অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, এনজিওর কায়দায় নরম কথা বললে দেশ চলবে না। শাসকের কায়দায় কথা বলতে হবে।

নরম নরম কথা বললে এ দেশের মানুষকে শাসন করতে পারবেন না। নরমও লাগবে, গরমও লাগবে। তবে ইনসাফ ভিত্তিক নরম-গরম লাগবে। আর যদি জুলুম করেন, বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর চেষ্টাও করবেন না। এটা করলে আপনারা ভুল করবেন।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের শিল্পকলা একাডেমিতে ইসলামী আন্দোলনের জেলা ও মহানগরের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন চায় না এমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই। আমরা সবাই নির্বাচনমুখী। তবে নির্বাচন কবে দেবেন, কালকে?

আগামীকাল যদি নির্বাচন দেন সেটা কি সুষ্ঠু হবে? গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে কি লাভ হবে? সংস্কারের আগে যদি নির্বাচন দেন সেই নির্বাচন তো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মানুষের আশা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে না।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে অনেকের জামিন হয়ে যাচ্ছে। কোর্ট তো সেই আগের কোর্ট। জজ তো সেই আগের জজ আছেন।

তাহলে এখন কীভাবে জামিন হচ্ছে। আবার অনেক আওয়ামী লীগের লোক গ্রেপ্তার হয়ে জামিনের জন্য মুভ করতে পারছে না। বিচারক কার ইশারায় বিচার করেন। সরকারের ইশারায় এসব করে, এমনটা আমরা চাই না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন মানবতার জন্য সবার সঙ্গে ঐক্য করতে রাজি আছে। জামায়াতের আমির চরমোনাইয়ে অফিসিয়ালি যাননি। রবিশালে তার প্রোগ্রাম ছিল, সেখান থেকে চরমোনাই একেবারে কাছে ছিল। ফলে সেখান থেকে সাক্ষাৎ করার জন্য তিনি চরমোনাই গিয়েছিলেন। যেহেতু তিনি একজন মেহমান হিসেবে সেখানে গিয়েছেন, তাকে শ্রদ্ধা-সম্মান ও আতিথেয়তা করেছি। 

তবে সেখানে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। সেখানে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন আমির বলেছেন, ইসলামের পক্ষে একটা বাক্স দিতে চাই। যদি ইসলামের পক্ষে একটা বাক্স দেই, তাহলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ দেশের ৯২ শতাংশ লোক ইসলামের পক্ষে ভোট দেবে।

বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি কেন যে ছাত্রদের থেকে আলাদা হচ্ছে আমি জানি না। বিএনপির সাম্প্রতিককালের বক্তব্যের সঙ্গে আগের বক্তব্যের মিল নেই। তারা আমাদেরও ফ্যাসিস্টের সহকারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে বিতর্কিত কোনো নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন অংশগ্রহণ করেনি। জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনকে আমরা এক মনে করি না। 

বরং গত স্থানীয় নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করেছেন, কেউ নামে কেউ আবার বেনামে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা সরাসরি ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। সেই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর অনেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন। বিএনপির হাজারো উদাহরণ রয়েছে যারা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। 

কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন অংশগ্রহণ করেনি। সুতরাং কেউ যদি মনে করে ইসলামী আন্দোলন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল আমি মনি করি এটা তাদের তথ্যের ভুল রয়েছে। এই বক্তব্যটা দ্বিতীয়বার পর্যালোচনা করার দাবি জানাই।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, ঢাকা বিভাগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, জেলার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ দ্বীন ইসলাম প্রমুখ।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র জন ত ন র য়ণগঞ জ ইসল ম র ব এনপ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ডলার ও বিদেশিদের ব্যাংক হিসাবে আমানত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ

হঠাৎ করে দেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশিরাও দেশের ব্যাংকগুলোতে আগের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা জমা রাখছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে বিদেশি মুদ্রার যে হিসাব আছে, সেটিও বাড়ছে অন্যান্য আমানত হিসাবের চেয়ে বেশি। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় রক্ষিত আমানত বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও বিদেশি মুদ্রার বাইরে দেশীয় মুদ্রার আমানত হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূলত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব হিসাবে অর্থ জমা বেশি বেড়েছে। এর ফলে ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এটা শুরু হয়েছে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব ও বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কারণে।

আমানত কতটা বাড়ল

দেশের ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের আমানত পণ্য রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দেশি ও বিদেশিদের জন্য পৃথক আমানত পণ্য। বিদেশি মুদ্রার জন্য রয়েছে পৃথক আমানত পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিদেশিরা সাধারণত বিদেশি মুদ্রাকে টাকায় রূপান্তর করে এই ধরনের হিসাব পরিচালনা করেন, ব্যাংকের ভাষায় এসব হিসাবকে কনভার্টেবল টাকা অ্যাকাউন্ট অব ফরেনার্স বা বিদেশিদের জন্য টাকায় রূপান্তরযোগ্য হিসাব বলা হয়। ২০২৪ সালের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, গত মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবেও (এফসিএ) জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। গত ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই সাধারণ এফসিএ হিসাব খুলে থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ ধরনের হিসাব খুলতে পারেন।

এ ছাড়া শুধু প্রবাসীদের জন্য আলাদা আমানত হিসাবও রয়েছে, তাতে স্থিতি খুব বেশি বাড়েনি। গত বছরের মার্চে প্রবাসীদের আমানত হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে (আরএফসিডি) আমানতও বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে আমানত ছিল ২৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

তবে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত সেভাবে বাড়েনি। ২০২৪ সালের মার্চে পুরো খাতে আমানত ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয় ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি।

কেন বাড়ছে ডলার ও বিদেশিদের জমা অর্থ

দেশে ডলার–সংকট দেখা দেওয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মানুষের ঘরে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই ধরনের হিসাব খুলতে শুরু করে। বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ন, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি এবং দেশীয় মালিকানাধীন ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে। মার্কিন ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।

সুদ বৃদ্ধিসহ ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের ফলে ঘরে থাকা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এসব হিসাবে জমা বিদেশি মুদ্রার ওপর সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি এই ধরনের হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই হিসাব থেকে নগদ ৫ হাজার মার্কিন ডলার নেওয়া যায়। হিসাবধারী এবং তার ওপর নির্ভরশীলদেরও প্রয়োজনে বিদেশে কয়েকটি খাতে অর্থ খরচের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে খরচ। এসব খাতে খরচের কোনো সীমা রাখেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে শুধু হিসাবধারীরা নিজ প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ নেওয়া ও খরচের সুবিধা পেতেন।

এদিকে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে প্রবাসীদের জন্য। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের নামে খোলা বৈদেশিক হিসাবের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এত দিন শুধু অনুমোদিত চারটি বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের হিসাব খোলার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েন। কিন্তু এখন অনুমোদিত মুদ্রার পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য সব বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারছেন প্রবাসীরা।

এ ছাড়া যেসব বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত ও বসবাস করছেন, তাঁদের যে টাকার হিসাব রয়েছে, তাতেও আমানত বেড়েছে। এ ধরনের হিসাবে গত সেপ্টেম্বরে আমানত বেশ কমে যায়, তবে ডিসেম্বরে আবার তা বেড়ে যায়। আর গত মার্চ শেষে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টে বড় পরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে বিদেশিরা সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে ও এই ধরনের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক হিসাবে ডলার জমা রাখলে এখন সুদ পাওয়া যায়, এ ছাড়া রয়েছে নানা সুবিধা। যাঁরা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাঁরাও এখন নিজ নিজ হিসাবে ডলার জমা রাখছেন। এতে মুদ্রার মান কমলেও কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া চীনের বিনিয়োগকারীরা দেশে আসছেন। এই কারণে বিদেশিদের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়তে পারে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর। কারণ, অন্য আমানতে যখন এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, তখন ডলার হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ