চট্টগ্রাম বন্দরে আজও বন্ধ পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন
Published: 7th, February 2025 GMT
প্রাইমমুভার-ট্রেইলার শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে আজ শুক্রবারও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের এই কর্মসূচির কারণে বন্দরে কোনো ধরনের কনটেইনারবাহী গাড়ি ঢুকতে ও বের হতে পারছে না। এর ফলে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোয় পণ্য জটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ডিসি পার্ক এলাকায় পণ্যবাহী যানবাহনের চালকদের সঙ্গে পার্কের প্রহরীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় শ্রমিকদের একজন প্রতিনিধি মামলা করেন। শ্রমিকেরা বলছেন, মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাঁরা যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন। শ্রমিকেরা ফৌজদারহাটমুখী বন্দর সড়কে কনটেইনারবাহী গাড়ি নিয়ে যেতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাইমমুভার ও ট্রেলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো.
যা হলো গত তিন দিনে
মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ডিসি পার্কের দায়িত্বে থাকা আনসার ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ট্রাক-লরির চালক ও শ্রমিকদের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিসি পার্কে ভাঙচুর চালান চালক-শ্রমিকেরা। সেখানে রাত প্রায় ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় ট্রাক-লরির চালক ও শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। বুধবার ভোরে তাঁরা সরে গেলেও আবার কর্মবিরতির ডাক দেন।
এরপর বুধবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় আবারও কর্মবিরতি। এ সময় সড়কে চলাচল করা লরি ও কাভার্ড ভ্যানের চালকদের গাড়ি থামিয়ে দেন কিছু শ্রমিক। চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশ ও বের হতে দেননি শ্রমিকেরা। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাড়ে ১৪ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন তাঁরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও কর্মসূচি দেওয়া হয়। আজ শুক্রবারও কর্মবিরতি চলছে।
গতকাল শ্রমিকদের একটি দাবি ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ডিসি পার্ক বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত বন্দরে কর্মবিরতি পালন করবেন তাঁরা। এর মধ্যে এদিন রাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পাতায় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা, ‘সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজের জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক বন্ধ থাকবে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা
ডিসি পার্কে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন মো. মাসুদ, মো. ফারুক, মো. রায়হান, মো. মামুন এবং জানে আলম সাদ্দাম। এর মধ্যে মো. মাসুদ ডিসি পার্কের পার্কিংয়ের ইজারাদার।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মঙ্গলবার পার্কিং–সংক্রান্ত ঘটনার জের ধরে ইজারাদার মাসুদ এবং অন্যান্য আসামিরা লরি চালক ও শ্রমিকদের লোহার রড, লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেছেন। এ ছাড়া শ্রমিকদের লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে তাঁদের কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
শ্রমিকদের পক্ষে মামলাটি করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রাইমমুভার ও ট্রেলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের। জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বন্দরের বিভিন্ন ফটকের সামনে এলোপাতাড়ি করে ফেলে রাখা হয়েছে একাধিক লরি। এতে কোনো পণ্যবাহী যানবাহন বন্দরে ঢুকতে ও বের হতে পারছে না। নগরের নিমতলা বিশ্বরোড এলাকায় গিয়ে যায়, সেখানে উড়ালসড়কের একটি র্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে। যার কারণে সড়কের ওই অংশটিতে খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। অন্যপাশে সারি বেঁধে রাখা হয়েছে পণ্যবাহী বিভিন্ন যানবাহন। এতে সড়ক দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হতে দেখা যায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।