মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক দিন আগেই হুমকি দিয়েছিলেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। রিপাবলিকান পার্টির এ নেতা জানিয়েছেন, তিনি এ সিদ্ধান্ত বহাল রাখবেন। একইভাবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকস যদি বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত মার্কিন মুদ্রা ডলারের বিকল্প আনার চেষ্টা করে, তবে তাদের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপ করবেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। ট্রাম্প জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন, অর্থাৎ আজ শনিবার থেকেই কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যের ওপর এ ‘ট্রাম্প শুল্ক’ আরোপিত হতে যাচ্ছে। তবে দুই দেশ থেকে আসা তেলের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। 

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, তাঁর এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য বিপুলসংখ্যক নথিবিহীন অভিবাসী আসার বিষয়টি সামাল দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত দিয়ে ফেন্টানিল (মাদক) আসা বন্ধ করা। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। 

ট্রাম্প জানান, তিনি এখনও চীনের পণ্যে নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বাতিল করেননি। জানুয়ারিতে ট্রাম্প বলেছিলেন, চীনের পণ্যের ওপর নতুন শুল্কের পরিমাণ হবে ১০ শতাংশ। 

নির্বাচনী প্রচারকালে ট্রাম্প চীনের পণ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। শপথ নেওয়ার আগে-পরে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীভূত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আর মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘মার্কিন উপসাগর’ রাখেন। এ ছাড়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়েও দেশটির সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। 

এদিকে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের বিকল্প সন্ধানের চেষ্টা করে, তবে তাদের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে ডলার থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনাকে এখন আর  আমরা দাঁড়িয়ে থেকে দেখব না। এসব শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর কাছে থেকে আমরা একটি অঙ্গীকার চাই, শক্তিশালী ডলারের স্থলে তারা ব্রিকস মুদ্রার প্রচলন ঘটাবে না, বা অন্য কোনো মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করবে না। এমনটা করলে তারা শতভাগ শুল্কের মুখে পড়বেন।’

এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার ক্রেমলিন বলেছে, ডলারের পরিবর্তে নতুন মুদ্রার প্রচলন ঘটানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই; কখনও ছিলও না। 

এনডিটিভি জানায়, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ব্রিকস কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো নিয়ে কথা বলে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এ জোটে যোগ দিয়েছে। 

এদিকে ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রিনল্যান্ড কেনার যে ইচ্ছা সম্প্রতি ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন শোতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান। যদি তাঁর এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে বল প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বীপটির দখল নিতে পারেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো কৌতুক নয়। এটা কেবল ভোগদখলের উদ্দেশ্যে কোনো ভূমি অধিকার করা নয়। এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বার্থ জড়িত; বিষয়টি অবশ্যই সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্লভ রাঙা সিঁদুরের কথা

প্রায় ১০ বছর আগে উদ্ভিদবিষয়ক একটি ফিল্ডগাইডের রসদপত্র সংগ্রহে বনবাদাড়, পার্ক-উদ্যানগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছি বারবার। পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করতে গিয়ে দেখি কোনো একটি গাছের ফুলের ছবি আছে, পাতার ছবি নেই। আবার ফুল ও পাতার ছবি আছে তো ফলের ছবি নেই। এই যখন অবস্থা, তখন আবার ক্যামেরা নিয়ে ছুট। হাতের কাছে রমনা পার্ক। সেখানে যা নেই তার জন্য ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনই ভরসা।

এই ছোটাছুটির মধ্যেই একদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে চেনা হলো সিন্দুর বা সিঁদুরগাছটি। ফুল বা পাতায় এমন কোনো ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য নেই যে বিশেষভাবে মনে রাখা যাবে। তখন গাছে ফুল থাকলেও ফল ছিল না। কয়েক বছর পর ফলের দেখা পেলাম গাজীপুরের ‘আরণ্যক’ বাগানবাড়িতে। ফলটির রং দেখে গাছের নামকরণ যথার্থ মনে হলো। ফলের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় এই গাছ আঞ্চলিকভাবে সিন্দুরী, কামালাগুলি, কামেলা, কামিলা, কমলা, রাইনি, রুহিনি, কিংগুর, পুনাগ, তুং ইত্যাদি নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম কামালা ডাই ট্রি, কামালা ট্রি, মাঙ্কি ফেস ট্রি বা রেড বেরি ইত্যাদি।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও আরণ্যক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ পরিচিতি গ্রন্থে সিঁদুরকে সংকটাপন্ন বৃক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সিঁদুর আমাদের বন-পাহাড়ের নিজস্ব উদ্ভিদ। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটের মিশ্র চিরসবুজ বনাঞ্চলে এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও দিনাজপুরের পাতাঝরা শালবনে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো সিন্দুরগাছ এখন নিজ আবাসেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। বন উজাড় এবং অপরিকল্পিতভাবে গাছ আহরণের কারণে সিন্দুরগাছ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

সিন্দুর (Mallotus philippensis) ছোট বা মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হতে পারে। পাতা সরল, বোঁটা ২ থেকে ৬ সেন্টিমিটার, পত্রফলক আয়তাকার, কিনারা মসৃণ এবং আগা সুচালো। বছরজুড়ে ছোট আকৃতির পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে। পুরুষ ফুল হলুদ বর্ণের। স্ত্রী ফুল লাল বর্ণের, থাকে গুচ্ছাকারে। ফলের মৌসুমও প্রায় বর্ষব্যাপ্ত। গুচ্ছবদ্ধ ফলগুলো লম্বায় ৮ থেকে ১০ মিলিমিটার ও চওড়ায় ৫ থেকে ৬ মিলিমিটার। পরিপক্ব ফলের রং উজ্জ্বল লাল। প্রতিটি ফলে বীজের সংখ্যা ৩। বীজ গোলাকার, মসৃণ এবং কালো।

এ গাছের কাঠ জ্বালানি হিসেবে, যন্ত্রপাতির হাতল তৈরিতে এবং কাগজের মণ্ড বানাতে ব্যবহার্য। ফল কৃমিনাশক এবং খাওয়ার উপযোগী। বাকল ও পাতা চর্মরোগে উপকারী। পাপুয়া নিউগিনির আদিবাসীরা এ গাছের পাতার ক্বাথ উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। মিয়ানমারে বীজের লেই ক্ষতস্থানে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। পাকা ফলের খোসা থেকে লাল রঙের পাউডার সংগ্রহ করা হয়। রঙিন এ পাউডার পশমি কাপড়, সাবান, তেল, আইসক্রিম এবং যেকোনো পানীয় রাঙাতে ব্যবহার করা হয়। বাকলের ক্বাথ তলপেটের ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে। শিকড় থেকে তৈরি হয় লাল রং, বাকল রশি বানানোর কাজে এবং বীজ তৈলচিত্র ও বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়। বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যথা নিরাময়ে মধুর সঙ্গে পাতা, ফল ও শিকড় ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ ভারতের আন্দামান দ্বীপ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, চীন, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায়
পাওয়া যায়।

মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্লভ রাঙা সিঁদুরের কথা