যুক্তরাষ্ট্র সরকারে সংস্কার ও ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে আট মাসের বেতন দিয়ে কয়েক লাখ ফেডারেল কর্মীর পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে এ-সংক্রান্ত ই-মেইল পাঠানো হয়। তারা প্রস্তাব গ্রহণ করে বেতন গ্রহণ সাপেক্ষে পদত্যাগ করতে চান কিনা, সে বিষয়ে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে। 

গতকাল বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশা, কমপক্ষে ১০ শতাংশ ফেডারেল কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। হিসাব করলে এ সংখ্যা প্রায় ২ লাখের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীর আনুমানিক সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বেতন দিয়ে চাকরিচ্যুতির প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে সরকারের সাশ্রয় হবে ১০ হাজার কোটি ডলার। মার্কিন সরকারের মানবসম্পদ বিভাগের পারসনের ম্যানেজমেন্ট অফিস (ওপিএম) এ সংস্কার পরিকল্পনার দিকে নজর দিয়েছে। 

২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফেরেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে তিনি কভিড মহামারি সময়ে ঘরে বসে কাজ করার চর্চা বাতিল করেছেন। ওপিএম বলছে, কেবল পোস্ট অফিস, অভিবাসন, সামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া সব ধরনের পূর্ণকালীন চাকরিজীবীর জন্য এ প্রস্তাব প্রযোজ্য হবে। যারা প্রস্তাব গ্রহণ করবেন, তাদের ‘পদত্যাগ’ লিখে ই-মেইল পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে। 

ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল কর্মীদের সংগঠন এএফজিই। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এ ধরনের ‘শুদ্ধিকরণ’ পদক্ষেপের ব্যাপক ও অপ্রত্যাশিত ফলাফল রয়েছে, যা মার্কিনিদের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরাও এর সমালোচনা করছেন। দলটির সিনেটর টিম কেইন বলেন, এ ধরনের কিছু করার কোনো অধিকার ট্রাম্পের নেই। এ প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে পদত্যাগ করে ‘বোকা’ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প বারবার সরকারে কাটছাঁট করার কথা বলে আসছেন। তাঁর উপদেষ্টাদের মধ্যে ধনকুবের ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী অন্যতম।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের নতুন প্রেসিডেন্সি বাস্তবে মুখ থুবড়ে পড়বে। নির্বাহী ক্ষমতার ব্যবহার, কেন্দ্রীয় সহায়তা স্থগিত করাসহ তাঁর নানা পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ পড়েছেন বড় সংকটে। 

ট্রাম্পের প্রতি মার্কিনিদের আকর্ষণ ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরোধিতার প্রতিফলন। তিনি হয়তো বলতে পারেন, চমৎকার বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট পদে এসেছেন; পরিবর্তন করতেই পারেন। তথাপি নানা প্রশ্ন উঠছেই। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, ট্রাম্প একনায়ক হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করছেন। 

নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ

গাজায় গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। বুধবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, এতে ট্রাম্প আমলে নেতানিয়াহু হবেন হোয়াইট হাউসে সফর করা প্রথম কোনো বিদেশি নেতা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদত য গ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলকারনাইনের পাঁচ প্রশ্ন ও রিয়াদকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নতুন পোস্ট দিয়েছেন আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি।

আর্মি ক্যুর চেষ্টা এবং এনসিপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আড়িপাতা ও নজরদারির যে অভিযোগ এনেছেন নাহিদ, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সর্বশেষ পোস্টে পাঁচটি প্রশ্ন রেখে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন জুলকারনাইন।

তার পোস্টের প্রশ্ন পাঁচটি হুবহু এমন-
১. বিপ্লবের আগে ছাত্রশক্তির ঢাবি'তে লোকবল কত ছিলো? 
২. দেশের অন্য কোন-কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কমিটি ছিল?
৩. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের নাহিদ ইসলাম ৫ ই আগস্টের পূর্বে চিনতো কিনা? 
৪. কেবল মাত্র ছাত্র শক্তির বিপ্লব সংগঠিত করার মতো সাংগঠনিক কাঠামো ছিলো কিনা? 
৫. গুটিকয়েক সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী না জানালে সাদেক কায়েমের অবদানের কথা নাহিদ ইসলামরা জাতিকে জানাতেন কিনা?

আরো পড়ুন:

মানুষ পরিবর্তন চায়, এনসিপিকে চায়, নরসিংদীতে নাহিদ

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ 

এসব প্রশ্ন রাখার পর চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের বিষয়ে কথা বলেছেন জুলকারনাইন।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “পুনশ্চঃ নাহিদ ইসলাম, আপনার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, আমি বৈষম্যবিরোধী চাঁদাবাজ রিয়াদকে কোনো রকমের সার্ভেলেন্সে রাখি নাই। আর সে চাঁদা আনতে গিয়ে যে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেটা লাগানোতেও আমার কোনো ভূমিকা নাই।” 
তিনি লেখেন, “রিয়াদ যে আপনার শেল্টারে ছিল সেটা আমি জানতাম। পরে জানতে পারলাম, আপনার ও আপনার বাবার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা। আপনি আমার উপর ক্ষেপে গেছেন কারণ আপনাকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে যে রিয়াদকে ধরিয়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নাকি আমার।” 

“আমি দৃঢ়ভাবে আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই যে, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদকে পাকড়াও করার ঘটনায আমার কোনো হাত নাই।”

বৃহস্পতিবার সকালে নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শিবির নেতা সাদিক কায়েম ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ তুলে তাদের সমালোচনা করেন।

সাদিক কায়েমকে নিয়ে নাহিদ লেখেন, “শিবির নেতা সাদিক কাইয়ুম (কায়েম) সম্প্রতি একটা টকশোতে বলেছেন ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার। 'গুরুবার আড্ডা' পাঠচক্রের সাথে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সাথে জাবির একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে। আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সকল পক্ষের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহোযোগিতা করা মানে এই না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।”

তিনি আরো লেখেন, “দ্বিতীয়ত, সাদিক কাইয়ুম (কায়েম) বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিলনা। কিন্তু ৫ই অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কাইয়ুমকে প্রেস ব্রিফিং এ বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কাইয়ুমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিসে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম।”

“অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম। আর কারা ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা করতে চাইছে, গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে সে বিষয়ে অন্যদিন বলবো,” লেখেন নাহিদ।

জুলকারনাইনের বিরুদ্ধে আর্মি ক্যু করার চেষ্টা ও এনসিপির ওপর নজরদারি করার অভিযোগ তোলেন নাহিদ ইসলাম।

পোস্টে তিনি লেখেন, “২ অগাস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশ্য কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয় যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভিতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। ৫ অগাস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি।”

তিনি আরো লেখেন, “সায়েরগং ৫ অগাস্টের পর বারবার চেষ্টা করেছে আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে। সেক্ষেত্রে সাদিক কাইয়ুমদের ব্যবহার করেছে। এবং তারা ব্যবহৃতও হয়েছে। সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভাইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নাই হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে এ দেশের ইতিহাসে এরকম কখনো হইছে কিনা জানা নাই। কিন্তু মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টিকা যায় না। এরাও টিকবে না।”

নাহিদ ইসলামের এই পোস্টের পর এক বাক্যে প্রথম পোস্টে জুলকারনাইন লেখেন, “ছেলেটা কি সকাল সকাল গঞ্জিকা মেরে দিলো?” অবশ্য কিছু সময় পর পোস্ট মুছে ফেলেন তিনি। 

নাহিদের পোস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েমকে ট্যাগ করে পাল্টা পোস্ট দেন জুলকারনাইন। তিনি লেখেন, “জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলো এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ পর এখন পর্যন্ত যেই ছেলেটার নামে একটাও অসততার অভিযোগ আসেনি, তার নাম আবু সাদিক।”

“স্বাভাবিকভাবেই তাকে ও তার শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে অনেকে মুখরোচক চটকদার আলাপ তৈরি করবে। কিন্তু এসব আলাপ তৈরি করে কি নিজেদের গোপনতম সত্য লুকানো সম্ভব হবে?”, যোগ করেন তিনি। 

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ