বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ করতে হবে ছাত্র রাজনীতি
Published: 4th, February 2025 GMT
সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের রাজনীতি থেকে জাতি উপকৃত হয়নি। ছাত্র রাজনীতির নামে যা হয়, তা অর্থনৈতিক দুর্নীতি পর্যায়ে চলে যায়। মারধর ছাত্র রাজনীতি হতে পারে না। প্রতিটি ক্যাম্পাসে দলভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। এ ধরনের রাজনীতি বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়।
গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রধান এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড.
ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ভোটার হিসেবে যে কেউ রাজনীতি করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আচরণবিধির বিবেচনায় ছাত্র রাজনীতির যেগুলো খারাপ, সেগুলো বন্ধ হতে হবে। যেগুলো ভালো, সেগুলো থাকতে পারে। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরাই উঠতে পেরেছে। অছাত্ররা হল ছেড়ে দেওয়ায় অনেক জায়গা খালি হয়েছে।
টাস্কফোর্সের মূল প্রতিবেদনেও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধের সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ব্যাপক পরিসরে ছাত্র রাজনীতি দেখা যায়, যা একাডেমিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে টাস্কফোর্সের ৫২৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি তুলে দেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় দেশে বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে গত ১১ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার।
বিমানকে বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার সুপারিশ
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিমান গত ৫০ বছরেও আধুনিক ও উন্নত যাত্রীসেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বছর বছর লোকসান না দিয়ে বাংলাদেশ বিমানকে নতুন এয়ারলাইন্সে রূপান্তরের সুপারিশ করা হয়। ‘বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ’ নামকরণ এবং একটি স্বাধীন ও বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনার প্রস্তাব করা হয় প্রতিবেদনে।
সংবাদ সম্মেলেন এ প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ বিমান একটি ‘অথর্ব প্রতিষ্ঠান’। এটাকে কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান এবং আধুনিকায়ন করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে কোনো বিশেষজ্ঞ বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনে লোকসান কমাতে বিমানকে দুই ভাগ করে এক ভাগ বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে পরিচালনা এবং অন্য ভাগ বিমানের মাধ্যমে পরিচালনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে দুই সংস্থাই। এর পর দেখব কোন সংস্থা ভালো করেছে।
প্রতিবেদনে সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়।
একটি মন্ত্রণালয়ের সংস্কার
সরকারের একটি মন্ত্রণালয়কে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, একটি মন্ত্রণালয় পরীক্ষামূলকভাবে বেছে নিয়ে তার সব কাজের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
সরকারি হাসপাতাল
ঢাকার একটি নির্দিষ্ট সরকারি হাসপাতালকে পরীক্ষামূলক সংস্কারের জন্য বেছে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাধারণ প্রশাসকের পরিবর্তে যোগ্য হাসপাতাল প্রশাসকদের নিয়োগ এবং একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
গ্রামীণ বিদ্যালয় ও ক্লিনিক সংস্কার
একইভাবে একটি গ্রামীণ সরকারি বিদ্যালয় এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিককে সংস্কারের জন্য পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, গ্রামের একটি সরকারি বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্বাচন করে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়া সরকারি হাসপাতালের মৌলিক বিষয়গুলো চালু করা যেতে পারে।
বিআরটিএর সংস্কার
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত কৌশল অন্য খাতের মতোই হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিআরটিএর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও ব্যবহারকারীদের মতামতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি রিয়েল টাইম ডেটা ব্যবহার করার জন্য তরুণ ও নাগরিকদের মনিটরিং গ্রুপ গঠন করা যেতে পারে। এটি সংস্কার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।
বুড়িগঙ্গা নদীর পুনরুজ্জীবন
বুড়িগঙ্গা নদী ও ঢাকা টিকে থাকার জন্য জরুরি পদক্ষেপ দরকার। এ বিষয়ে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। প্রয়োজনে জরুরি আইন প্রণয়ন করে এ সম্পর্কিত পাইলট প্রকল্প ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
টাস্কফোর্সের সদস্যদের মধ্যে যিনি যে বিষয়ে কাজ করেছেন, সে বিষয়ে প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে ব্যাখ্যা দেন এবং সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো কীভাবে কার্যকর করা হবে– সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, টাস্কফোর্স তাদের সুপারিশ দিয়েছে। তার ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়গুলোকে সংশ্লিষ্ট সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ছ ত র র জন ত স প র শ কর র র জন য ব যবস থ উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।