গর্বিত নাম আজ রাজনীতির অঙ্গনে নতুন এক অধ্যায় শুরু করছেন। হয়তো এই মঞ্চেও তিনি একদিন জয় করবেন মানুষের ভালোবাসা, আস্থা আর শ্রদ্ধা। কারণ আমিনুল হক জানেন, খেলার মাঠ কিংবা রাজনীতির মঞ্চ- জয় সবসময় তাদেরই হয়, যারা শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত লড়ে যায়।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ফ টবল ন আম ন ল র জন ত র ব এনপ র ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এতে একজন শিক্ষকসহ হোটেলের দুই কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম শিপন মিয়া (৩০)। তিনি বড়িকান্দি ইউনিয়নের নুরজাহানপুর গ্রামের মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক মিয়ার ছেলে। নবীনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই দুজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে।

গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিরা হলেন বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন (৩৮) এবং হোটেলের দুই কর্মচারী—উপজেলার আলমনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ইয়াসিন মিয়া (২০) ও চরলাপাং গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে নুর আলম (১৮)। এমরান উপজেলার শ্যামগ্রামের মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁর ভাই ঢাকায় কর্মরত পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেন।

বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মনেক ডাকাত এলাকাটা শেষ করে ফেলেছেন। তাঁর কারণেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। মনেক ডাকাতদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে মনেক ডাকাতের ছেলে নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় মোন্নাফ মিয়া ও তাঁর ছেলে শিপনের দীর্ঘদিন ধরে একক প্রভাব ছিল। তাঁদের সঙ্গে একই এলাকার থোল্লাকান্দি গ্রামের মিস্টার মিয়ার ছেলে আরাফাত মিয়ার বিরোধ চলছিল। শনিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে শিপন মিয়া আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আরাফাতের নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি দল হোটেলে ঢুকে গুলি চালায়। এতে শিপনসহ হোটেলের দুই কর্মচারী ইয়াসিন ও নুর আলম গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার পর আরাফাত ও তাঁর সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।

শিপনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নুরজাহানপুরে পৌঁছালে মোন্নাফ মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক গণি শাহ মাজারের অদূরে তালতলায় এমরান হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালান। সেখানে এমরান গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁরা থোল্লাকান্দি গ্রামে হামলা চালিয়ে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রাতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালালেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ, উভয় পক্ষের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ কাউকেই শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়নি। তাঁদের হয়তো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিপনের ওপর হামলাকারী আরাফাত থোল্লাকান্দি গ্রামের এমরান হোসেনের আত্মীয়। এ কারণেই এমরানের কার্যালয়ে গিয়ে হামলা এবং তাঁকে গুলি করা হয়েছে।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিপন ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। শিপন ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে। ওই ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • কৃষি বিবর্তনের গল্প বলে যে জাদুঘর
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • একসময় ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যৎ তারকা, এখন ক্লাব খুঁজে বেড়াচ্ছেন