দীর্ঘ ১৫ বছর পর উৎসবমূখর পরিবেশে বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন ২০২৫-২০২৭ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৫ বছর ওসমান পরিবারের দখলে ছিল এই এসোসিয়েশন। ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। 
নির্বাচনে ১৮টি পদের জন্য ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্বীতা করেন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্মাণাধীন ভবনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। পরে গননা শেষে রাত সাড়ে তিনটায় ভোটের ফলাফল প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে সাইফুল ইসলাম হিরু (নিউ শেখ হোসিয়ারী) ৮৬২ ভোট, সাঈদ আহমেদ স্বপন (সেহেলী হোসিয়ারী এন্ড গার্মেঃ) ৭১৯ ভোট, আলহাজ্ব মোঃ নাছির শেখ (নাছির হোসিয়ারী) ৭০২ ভোট,আবদুস সোবহান তালুকদার (আদর হোসিয়ারী) ৫৭৫ ভোট, নাছিম আহমেদ (গাজী হোসিয়ারী) ৪৯৮ ভোট, মোঃ বিল্লাল হোসেন (সেভেন স্টার হোসিয়ারী) ৪৯৫ ভোট পেয়েছে।


এদিকে জেনারেল গ্রুপে ১২ জন নির্বাচিতরা হলেন, আলহাজ্ব বদিউজ্জামান বদু (বদিউজ্জামান টেক্সটাইল) ৮৯৩ ভোট, মোঃ আবদুল হাই (নিউ বৃষ্টি টেক্সটাইল) ৮২৭ ভোট,মোঃ মিজানুর রহমান (সায়মন হোসিয়ারী) ৮০৫ ভোট, মোঃ পারভেজ মল্লিক (নিউ লিপি হোসিয়ারী এন্ড গার্মেন্টস) ৭৮৭ ভোট, আবদুস সবুর খান (সাকলাইন টেক্সটাইল) ৭৮৩ ভোট, হাজী মোঃ শাহীন হোসেন (শাহীন ট্রেডার্স) ৭৫১ ভোট মোঃ আতাউর রহমান (গনি হোসিয়ারী এন্ড গার্মেন্টস) ৭২৭ ভোট,আলহাজ্ব মোঃ মনির হোসেন (নিউ মনির হোসিয়ারী) ৭২০ ভোট,মোঃ দুলাল মল্লিক (আদর ট্রেডার্স) ৬৯০ ভোট, ফতেহ মোহাম্মদ রেজা (ফতেহ হোসিয়ারী) ৬৭০ ভোট, মোঃ মাসুদুর রহমান (আবীর ফ্যাশন) ৬০৫ ভোট,বৈদ্যনাথ পোদ্দার (নিউ দূরস্থ হোসিয়ারী) ৫৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। 


নির্বাচনে মোট ১ হাজার ১৫৯ জন ভোটারদের মধ্যে ভোট পড়েছে ১ হাজার ১১৩ টি। ভোটার উপস্থিতি ছিলো ৯৬.

০৩ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাসাস জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুল ইসলাম সানি। 


এ বিষয়ে আনিসুল ইসলাম সানি বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আনন্দঘন পরিবেশে ভোটাররা ভোট প্রদান করেন। নির্বাচনে এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে ৬জন ও জেনারেল গ্রুপ থেকে ১২ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। রাতেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ভোটের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষনা করেন। 
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ এস স য় ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ