চিত্রনায়িকা পরীমণি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এক দিনের মাথায় জামিন পেয়েছেন। সোমবার আত্মসমর্পণ করলে তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

হাজিরা শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন পরীমণি। এ সময় ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘শুরু থেকেই আইনের ওপর শ্রদ্ধশীল ছিলাম, এখনও আছি। আইনের ওপর বিশ্বাস ছিল। আর একদম শুরু থেকেই আপনারা সবাই যেভাবে আমাকে সাপোর্ট করেছেন, যতটা পেরেশানিতে ছিলেন—তা দেখে আমার নিজের যত দুঃখ ছিল, সেটা ঘুচে গেছে। সবাইকে ধন্যবাদ।’

পরীমণি আরও বলেন, ‘আমার আসলে এই মুহূর্তে কিছুই বলার নেই। কালকে (রোববার) থেকে আপনারা যেভাবে ভালোবাসা জানান দিয়েছেন আমাকে, এই ভালোবাসার প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমি ধন্য।’

শেষে পরীমণি বলেন, ‘আমি আইনের ওপর শ্রদ্ধাশীল। সেই বিশ্বাসটি একদম শেষ অবধি রাখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি ন্যায়বিচার পাব। আপনারা আমার পাশে থাকবেন। এই ভালোবাসা নিয়েই আমি জিততে চাই। আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে আজ যেমন বাড়ি ফিরছি, এ রকম একটা জয় নিয়েও যেন বাড়ি ফিরতে পারি। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

২০২২ সালের ৬ জুলাই পরী মণির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে আদালতে এ মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো.

মনির হোসেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরী মণি ও তাঁর কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, পরীমণি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহলসেবী। সুযোগ বুঝে তারা বিভিন্ন দামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন ও পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমণি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানির ভয় দেখান।

আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। বাদী ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত সোয়া ১টার দিকে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন, তখন পরী মণি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদী নাসির উদ্দিনকে ডাক দেন ও তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসার অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে একটি ব্লু লেবেল হুইস্কি বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ দেন। বাদী এতে রাজি না হওয়ায় পরীমণি তাকে গালমন্দ করেন। বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরী মণি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন ও হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে মারেন। এতে নাসির উদ্দিন মাথায় ও বুকে আঘাত পান।

মামলায় আরও বলা হয়, পরীমণি ও তার সহযোগীরা নাসির উদ্দিনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও ভাঙচুর করেছেন। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরী মণি সাভার থানায় বাদীসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

প্রসঙ্গত, একই বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর বনানী বাসা থেকে র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন পরী মণি। পরে বনানী থানায় দায়ের করা একটি মাদক মামলায় তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। দীর্ঘ ২৭ দিন পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার

প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা। 

কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।

মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ। 

এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা। 

কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে। 

কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। 

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ