দেশে একশটি নতুন গ্যাস কূপ খনন করা হবে: জ্বালানি সচিব
Published: 24th, January 2025 GMT
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্যাসের সংকট কমাতে আগামী দুই বছরে সারা দেশে ১০০টি নতুন গ্যাস কূপ খনন করা হবে। পুরোনো ৩১টি গ্যাস কূপ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে নতুন আবাসিক সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না, উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যারা অর্থ দিয়েছেন, তারা সেই অর্থ ফেরত নিতে পারেন।”
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে জামালপুরের মাদারগঞ্জের তারতাপাড়া গ্রামে জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, মজুতের জায়গার স্বল্পতা থাকায় বৃহৎ আকারে গ্যাস আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকার গ্যাস মজুতের জায়গা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। জামালপুরে এই প্রকল্পে গ্যাস পাওয়া গেলে তা যমুনা সার কারখানায় দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
জামালপুরের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৮ কোটি টাকা। প্রায় ৩০০০ মিটার খননের পর ৪০০ বিসিএফ গ্যাস পাওয়া গেলে ভোক্তা পর্যায়ে এর বাজার মূল্য দাড়াবে ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন যুক্ত হবে ১০ এমএমএম সিএফ গ্যাস।
এর আগে ১৯৮০ সাল ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ সালে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের তারতাপাড়া এলাকায় সাইসমিক জরিপে গ্যাস সন্ধানের তথ্য মেলে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করে কূপ খননের কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই কূপ থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে ২৫ থেকে ৩০ বছর।
ঢাকা/শোভন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক প খনন প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার ও সংস্কারে কোন পর্যন্ত অগ্রগতি ‘পর্যাপ্ত’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ব্রিটেন সফর স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেখানে সৃষ্ট রাজনৈতিক সমঝোতার পথ ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারলে ঈদুল আজহার আগের দিন জাতীয় নির্বাচনের পরিবর্তিত সময়সীমা ঘোষণার পরও ‘সংকট’ যখন কাটেনি, তখন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল সবাই। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী এ দেশের ভবিষ্যৎ জানতে আগ্রহী আন্তর্জাতিক মহলগুলোও নিশ্চয় চাইছিল, সেখান থেকে সুস্পষ্ট বার্তা আসুক। অভিন্ন আগ্রহ ছিল বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও।
আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যেই নির্বাচন হবে– ‘যৌথ বিবৃতি’তে এমন কথা কিন্তু নেই। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ওই সময়ে নির্বাচন করা যেতে পারে বলে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। এটাই হলো খবর। শুধু মুহাম্মদ ইউনূস এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন, তা নয়; তারেক রহমানও হয়েছেন। আমরা জানি, তারেক রহমান রাজধানীতে আয়োজিত এক বড় জমায়েতে লন্ডন থেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন– ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। তাতে ওই দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন-সংঘাতের শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। লন্ডন বৈঠকে তিনি ডিসেম্বর থেকে আরও কিছুদিন পিছিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্মত হলেন। সে অর্থে ‘ছাড়’ এসেছে উভয় দিক থেকেই।
জুনে তো নয়ই; এপ্রিলেও প্রাকৃতিকসহ নানা কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন ছিল। সেসব নিয়ে এর মধ্যে যথেষ্ট কথাবার্তা হয়েছে। সরকারপক্ষ এসব জানত না– তা মনে করার কারণ নেই। এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে তারা হয়তো সেটাকে দরকষাকষির উপকরণ করতে চেয়েছে। ডিসেম্বরের পর, রমজানের আগ দিয়ে নির্বাচন হলে মাঠে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি যে মেনে নেবে; এটাও শোনা যাচ্ছিল। জামায়াতে ইসলামীর আমিরও মাঝে বলেছিলেন, ওই সময়ে নির্বাচন হতে পারে। ‘হওয়া দরকার’ কথাটাও সম্ভবত বলেছিলেন। লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসে তিনি সেটা বলেছিলেন বলে তা বিশেষ গুরুত্বও পেয়েছিল।
মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) গুরুত্ব পাচ্ছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণরা সামনের কাতারে আছেন বলে। তাদের কেউ কেউ এখনও অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন। লন্ডন বৈঠক বিষয়ে এ দুই দলের প্রতিক্রিয়ায় মিল-অমিল দুটোই আছে। বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখলেও তারা ‘বিদেশের মাটিতে’ বসে নির্বাচনের নতুন সম্ভাব্য সময়ের ব্যাপারে যৌথ বিবৃতি প্রদানকে ভালোভাবে নেয়নি।
জামায়াত মনে করে, প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে কথা বলে বিষয়টি স্পষ্ট করলে ভালো হতো। তবে মনে হয় না, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে দলটি অখুশি হবে। ‘পরিবর্তিত বাস্তবতা’ বুঝতে পারছেন জামায়াত নেতারা। সেটা বুঝতে পারলেও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এনসিপির। তারা বলছেন, লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয় গুরুত্ব পায়নি। গুরুত্ব পেয়েছে নির্বাচন।
বিচার ও সংস্কারে পর্যাপ্ত অগ্রগতির কথা যৌথ বিবৃতিতে কিন্তু স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এ প্রশ্নে পুরো ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। বিএনপিও তেমন ছাড় চাইছে বলে মনে করার কারণ নেই। তবে ‘পর্যাপ্ত অগ্রগতি’ স্পষ্ট হতে হবে। কোন পর্যন্ত অগ্রগতিকে আমরা ‘পর্যাপ্ত’ বলব?
আগামী মাসের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ হয়ে যাওয়ার কথা, যেটা সংস্কার সম্পর্কিত। ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ তৈরির এজেন্ডাও রয়েছে। মাঝে মতবিরোধের কারণে দ্বিতীয়টির কাজ ঝুলে যায়। জুলাই সনদ ঝুলে যাওয়ার অবশ্য কারণ নেই। সংস্কারের বাছাইকৃত সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এতে প্রকাশ পাবে। একমত হওয়া সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেটাও জানা যাবে তখন। অন্তর্বর্তী সরকারও বলছে, কিছু সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে পরে– নির্বাচিত সরকারের আমলে। অভিযুক্তদের বিচারকাজও বর্তমান শাসনামলে শেষ হবে না– এটা নিশ্চিত। তবে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলার বিচারিক নিষ্পত্তি হতে পারে এরই মধ্যে। সেগুলোর চূড়ান্ত নিষ্পত্তিও সম্ভব নয় বলে মনে হচ্ছে।
বাড়তি সংস্কার ও বিচার সম্পন্নের ব্যাপারে অগত্যা নির্বাচিত সরকারের ওপরেই আস্থা রাখতে হবে। তারা এ দুই প্রশ্নে আন্তরিক না হলে কিছু করার থাকবে না, তাও নয়। সমালোচনা, এমনকি সে প্রশ্নে আন্দোলন রচনার প্রয়োজনীয়তা তখন সামনে আসবে। বিদ্যমান বাস্তবতায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কারা জিতবে– সে বিষয়ে সবারই স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। এটাকেও বাস্তবতা বলে মানতে হবে। এটি এড়ানো বা প্রতিহত করার চিন্তা কোনো কোনো মহলে থাকলেও দেশের ব্যাপক মানুষ সে ধারায় নেই। নিকট অতীতে তিন-তিনটি জাতীয় নির্বাচনে তারা আগ্রহভরে অংশ নিতে পারেনি সেগুলোর চরিত্র দেখে। একটি সত্যিকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মুখিয়ে আছে তারা। তা ছাড়া এমন ধারণা রয়েছে, নির্বাচিত সরকার এলে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। অনিশ্চয়তা কাটবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও হবে গতিশীল। কাজের সুযোগ ও রোজগার বাড়বে।
শেখ হাসিনা সরকার যে জায়গায় দেশটা রেখে গেছে, সেখান থেকে টেনে তোলার জন্য সংস্কার, এমনকি সংবিধানের কিছু সংস্কার জরুরি বৈকি। লন্ডন বৈঠকে সে বিষয়ে কিছু ‘বাড়তি সম্মতি’ কি আদায় করতে পেরেছেন মুহাম্মদ ইউনূস? এ প্রশ্নও জরুরি। কেননা জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের তুলনায় এ ক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে বিএনপি। সত্যি বলতে, নির্বাচন-সংক্রান্ত ‘জরুরি সংস্কার’ সেরে দ্রুত গণতন্ত্রে উত্তরণের দিকে যেতেই তারা আগ্রহী।
অন্তর্বর্তী সরকারও অনেক মূল্যবান সময় ব্যয় করে ফেলেছে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা ও আলাপ-আলোচনায়। আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে তাদের কিছু উদ্যোগ জটিলতাও সৃষ্টি করেছে। রুটিন তথা প্রতিদিনের কাজগুলোও সুসম্পন্ন করতে পারছে না সরকার। এ অবস্থায় ‘সংস্কারে বিশ্বাসী’ হলেও তার পক্ষে এ নিয়ে দরকষাকষি করা কঠিন– সেটাও বোধগম্য।
লন্ডনের ‘একান্ত বৈঠকে’ মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে আর কোন কোন বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানার আগ্রহ আছে অনেকের। কিন্তু সাধারণ কারও পক্ষে সেগুলো জানা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় অনুমান আর জল্পনা চলতে থাকবে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, দু’পক্ষের দূরত্ব কমে এসেছে এরই মধ্যে। সেনাপ্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দূরত্বও মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। এর পেছনেও ছিল নির্বাচনের অস্পষ্ট সময়সীমাসহ কিছু ইস্যু।
বিচার ও সংস্কারকে ‘চলমান প্রক্রিয়া’ হিসেবে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দিকে যেতে পারলে কোনো কিছুই বাধা হিসেবে থাকবে না। বড় এ লক্ষ্য অর্জনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই বিবেচনায় নিতে হবে বাস্তবতা। এতে কোনো পক্ষকে হয়তো একটু বেশি ছাড় দিতে হবে। দিনের শেষে জাতি জয়ী হলে সেটা পুষিয়ে যাবে নিশ্চয়ই।
হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলাম লেখক