পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতের বিভিন্ন সময়ে পৃথকভাবে শিক্ষার্থীরা এসব বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের খবরে থাকছে বিস্তারিত-

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)

বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় রাবির জ্বোহা চত্বরে শাখা জুলাই গণঅভ্যুত্থান মঞ্চ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এতে রাবির বিভিন্ন বিভাগের আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দেন, গণ অভ্যুত্থান মঞ্চের আহ্বায়ক জায়িদ জোহা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম আজম সাব্বির প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন, দেশ এখনো আওয়ামী লীগের তৈরি করা সংবিধানে চলছে। তাদের সে আইনে তারা এখনো বৈধ। দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ যে নির্যাতন নিস্পেষণ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে জুলাই বিপ্লবের পরে তারা যদি তাদের দলীয় কর্মকাণ্ড কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং একত্রিত হয়, তাহলে আমাদের জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্ত দেয়া বৃথা হবে। ৫ আগস্টের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছি।এই স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই ভুলূণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না।

তারা বলেন, আমরা এখানে কারো মুখ দেখে আসিনি। আওয়ামী লীগ যে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার প্রতিবাদ এবং তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করার জন্যে এখানে একত্রিত হয়েছি। আমাদের ক্ষোভ যারা এই এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং যারা এটা ঘোষণা করার সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের উভয়ের প্রতি। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ষড়যন্ত্রের লিপ্ত থাকলে আমরা তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব। এখনো রাজপথ ছাড়িনি, আমরা ২ হাজার শহীদের রক্তের বদলা নিয়েই ঘরে ফিরব। আমরা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়েই ঘরে ফিরব। এ দেশে কোন সন্ত্রাসীদের জায়গা হবে না।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাত ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে বিজয়-২৪ হলের গেটে গিয়ে সমাবেশ করেন তারা।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসাইন আবীর বলেন, “স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ আগামী ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে কর্মসূচি দিয়েছে। তারা জানে না, ৫ আগস্ট আমরা তাদের যেভাবে বিতাড়িত করেছি, একইভাবে এবাবো আমরা তাদের বিতাড়িত করব। আপনারা যেখানে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর, দালালদের পাবেন, সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেবেন। আমাদের নিরবতাকে তারা দুর্বলতা মনে করেছে। রাজপথে নেমে এলে তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না।”

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)

আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মসূচির প্রতিবাদে রাত ১০টায় ছাত্র হল প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সিকৃবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক হয়ে প্রশাসনিক ভবনের পাশে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিলে বিভিন্ন অনুষদের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।  

বিক্ষোভ-পরবর্তী সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সিকৃবিসহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে খুনি এবং স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগ ফিরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কোনভাবেই আসতে দেওয়া যাবে না। আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও অসীমের রক্তের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। যেখানেই ছাত্রলীগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সিকৃবিসহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।

তারা আরো বলেন, এখনো শহীদদের রক্তের দাগ শুকায়নি, সন্তানহারা মায়ের চোখের অশ্রু এখনো শুকায়নি, আমাদের অন্তরের ক্ষতও সারেনি। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগকে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন তারা পলাতক অবস্থায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। আমরা তা বাস্তবায়ন হতে দেব না। 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)

নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঘোষিত কর্মসূচির প্রতিবাদে মধ্যরাতে উত্তাল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)।

রাত সাড়ে ১১টায় মশাল হাতে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হল থেকে মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাচতে চাই’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কুত্তালিগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ছাত্র সমাজের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, খুনি হাসিনার দোসররা ১-৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বিতরণ ও ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জুলাই আন্দোলনের রক্তের দাগ এখনো শুকাইনি, তারা এরকম কর্মসূচি পালনের সাহস পায় কিভাবে? যশোরের আন্দোলন যবিপ্রবি থেকে শুরু হয়েছে, ছাত্রলীগের এমন পোস্ট ও কর্মসূচির বিরুদ্ধেও প্রথম আন্দোলন যবিপ্রবি থেকেই শুরু হয়েছে। আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

তারা আরো বলেন, জুলাই-আগস্টে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের উচিত সেই অবস্থান থেকে বের হয়ে ছাত্র-জনতার পক্ষে দাঁড়ানো। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের উপর কড়া নজরদারি রেখে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)

রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী মোড়, আলাওল ও এফ রহমান হল এবং পরিবহন দপ্তর ভবন প্রদক্ষিণ করে রেলওয়ে স্টেশনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সহ-সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ খালেদ বলেন, “ডিসেম্বরে স্বৈরাচার বাশার আল আসাদ পালানোর পর ৩৫ জনকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। বিগত ৬ মাসে বর্তমান সরকারের কোন বিচারিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। এজন্য আমরা রক্ত দেইনি। যদি সন্ত্রাসীদের বিচার করতে ব্যর্থ হন, তাহলে পদত্যাগ করুন; আমরা বিপ্লবী সরকার গঠন করব।”

তিনি বলেন, “আমরা ছাত্রলীগের মোকাবেলা করার জন্য চবিতে প্রস্তুত। যদি কোন শিক্ষক-কর্মচারী তাদের রক্ষা করতে চান, আমরা তাদের প্রতিহত করব। স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ ফ্যাসিবাদের কোন নাম নিশানা থাকতে পারে না।”

আরেক সমন্বয়ক আব্দুর রহমান বলেন, “আমাদের অসংখ্য ভাইবোনকে শহীদ করে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাঙ্গপাঙ্গরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা পলাতক থেকে ফেব্রুয়ারি জুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। তারা আসুক, তাদের বিচার করতে এ দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে। এ দেশে কখনো আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ফিরে আসতে পারবে না।”

গতকাল বুধবার (২৮ জানুয়ারি) আনুমানিক রাত ১০ টার দিকে আওয়ামী লীগ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করে। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের নজরে আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এবং তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন তারা। 

তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১-৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট ও প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান বন্দরে অবরোধ, ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ য কশন সরক র আওয় ম স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে আবার ইরানের হামলা, নাগরিকদের নেওয়া হলো সুরক্ষিত এলাকায়

ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ইরান নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের এক মুখপাত্রের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ হামলা ভোর পর্যন্ত চলবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি ও আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজের প্রতিবেদনেও নতুন করে ইসরায়েলে ইরানের হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। খবর-গার্ড়িয়ান

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি শহর তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত করেছে। এতে চলতি সপ্তাহের জি-৭ বৈঠকে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে যে, এই দুই আঞ্চলিক শত্রুর মধ্যে সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। 

নাগরিকদের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান: ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের হামলার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পর পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, ‌দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব। নাগরিকরা এখন দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যেতে পারে।

এর আগে রোববার সোমবার ভোরে ইসরায়েলে ইরানের হামলায় চারজন নিহত ও ৮৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। এছাড়া বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে।   

ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জরুরি পরিষেবা সোমবার জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজন মহিলা এবং দুজন পুরুষ, যাদের সকলের বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।

নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে: ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলায় শুক্রবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।

তেল আবিবের কাছে মধ্য ইসরায়েলি শহর পেতাহ টিকভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সেখানে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। কংক্রিটের দেয়াল পুড়ে গেছে। জানালা উড়ে গেছে। একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশটির জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর হাইফায় হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অনুসন্ধান চলছে। যেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

নতি স্বীকারের কোনোও ইচ্ছা নেই: ইরান
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটি ইসরায়েলে কমপক্ষে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে উত্তেজনা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানের কাছে নতি স্বীকার করার কোনোও ইচ্ছা তাদের নেই। কারণ শুক্রবার তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা জোর দিয়েছে।

এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’ এতে কিছুক্ষণের জন্য টেলিভিশনটির সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পরে সেটি পুনরায় সম্প্রচারে আসে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অধীনস্থ ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক (আইআরআইএনএন) জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলের হামলার পর আগুনে পুড়তে থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক সাংবাদিক। ভিডিওটিতে ওই সাংবাদিক বলেন, তিনি নিশ্চিত নন—এই হামলায় তার কতজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার বেশ কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের পরিচয় কী, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানাননি কর্মকর্তারা।

টেলিভিশনটির একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, হামলার সময় তারা ভবনটিতে কাজ করছিলেন। তখন সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। কিন্তু আকস্মিক হামলার পর কিছুক্ষণের জন্য সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর অবশ্য পুনরায় সম্প্রচার কাজ চালু করতে সক্ষম হন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

একপর্যায়ে টেলিভিশনটির সম্প্রচার শাখার প্রধান পেমান জেবেলি রক্তমাখা একটি কাগজ নিয়ে পর্দায় হাজির হন। সেটি দেখিয়ে তিনি বলেন, তারা ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন’।

গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের হামলার আগ মুহূর্তে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পর্দায় উপস্থাপিকাকে দেখা যাচ্ছিল। হামলার সময় উপস্থাপিকাকে দ্রুত সরে যেতে দেখা যায়। অন্যদিকে, গণমাধ্যম কার্যালয়টি ইরান সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।

এই হামলার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কাৎজের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মেগাফোন ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। হামলার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তেহরানের স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার পরে ওই হামলাটি চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ইরানের স্বৈরশাসক যেখানেই থাকুন না কেন, তাকে আঘাত করা হবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ