মাদারীপুরে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে গণপিটুনি
Published: 24th, January 2025 GMT
মাদারীপুরে কামাল মাতুব্বর (৫৫) নামে এক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আসামি কামাল মাতুব্বরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলায় হাজিরা দিতে তিনি বৃহস্পতিবার আদালতে যান। পরে লোকজন তাকে ধরে এনে পুলিশে দেয়। তিনি সব মামলায় জামিনে আছেন। আদালতের রি-কল দেখে তাকে পরিবারের জিম্মায় বৃহস্পতিবার রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির কারণে তিনি আমাদের জিম্মায় ছিলেন।”
মারধরের শিকার কামাল মাতুব্বর ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের মৃত কাদের মাতুব্বরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও প্রতিরোধ দমন আইনে একাধিক মামলায় রয়েছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর
বগুড়ায় আলু ঘাটি নিয়ে মারামারি, থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কামাল মাতুব্বরকে কিছু লোক ঘিরে ধরে মারধর করছেন। পরে তারা তাকে মাদারীপুর সদর থানায় সোপর্দ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাদারীপুরের শতাধিক যুবককে উন্নত জীবন ও ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখান কামাল মাতুব্বর। তাদের লিবিয়া দিয়ে অবৈধপথে ইউরোপের দেশ ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। লিবিয়ায় নেওয়ার পর তাদের আটকে রেখে দফায় দফায় নির্যাতন করেন। পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাজীব মাতুব্বর, নিজাম, তাইফুল, তাহের, মুজাম হাওলাদর, শাহাবুদ্দিন ও তারেক মাতুব্বরকে ইতালি নেওয়ার স্বপ্ন দেখান কামাল মাতুব্বর। তিনি তাদের পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৩-১৪ লাখ টাকা নেন। এরপরে এই যুবকদের তিনি লিবিয়ায় নিয়ে যান। কথা ছিল, সেখান থেকে তাদের ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে। তবে, লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর এই যুবকদের মাফিয়াদের হাতে তাদের তুলে দেন মানবপাচারকারী কামাল মাতুব্বর। লিবিয়ার মাফিয়ারা বন্দিশালায় আটকে রেখে যুবকদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে পরিবারকে নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে ২০-৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মাফিয়া ও মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা।
ভুক্তভোগীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বৃহস্পতিবার কামাল মাতুব্বর মাদারীপুর আদালতে হাজিরা দিতে আসবেন। কামাল মাতুব্বর হাজিরা দিতে গেলে ভুক্তভোগীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে তাকে গণপিটুনি দিয়ে আটক করে মাদারীপুর সদর থানায় সোপর্দ করেন।
ভুক্তভোগী রাজীব মাতুব্বর বলেন, “কামাল মাতুব্বর লিবিয়া পাঠিয়ে আমাকে একটা অন্ধকার ঘরে এক মাস আটকে রেখে নির্যাতন করে। আমার পরিবার থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। মুক্তিপণের টাকা দিয়ে কোনোমতে বেঁচে ফিরে এসেছি। আমি মানবপাচারকারী কামাল মাতুব্বরের শাস্তি চাই।”
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর ম নবপ চ র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩