Samakal:
2025-11-03@07:32:26 GMT

সরিষা ক্ষেতের কাঁটাকাঙালি

Published: 24th, January 2025 GMT

সরিষা ক্ষেতের কাঁটাকাঙালি

কাঁকালভরা কাঁটা, এমন দৃষ্টিনন্দন গাছ পৃথিবীতে বিরল। লাইন ধরে জন্মানো এ গাছ দেখার জন্য বহুবার রেলসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে গেছি আমি। বাসার পেছনে রান্নাঘর থেকে নিষ্কাশিত ছাইয়ের গাদায় জন্মাতো শৈশবের এই গাছ; গলা সমান লম্বা। গাছের মাথায় হলুদ ফুল ফুটলে তা থেকে অদ্ভুত মৃদু একটা সুবাস ছড়িয়ে পড়ত। খেলার সঙ্গী ছোট বোন হাত বাড়িয়ে এই ফুল চাইত, কিন্তু রাশি রাশি কাঁটার কারণে একটুও কাছে যেতে পারতাম না। ব্যর্থতার গ্লানিতে একসময় কঞ্চি দিয়ে গাছের গায়ে আঘাত করতাম আমরা; ফলে আহত গাছের কাণ্ড থেকে বের হয়ে আসত হলুদ রঙের কষ।
হলুদ রঙের কষ বের হয় বলে অনেকে একে স্বর্ণক্ষীরী বলেন। স্বর্ণক্ষীরী নামটির উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন সংহিতায়। তবে এটি সেই গাছ নয়, ২০০০ বছর আগেকার রচিত আদি চরকের নয়। প্রকৃত স্বর্ণক্ষীরী গাছটি গার্সিনিয়া মরেলা। আলোচ্য শিয়ালকাঁটা ‘আর্গেমনি মেক্সিকানা’ গাছটি বিদেশি, মেক্সিকোর। কেউ কেউ মনে করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পর্তুগিজরা ১১ শতকে এই গাছ প্রবর্তন করেছে ভারতবর্ষে। গাছকে সঙ্গে আনার সম্ভাব্য কারণ, সিফিলিস রোগগ্রস্ত পর্তুগিজদের জন্য দ্রুত উপশমকারী ওষুধ ছিল এই গাছের হলুদ স্বর্ণক্ষীর। বর্তমানে আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনসহ বহু দেশে এই ভেষজের বিস্তার ঘটেছে– কোথাও ওষুধ, কোথাও বা আগাছা হিসেবে।
কুষ্টিয়া-যশোর অঞ্চলে এ গাছের আঞ্চলিক নাম ‘কাঁটাকাইংলি’ অর্থাৎ কাঁটাকাঙালি। শরীরভর্তি কাঁটা অথচ কাঁটার কাঙাল, সাহিত্যরসসমৃদ্ধ এ এক অনুপম ব্যঙ্গার্থক নাম। বাংলায় সর্বাধিক প্রচলিত এর শিয়ালকাঁটা নামকরণের কী কারণ তা জানা যায় না। 
অতি উপকারী, টবে রাখা দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী সর্পিল গাছ সানসেভিরিয়া ট্রাইফাসকিয়েটাকে বলা হয় ‘মাদার-ইন-ল’জ টাং’। শাশুড়ির প্রতি এমন অসম্মান গ্রহণ করতে রাজি নই আমরা। কৃষ্ণচূড়ার লাতিন নাম ডিলোনিক্স রিজিয়ার অর্থ দাঁড়ায় ‘রাজোচিত নখর’। অ্যাবরোমা অগাস্টার ফুল গাছের ডালে উল্টো কমলের মতো ঝুলে থাকে বলে একসময় এর যুক্তিগ্রাহ্য নাম ছিল ‘উল্টোকমল’। জিহ্বা ও কালের কশাঘাতে সেই নাম বদলে গিয়ে হয়েছে ‘উলটকম্বল’, যা প্রহসনমূলক। ইংরেজিতে শিয়ালকাঁটার সাধারণ নাম ‘মেক্সিকান পপি’। লাতিন নাম আর্গেমনি মেক্সিকানার মধ্যে মৃদু সমস্যা রয়েছে। কার্ল লিন্নিয়াস যখন এর দ্বিপদী বৈজ্ঞানিক নাম করেন তখন মনে করা হয়েছিল, এটি এক ধরনের ‘ভূমধ্যসাগরীয় পপি’ এবং এর দ্বারা চোখের চিকিৎসা করা হতো। এর জাতিগত নামে ‘আর্গেমনি’ যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ চোখের ছানি বা সাদা স্পট।
শিয়ালকাঁটার তীব্র বিষাক্ত বীজ দেখতে অবিকল সরিষার মতো, যা থেকে ৩০-৪০ শতাংশ তেল উৎপাদিত হতে পারে। এ কারণে একে সূর্যমুখী তেল, তিল তেল ও প্রধানত সরিষার তেলে ভেজাল দেওয়া হয়েছে বহুকাল ধরে। মিশ্রিত তেল ব্যবহারের কারণে অতীতে সারা ভারতবর্ষে, বিশেষত বাংলায় বেশ কয়েকবার মহামারি শোথ রোগ (এপিডেমিক ড্রপসি) দেখা দিয়েছে। এতে পা ফোলা, বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং চোখের গ্লুকোমা রোগ দেখা দিতে পারে; যা পরবর্তীকালে অন্ধ করে দিতে পারে মানুষকে। 
১৯২৬ সালে ভারতীয় গবেষক এসএন সরকার তেল থেকে মহামারি বিস্তারের বিষয়টি তুলে ধরেন; যাতে বিষাক্ত পদার্থ ‘স্যাঙ্গুইনারিন’ মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। বাংলা অঞ্চলে ১৯৩৫ সালে প্রায় সাত হাজার লোক এতে আক্রান্ত হয়ে দেড় হাজার প্রাণ হারান। গোয়ালিয়র, কনৌজ, লক্ষ্ণৌ ইত্যাদি এলাকায় ২০০০ সালের পরও মহামারি দেখা দিয়েছে।
সরিষা-ইলিশ আমাদের খুব প্রিয় একটি খাবার। নাম শুনলেই মনে হয় নাসিকায় সুঘ্রাণ এসে ঢুকছে। সেই উপাদেয় রান্নায় সরিষার ভেতর যে শিয়ালকাঁটার বীজ নেই তা আমরা কী করে জানব! এটি কোন মুল্লুক থেকে আমদানি করা সরিষা, সেটি জানাও কঠিন। জানার চেষ্টা করাও অকারণ সময়ক্ষেপণ। যে দেশেরই হোক, সরিষা ক্ষেতে এই গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মাতে পারে এবং খুব সহজেই মিশে যেতে পারে সরিষার সঙ্গে। এই বীজের বিষাক্ততা এত তীব্র যে, ১০০টা সরিষাদানার ভেতর শিয়ালকাঁটার মাত্র একটি দানা থাকলেও তাকে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। এ সমস্যার একটি সহজ সমাধান আছে। শিয়ালকাঁটার বীজ দেখতে সরিষার মতো হলেও এর ঘনত্ব একটু কম বলে জলের ওপর ভেসে থাকে। অতএব সরিষা-ইলিশ রান্নার আগে একটু জলে ডুবিয়ে নিয়ে ভেসে থাকা সরিষাগুলো ফেলে দিলেই দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। v
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এই গ ছ

এছাড়াও পড়ুন:

একসময় ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যৎ তারকা, এখন ক্লাব খুঁজে বেড়াচ্ছেন

একসময় তাঁকে মনে করা হতো রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যৎ তারকা। কলম্বিয়ার ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মনে করা হয় তাঁকে। কিন্তু সেই হামেস রদ্রিগেজ এখন পরের মৌসুমে খেলার জন্য ক্লাব খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

বয়স ৩৪ চলছে। ফুটবলারদের জন্য ত্রিশের ওপরের বয়স মানে ক্যারিয়ারের সায়াহ্ন চলে আসা। কিন্তু হামেস যেন আড়ালে চলে গেছেন একটু আগেই। ফলে ২০১৪ বিশ্বকাপের পর যাঁকে মনে করা হয়েছিল বিশ্ব ফুটবলের ভবিষ্যৎ তারকা, সেই প্রতিশ্রুতির খুব কমই প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর ক্যারিয়ারে।

এখন খেলছেন মেক্সিকান ক্লাব লিওঁতে। তবে আর্থিক দুর্দশার কারণে ক্লাব তাঁকে ছেড়ে দিচ্ছে মৌসুম শেষে। রদ্রিগেজকে তাই আবার নতুন ঠিকানা খুঁজতে হচ্ছে। গুঞ্জন আছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের কোনো ক্লাবে পাড়ি জমাবেন। আর সে ক্ষেত্রে সেটা হবে তাঁর ক্যারিয়ারের ১৩তম ক্লাব।

মেক্সিকোতে মাত্র এক বছর কাটানোর পরই লিওঁর সঙ্গে হামেস রদ্রিগেজের পথচলা শেষ হতে যাচ্ছে। ইএসপিএনের খবর, লিগা এমএক্স-এর এই দলটি ২০২৫ অ্যাপারচুরা টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর কলম্বিয়ান মিডফিল্ডারকে আর চুক্তির আওতায় রাখছে না।

এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ, লিওঁর আর্থিক টানাপোড়েন এবং দলের বাজে ফর্ম। কোচ ইগনাসিও আমব্রিজের অধীনে তারা কোনো ছন্দই খুঁজে পায়নি। বর্তমানে দলটি লিগ টেবিলের ১৭তম স্থানে। এ বছর জানুয়ারিতে রদ্রিগেজ লিওঁতে যোগ দেন, তখন তাঁর ইচ্ছা ছিল ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার। কিন্তু ক্লাবটি মালিকানার নিয়ম ভাঙার কারণে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়লে রদ্রিগেজের সেই স্বপ্নও ভেঙে যায়।

রদ্রিগেজের হাসিমুখ এখন অনেকটাই মলিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একসময় ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যৎ তারকা, এখন ক্লাব খুঁজে বেড়াচ্ছেন