এবার যুক্তরাজ্যের বাজার থেকে নিজেদের কোমল পানীয় প্রত্যাহার করে নিচ্ছে কোকা-কোলা। বোতলজাত এসব পানীয়তে ‘ক্লোরেট’ নামক রাসায়নিকের ‘উচ্চ মাত্রা’ শনাক্ত হওয়ার পর, কোকা-কোলা কোম্পানির বোতলজাতকরণ অংশীদার প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁগুলোতে পাঠানো কোকা-কোলা অরিজিনাল টেস্ট, কোকা-কোলা জিরো সুগার, ডায়েট কোক এবং স্প্রাইট জিরো ক্যান প্রত্যাহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুপারমার্কেটগুলোতে পাঠানো ৬ বাই ২৫০ মিলি অ্যাপলেটাইজার মাল্টিপ্যাকও প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

এবার যুক্তরাজ্যের এমপি পদ থেকে টিউলিপের পদত্যাগ দাবি

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের

গত সোমবার ইউরোপ জুড়ে কোকা-কোলার পণ্য প্রত্যাহারের পরে এই ঘোষণা এলো। 

কোকা-কোলা ইউরোপ্যাসিফিক পার্টনারস, যারা কোম্পানির বোতলজাতকরণের দায়িত্বে রয়েছে তারা বলছে, এই রাসায়নিকের কারণে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি খুবই কম।

কোকা-কোলার ৩২৮ জিই থেকে ৩৩৮ জিই পর্যন্ত উৎপাদন কোডের অধীন ক্যানগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। 

তবে কোম্পানিটি নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাজ্যে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ পণ্য, যার মধ্যে সাধারণ ক্যান, কাঁচের বোতল ও প্লাস্টিক বোতল অন্তর্ভুক্ত, এই প্রত্যাহারের আওতায় পড়ে না।

গত সোমবার বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ এবং নেদারল্যান্ডসে কোকা-কোলা পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করার পর এবার যুক্তরাজ্য থেকেও প্রত্যাহার করা হচ্ছে। 

বেলজিয়ামের গেন্ট শহরের উৎপাদন কেন্দ্রে নিয়মিত পরীক্ষার সময় ক্লোরেটের উচ্চ মাত্রা শনাক্ত হয় বলে এএফপি নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্লোরেট সাধারণত ক্লোরিন-ভিত্তিক জীবাণুনাশক ব্যবহার করে পানি পরিশোধন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সময় উৎপন্ন হতে পারে। উচ্চ মাত্রার ক্লোরেট শরীরে প্রবেশ করলে থাইরয়েডজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে, বিশেষ করে শিশু ও নবজাতকদের জন্য এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

এনএইচএস এবং ব্যক্তিগত পুষ্টিবিদ ক্যারন গ্রাজেট বলেন, আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কি এমন রাসায়নিক উপাদানযুক্ত সফট ড্রিংক গ্রহণ করতে চাই, যা আতশবাজি ও জীবাণুনাশক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যদিও তা খুবই সামান্য পরিমাণে? অতিরিক্ত ক্লোরেট গ্রহণ করলে বমি, ডায়রিয়া, রক্তের অক্সিজেন শোষণের ক্ষমতা হ্রাস এবং শরীরের অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে।

তবে কোকা-কোলা বলছে, গ্রাহকদের জন্য ঝুঁকি কম।

কোকা-কোলা ইউরোপাসিফিক পার্টনার্স জানিয়েছে, স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, এই পণ্যগুলো গ্রহণের ফলে সাময়িকভাবে অসুস্থ বোধের ঝুঁকি খুবই কম।

কোম্পানিটি একটি বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের পণ্যের গুণমান এবং সুরক্ষা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা দুঃখিত যে, এক্ষেত্রে আমাদের অল্প সংখ্যক পণ্য আমাদের উচ্চ মান পূরণ করতে পারেনি এবং এর ফলে যেকোনো অসুবিধার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ

তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।

আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।

আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।

বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্দোলনে রাজধানীতে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ যানজট, ডিএমপির দুঃখপ্রকাশ
  • বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ