দিনের পর দিন ছোট একটি কামরায় বন্দি রেখে মারধর করা হয়েছে। নানা কৌশলে আদায় করা হয়েছে মুক্তিপণের টাকা। এভাবেই কেটে গেছে তিনটি বছর। বাঁচার জন্য আকুতি ছিল ছেলেটার; কিন্তু বাঁচতে পারল না। দফায় দফায় ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও এলো তার মৃত্যুর খবর।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার খোঁয়াজপুর ইউনিয়নের পখিরা গ্রামের নাজিম উদ্দিন মহাজন। তিনি রাকিব মহাজনের বাবা। বুধবার রাতে রাকিবের মৃত্যু সংবাদ পান তিনি। এরপর থেকে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম।
রাকিবের মতো হাজারো যুবককে ইতালি পাঠানোর কথা বলে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। গেল বছর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জেলার শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। পাঁচ শতাধিক দালালের বিরুদ্ধে ২০০ মামলা হয়েছে। মামলায় জামিন পেয়ে তারা আবার দালালিতে যুক্ত হয়। ভয়ংকর এ দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার মো.
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, টগবগে যুবক রাকিব মহাজন। তিন বছর আগে সদর উপজেলার পখিরা গ্রামের জাহাঙ্গীর মৃধা তাঁকে ইতালি পাঠানোর স্বপ্ন দেখায়। পরিচয় করিয়ে দেয় ভায়রা শরীয়তপুর সদর উপজেলার ধানুকা ইউনিয়নের ছোট বিনোদপুর গ্রামের সোহাগ মাতুব্বরের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে ২৭ লাখ টাকায় চুক্তি করে ২০ বছর বয়সে ইতালি যাবেন। দালালের সঙ্গে লিবিয়ায় পাড়ি জমান রাকিব। সেখানে নিয়ে তাঁকে আটকে ফেলা হয়। কথিত গেমঘরে (টর্চার সেল) রেখে আরও টাকা আদায় করতে দিনের পর দিন নির্যাতন চালাতে থাকেন সোহাগ মাতুব্বর। পরে রাকিবের বাবা নাজিমউদ্দিন ধারদেনা করে আরও ৫ লাখ টাকা দেন সোহাগকে। তাতেও কাজ হয়নি। এভাবে দুই বছর চার মাস পেরিয়ে যায়। অসহ্য যন্ত্রণায় দিন পার করতে থাকেন রাকিব। কৌশলে সোহাগের গেমঘর থেকে বেরিয়ে যান। পড়েন আরেক দালাল মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাম্বনদী গ্রামের মাজেদ খলিফার খপ্পরে। তাঁকেও গত ৮ মাস আগে ১৫ লাখ টাকা দেয় রাকিবের পরিবার। তিনিও টাকা নিয়ে আরও টাকার জন্য নির্যাতন চালান। এক পর্যায়ে রাকিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর দালাল মাজেদ খলিফাই রাকিবের পরিবারকে জানান। পরিবারের কাছে মৃতদেহের ছবি ও ভিডিও পাঠান।
রাকিবের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নির্মম নির্যাতনে জড়িত দালালদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন স্বজনরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দালাল জাহাঙ্গীর মৃধা। তিনি বলেন, ‘রাকিবকে বিদেশে পাঠিয়েছে সোহাগ। সে আমার ভায়রা হয়। তাই আমাকে জড়ানো হচ্ছে। অথচ আমি যে টাকা নিয়েছি, এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। লেনদেনের সময়ও ছিলাম না। রাকিব অসুস্থ হয়ে লিবিয়ায় মারা গেছে। সোহাগ বরং তার চিকিৎসা করেছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’
এদিকে রাকিবের মৃত্যুর সংবাদ জানার পরে দালাল মাজেদ খলিফার পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ কারণে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল র ন র পর পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা
ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।
ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।
ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।
গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে। এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।