মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিভা সরকার মারা গেছেন। গতকাল শনিবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রতিভা সরকার (২১) সাতক্ষীরার বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বিপ্রজিৎ সরকার ও তালা উপজেলা মহিলাবিষয়ক অফিসের প্রধান সহকারী দেবকী রায় দম্পতির মেয়ে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তালা উপজেলা সদরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়িয়া গ্রামে।

গত ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সোনামুর মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী প্রতিভা সরকার গুরুতর আহত হন। মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডল (২৬), যার সঙ্গে প্রতিভার বাগ্‌দান হয়েছিল। ঘটনাস্থলে অর্ঘ্য নিহত হন। তিনি ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন। প্রতিভা ছিলেন ওই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

প্রতিভার বাবা বিপ্রজিৎ সরকার বলেন, অর্ঘ্য ও প্রতিভা ৩০ জুন ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরায় আসছিলেন। পথে গোপালগঞ্জে তাঁরা দুর্ঘটনায় পড়েন। ঘটনাস্থলে মারা যান অর্ঘ্য। প্রতিভাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গতকাল বেলা ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডলের সঙ্গে প্রতিভা সরকারের বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের তারিখ ছিল ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু ১৭ জানুয়ারি অর্ঘ্যের এক জেঠা (বাবার চাচাতো ভাই) মারা যাওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে পারিবারিকভাবে তারিখ পরে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়। মৃত জেঠার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাড়িতে আসছিলেন অর্ঘ্য। বাগ্‌দত্তা প্রতিভাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। ইচ্ছা ছিল, ৩১ জানুয়ারি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে সবাই বসে তাঁদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবেন।

আরও পড়ুনবাগ্‌দত্তাকে নিয়ে ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক নিহত, পরিবারে মাতম৩১ জানুয়ারি ২০২৫

নিহত অর্ঘ্য সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সদরের চণ্ডীপুর গ্রামের অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল ও মিনতি রানী মণ্ডল দম্পতির ছেলে। অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর তারকানাথ বিদ্যাপীঠের ক্রীড়াশিক্ষক। অর্ঘ্য মা–বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামে।

বিপ্রজিৎ সরকার জানান, প্রতিভার মরদেহ গতকাল রাত ১০টার দিকে তালায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে দিবাগত রাত ১২টায় মরদেহ নেওয়া হয় গ্রামের বাড়ি কয়রা উপজেলার মঠবাড়িয়ে গ্রামে। আজ গ্রামের শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ দ র ঘটন য় উপজ ল র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরা-৪ আসনের পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

সাতক্ষীরা-৪ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শ্যামনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে শ্যামনগর পৌরসভায় এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতক্ষীরার ২টি আসনসহ দেশের মোট ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল খবরটি ছড়িয়ে পড়লে শ্যামনগরে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দুই শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় তাঁরা ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মানি না, মানব না’, ‘শ্যামনগর আসন ছিল, শ্যামনগর থাকবে’, ‘পুনর্গঠন সিদ্ধান্ত বাতিল কর, করতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

পরে জেসি কমপ্লেক্স চত্বরে পথসভা করে বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। এ সময় বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সোলায়ামন কবীর, জেলা বিএনপির সদস্য জি এম লিয়াকত আলী, সাবেক চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটির আসন পুনর্বিন্যাস করে প্রাথমিক গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। পুনর্বিন্যাস করার আগে সাতক্ষীরা-৪ আসনটি শ্যামনগর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও পাশের কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশের ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ছিল। এবার পুনর্বিন্যাস করে শ্যামনগর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শ্যামনগর উপজেলার সঙ্গে আশাশুনি উপজেলার সরাসরি যোগযোগ নেই। শ্যামনগর থেকে আশাশুনি যেতে হলে কালীগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে অথবা নৌকায় নদী পার হয়ে যেতে হয়।

অন্যদিকে সাতক্ষীরা-৩ আসনে ছিল আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশ ৪টি ইউনিয়ন। পুনর্বিন্যাস করে কালীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে সংসদীয় আসন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতক্ষীরা-৪ আসনের পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল