খুলনা নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে গতকাল শুক্রবার রাতে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে এক তরুণকে হত্যা করেছে। নিহত অর্ণব কুমার সরকার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের ছাত্র। এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী কলেজের এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার জেরে গতকাল রাতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ জানায়, নিহত অর্ণব নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার আবু আহম্মেদ সড়কের বাসিন্দা ঠিকাদার নীতীশ চন্দ্র সরকারের ছেলে। তিনি গতকাল রাত ৯টার দিকে তেঁতুলতলা মোড়ে মোটরসাইকেলের ওপর বসে চা পান করছিলেন। এ সময় ৪-৫ জন সন্ত্রাসী এসে তাঁকে কুপিয়ে ও গুলি করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ৫ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে হত্যার কারণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, রাজশাহী কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র নিহত শিমুল শিহাব নগরীর মেহেরচণ্ডীর জামাল হোসেনের ছেলে। 

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান জানান, ক্যাম্পাস থেকে রাত ১১টার দিকে একটি ছেলেকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলে লুকাচ্ছিল। পরে জেরার মুখে মারামারি করে মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়। তাঁকে ‘ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট ব্রট ডেথ’ হিসেবে পেয়েছেন। শরীরের বাইরের অংশে ক্ষত পাওয়া যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কয়েকজন ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা দেখি, আমাদের সামনে দিয়ে একজন খুব জোরে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পেছনে একটা মেয়ে ছিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর ছেলেটি মোটরসাইকেলসহ রাস্তায় পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি জ্ঞান হারান। তাঁর শরীরে তেমন আঘাত লাগেনি। আশপাশের শিক্ষার্থীরা তখন তাঁর মাথায় পানি দেন। পরে প্রক্টর এসে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখন মেয়েটি বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হয়।’
এ ঘটনায় মেয়েটির দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। ছেলেটি গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন বলে মেয়েটি জানান। সামনে প্রতিরোধক থাকলেও তিনি তা দেখতে পাননি। এ ছাড়া মাথায় রডের আঘাত লেগে থাকতে পারে।

প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুর রহমান বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে আমি ঘটনা জানতে পারি। আমাদের সহকারী প্রক্টর টহল দিচ্ছিলেন। তখন ক্যাম্পাসের ভেতরে শিমুল তাঁর মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে সায়েন্স ভবনের দিকে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। প্রক্টরের গাড়ি দেখে তারা মোটরসাইকেলে করে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওদিক দিয়ে রাস্তার কাজ চলছিল। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক সাজিদ হাফিজ বলেন, ‘ছেলেটিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের দাগ ছিল না। তবে গায়ে ধুলাবালি লেগে ছিল। তখন তাঁর শরীরে পালস ছিল না। পরে আমরা তাঁকে রামেকে পাঠাই।’

এ বিষয়ে নগরের মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক জানান, লাশে কোনো মারধর, ছেঁড়া-ফাটা কিংবা ক্ষত পাওয়া যায়নি। তাই সুনির্দিষ্টভাবে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। নিহতের পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারা মৌখিকভাবে দাবি করেছেন, তাঁকে মারধর করে মারা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তারা মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের সামনে আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, প্রক্টরের পদত্যাগ এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কার ও বিচারের দাবি জানান।

এ সময় তারা ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘তুমি কে আমি কে, বহিরাগত বহিরাগত’, ‘শিমুল ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শুভ নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘কেউ যদি অপরাধ করে থাকে, তবে তার জন্য প্রশাসন আছে। তাই বলে তাকে মেরে ফেলবে? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’

মাহিম নামের আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘এটা একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হলে কি আমরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারব না? সে জন্য আমাদের মেরে ফেলবে?’
রাত পৌনে ৯টায় কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন তারা। এ সময় আজ বেলা ১১টায় আবারও মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত নগর র ঘটন য় গতক ল ঘটন র এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা গ্রেপ্তার

সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম ওরফে অপুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জানে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাসহ আটক ৫২৬ জুলাই ২০২৫

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম জড়িত।

গত ১৭ জুলাই গুলশানে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেন আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন। তাঁরা শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সিদ্দিক আবু জাফর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। গত শনিবার রাতে চাঁদার বাকি টাকা আনতে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে রাজ্জাকসহ পাঁচজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বাকি চারজন হলেন ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। ঘটনাটিতে গুলশান থানায় মামলা করেছেন সিদ্দিক আবু জাফর। মামলার এজাহারে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের বাইরে অপু নামের একজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক চার আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আরেকজনকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুনপ্রথমে পুলিশ নিয়ে বাসায়, পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা ২৮ জুলাই ২০২৫

রাজ্জাক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম ও আবদুর রাজ্জাক উভয়কে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।

পুলিশ জানায়, শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার পর রাজ্জাকসহ কয়েকজন তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। নিজের ভাগের পাঁচ লাখ টাকা রাজ্জাক তাঁর বাড্ডার ভাড়া বাসায় (মেস বাসা) রাখেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ জন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ২ জন বহিষ্কার২৬ জুলাই ২০২৫

এর আগে গত বুধবার ডিএমপির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজ্জাকের একটি ভাড়া বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ৪টি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এটি বাসাটি পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় অবস্থিত বলে গতকাল জানায় গুলশান থানা–পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এই সোয়া দুই কোটি টাকার চেক নেওয়া হয় রংপুর-৬ আসনের (পীরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড জোন’ থেকে।

আরও পড়ুনসমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি: আবদুর রাজ্জাকসহ চারজন সাত দিনের রিমান্ডে২৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ