আওয়ামী লীগের কর্মসূচির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ
Published: 30th, January 2025 GMT
পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতের বিভিন্ন সময়ে পৃথকভাবে শিক্ষার্থীরা এসব বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের খবরে থাকছে বিস্তারিত-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় রাবির জ্বোহা চত্বরে শাখা জুলাই গণঅভ্যুত্থান মঞ্চ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এতে রাবির বিভিন্ন বিভাগের আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দেন, গণ অভ্যুত্থান মঞ্চের আহ্বায়ক জায়িদ জোহা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম আজম সাব্বির প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশ এখনো আওয়ামী লীগের তৈরি করা সংবিধানে চলছে। তাদের সে আইনে তারা এখনো বৈধ। দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ যে নির্যাতন নিস্পেষণ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে জুলাই বিপ্লবের পরে তারা যদি তাদের দলীয় কর্মকাণ্ড কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং একত্রিত হয়, তাহলে আমাদের জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্ত দেয়া বৃথা হবে। ৫ আগস্টের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছি।এই স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই ভুলূণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না।
তারা বলেন, আমরা এখানে কারো মুখ দেখে আসিনি। আওয়ামী লীগ যে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার প্রতিবাদ এবং তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করার জন্যে এখানে একত্রিত হয়েছি। আমাদের ক্ষোভ যারা এই এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং যারা এটা ঘোষণা করার সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের উভয়ের প্রতি। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ষড়যন্ত্রের লিপ্ত থাকলে আমরা তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব। এখনো রাজপথ ছাড়িনি, আমরা ২ হাজার শহীদের রক্তের বদলা নিয়েই ঘরে ফিরব। আমরা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়েই ঘরে ফিরব। এ দেশে কোন সন্ত্রাসীদের জায়গা হবে না।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাত ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে বিজয়-২৪ হলের গেটে গিয়ে সমাবেশ করেন তারা।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসাইন আবীর বলেন, “স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ আগামী ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে কর্মসূচি দিয়েছে। তারা জানে না, ৫ আগস্ট আমরা তাদের যেভাবে বিতাড়িত করেছি, একইভাবে এবাবো আমরা তাদের বিতাড়িত করব। আপনারা যেখানে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর, দালালদের পাবেন, সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেবেন। আমাদের নিরবতাকে তারা দুর্বলতা মনে করেছে। রাজপথে নেমে এলে তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না।”
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)
আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মসূচির প্রতিবাদে রাত ১০টায় ছাত্র হল প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সিকৃবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক হয়ে প্রশাসনিক ভবনের পাশে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিলে বিভিন্ন অনুষদের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
বিক্ষোভ-পরবর্তী সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সিকৃবিসহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে খুনি এবং স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগ ফিরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কোনভাবেই আসতে দেওয়া যাবে না। আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও অসীমের রক্তের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। যেখানেই ছাত্রলীগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সিকৃবিসহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।
তারা আরো বলেন, এখনো শহীদদের রক্তের দাগ শুকায়নি, সন্তানহারা মায়ের চোখের অশ্রু এখনো শুকায়নি, আমাদের অন্তরের ক্ষতও সারেনি। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগকে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন তারা পলাতক অবস্থায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। আমরা তা বাস্তবায়ন হতে দেব না।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)
নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঘোষিত কর্মসূচির প্রতিবাদে মধ্যরাতে উত্তাল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)।
রাত সাড়ে ১১টায় মশাল হাতে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হল থেকে মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাচতে চাই’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কুত্তালিগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ছাত্র সমাজের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, খুনি হাসিনার দোসররা ১-৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বিতরণ ও ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জুলাই আন্দোলনের রক্তের দাগ এখনো শুকাইনি, তারা এরকম কর্মসূচি পালনের সাহস পায় কিভাবে? যশোরের আন্দোলন যবিপ্রবি থেকে শুরু হয়েছে, ছাত্রলীগের এমন পোস্ট ও কর্মসূচির বিরুদ্ধেও প্রথম আন্দোলন যবিপ্রবি থেকেই শুরু হয়েছে। আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
তারা আরো বলেন, জুলাই-আগস্টে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের উচিত সেই অবস্থান থেকে বের হয়ে ছাত্র-জনতার পক্ষে দাঁড়ানো। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের উপর কড়া নজরদারি রেখে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)
রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী মোড়, আলাওল ও এফ রহমান হল এবং পরিবহন দপ্তর ভবন প্রদক্ষিণ করে রেলওয়ে স্টেশনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সহ-সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ খালেদ বলেন, “ডিসেম্বরে স্বৈরাচার বাশার আল আসাদ পালানোর পর ৩৫ জনকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। বিগত ৬ মাসে বর্তমান সরকারের কোন বিচারিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। এজন্য আমরা রক্ত দেইনি। যদি সন্ত্রাসীদের বিচার করতে ব্যর্থ হন, তাহলে পদত্যাগ করুন; আমরা বিপ্লবী সরকার গঠন করব।”
তিনি বলেন, “আমরা ছাত্রলীগের মোকাবেলা করার জন্য চবিতে প্রস্তুত। যদি কোন শিক্ষক-কর্মচারী তাদের রক্ষা করতে চান, আমরা তাদের প্রতিহত করব। স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ ফ্যাসিবাদের কোন নাম নিশানা থাকতে পারে না।”
আরেক সমন্বয়ক আব্দুর রহমান বলেন, “আমাদের অসংখ্য ভাইবোনকে শহীদ করে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাঙ্গপাঙ্গরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা পলাতক থেকে ফেব্রুয়ারি জুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। তারা আসুক, তাদের বিচার করতে এ দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে। এ দেশে কখনো আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ফিরে আসতে পারবে না।”
গতকাল বুধবার (২৮ জানুয়ারি) আনুমানিক রাত ১০ টার দিকে আওয়ামী লীগ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করে। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের নজরে আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এবং তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন তারা।
তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১-৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট ও প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান বন্দরে অবরোধ, ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ য কশন সরক র আওয় ম স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।