বন্দরের উত্তরাঞ্চলের শীর্ষ মাদক কারবারি মোহাম্মদ আলী অন্তরালে গড়ে তুলেছে এক  ভয়ঙ্কর সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। মোহাম্মদ আলী যাত্রীবাহী বাস ডাকাত দলের আঞ্চলিক কমান্ডার।

তার নিয়ন্ত্রণে চালিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব পরিচয়ে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি। ঢাকা- চট্রগ্রাম মহাসড়কে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় গত দেড় মাসে যাত্রীবাহী বাসে পৃথক তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে এ বাহিনী।  

অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও দুই প্রবাসী সহ  তিন ব্যবসায়ীকে বাস থেকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা লুটে নেয়ার ঘটনা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছে মোহাম্মদ আলী।

দুই দিনের রিমান্ড শেষে গত বৃহস্পতিবার তাকে  আদালতে প্রেরণ করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি দিন দুপুরে প্রকাশ্যে ২১ লাখ টাকা সহ দুই প্রবাসীকে বাস থেকে  টেনে হেঁচড়ে  নামানোর  ধারণকৃত  একটি  ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে পুলিশের।

ধারণকৃত ওই ভিডিওতে থাকা শহিদুল ইসলাম মাঝি (৫৪), নেসার উদ্দিন বাচ্চু (৫২) ও বাবুল (৪০) নামে তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে  বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারি অফিসার এসআই জহিরুল ইসলাম।

জানাগেছে, আবু হানিফ (৩৫) ও রাজিব ভূঁইয়া (৩৫) দুই প্রবাসী গত ১৪ জানুয়ারি ডুবাই থেকে বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দর থেকে তারা একটি প্রাইভেটকার যোগে বাইতুল মোকাররম মার্কেটে এসে ডলার ভাঙ্গান। তার পর  রাজধানী ফ্লাইওভার থেকে এশিয়া লাইন (১৪-৭৫৩৩) যাত্রীবাহী  বাসে উঠে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা ।

দুপুর আড়াই টার দিকে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দর থানাধীন জাঙ্গাল এলাকায় আব্দুল মোনেম লিমিটিড গেইটের সামনে বাসটি পৌঁছালে একটি সাদা রংয়ের হাইয়েজ বাসটি গতিরোধ করে ৩/৪ জন লোক র‌্যাবের কটি পরিহিত অবস্থায় বাসের ভেতর প্রবেশ করে।

এরপর ডাকাতরা নিজেদের র‌্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রবাসী রাজিব ভূইয়া ও আবু হানিফের  বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে বাস থেকে নামিয়ে ডাকাতদের ব্যবহৃত হাইয়েজ গাড়িতে তুলে।

এসময়  প্রবাসীদের সঙ্গে থাকা কালো ও বুলু রংয়ের ব্যাগে থাকা নগদ  ৫ হাজার  ব্রিটিশ পাউন্ড,  ২ হাজার  অস্ট্রেলিয়ান পাউন্ড,২টি মোবাইল ফোন, ৩টি পাসপোর্ট সহ ২১ লাখ টাকার মালামাল জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে ডেমরা এলাকার একটি পরিত্যাক্ত রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।  

এঘটনায় প্রবাসী আবু হানিফ বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  গত ৪ জানুয়ারি কুমিল্লা দেবিদ্ধারের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম(৫০) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ৬৫ লাখ নিয়ে এশিয়া লাইন পরিবহনে  ঢাকা আসার পথে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় পৌঁছালে  র‌্যাব পরিচয়ে বাস নামিয়ে একই কায়দা সর্বস্ব লুটে নিয়ে ডাকাতদল।

 ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর রাতে চট্রগ্রাম সদর থানার ২২ গোলাপ সিং লেন এলাকার মৃত সুকুমার রায়ের ছেলে চন্দন রায় (৫৩) ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাচ্ছিলেন। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বন্দরের লাঙ্গলবন্দ পৌঁছালে ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার সহ  হানিফ পরিবহন থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় ডাকাতরা।  পরে ব্রিজের নিচে ফেলে রেখে গেলে  স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে পুলিশের সহযোগিতায় বন্দর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন,  ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে  র‌্যাব পরিচয়ে যাত্রীবাহী বাসে ৩ টি ডাকাতির ঘটনায়  আঞ্চলিক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী সহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনটি ঘটনা ঘটিয়েছে বলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি প্রদান করে তারা। গ্রেপ্তারকৃত সকলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ