দুর্ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকের মৃত্যুর ১০ দিন পর চলে গেলেন বাগ্দত্তাও
Published: 9th, February 2025 GMT
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিভা সরকার মারা গেছেন। গতকাল শনিবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রতিভা সরকার (২১) সাতক্ষীরার বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বিপ্রজিৎ সরকার ও তালা উপজেলা মহিলাবিষয়ক অফিসের প্রধান সহকারী দেবকী রায় দম্পতির মেয়ে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তালা উপজেলা সদরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়িয়া গ্রামে।
গত ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সোনামুর মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী প্রতিভা সরকার গুরুতর আহত হন। মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডল (২৬), যার সঙ্গে প্রতিভার বাগ্দান হয়েছিল। ঘটনাস্থলে অর্ঘ্য নিহত হন। তিনি ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন। প্রতিভা ছিলেন ওই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
প্রতিভার বাবা বিপ্রজিৎ সরকার বলেন, অর্ঘ্য ও প্রতিভা ৩০ জুন ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরায় আসছিলেন। পথে গোপালগঞ্জে তাঁরা দুর্ঘটনায় পড়েন। ঘটনাস্থলে মারা যান অর্ঘ্য। প্রতিভাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গতকাল বেলা ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডলের সঙ্গে প্রতিভা সরকারের বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের তারিখ ছিল ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু ১৭ জানুয়ারি অর্ঘ্যের এক জেঠা (বাবার চাচাতো ভাই) মারা যাওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে পারিবারিকভাবে তারিখ পরে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়। মৃত জেঠার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাড়িতে আসছিলেন অর্ঘ্য। বাগ্দত্তা প্রতিভাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। ইচ্ছা ছিল, ৩১ জানুয়ারি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে সবাই বসে তাঁদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবেন।
আরও পড়ুনবাগ্দত্তাকে নিয়ে ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক নিহত, পরিবারে মাতম৩১ জানুয়ারি ২০২৫নিহত অর্ঘ্য সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সদরের চণ্ডীপুর গ্রামের অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল ও মিনতি রানী মণ্ডল দম্পতির ছেলে। অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর তারকানাথ বিদ্যাপীঠের ক্রীড়াশিক্ষক। অর্ঘ্য মা–বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামে।
বিপ্রজিৎ সরকার জানান, প্রতিভার মরদেহ গতকাল রাত ১০টার দিকে তালায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে দিবাগত রাত ১২টায় মরদেহ নেওয়া হয় গ্রামের বাড়ি কয়রা উপজেলার মঠবাড়িয়ে গ্রামে। আজ গ্রামের শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ দ র ঘটন য় উপজ ল র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মালঞ্চ নদীর চর দেবে গিয়ে উপকূল রক্ষা বাঁধের পাঁচ নম্বর পোল্ডারের সিংহড়তলী অংশে ভয়াবহ ধসের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার দুপুরে শুরু হওয়া ধস আজ সোমবার আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এর আগে শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে চুনকুড়ি ও সিংহড়তলী এলাকায় চর দেবে যাওয়ার পর থেকেই বাঁধে ধস শুরু হয়।
খবর পেয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করছেন।
ধস একেবারে জনবসতির কোল ঘেঁষে হওয়ায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নদীতে জোয়ারের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের অবশিষ্ট দুই থেকে আড়াই ফুট অংশ যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। এতে সুন্দরবন তীরবর্তী কয়েকটি জনপদ লবণ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মালঞ্চ নদীর ছয়টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিলেও সিংহড়তলী অংশের অবস্থা সবচেয়ে সংকটাপন্ন। তারা জানান, দ্রুত বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা না হলে পরবর্তী জোয়ারে সাত থেকে আটটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
স্বেচ্ছাসেবক আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, ‘মাত্র সাত-আট মাস আগে এখানে মাটির কাজ হয়েছিল। বাঁধের পাশে অতিরিক্ত মাটি নেওয়ায় বাঁধ অনেকটা খাড়া হয়ে ছিল। কয়েকদিন ধরে ফাটল দেখা দেয়ার পর শনিবার থেকে ধস শুরু হয়। পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে জিওশিট চাপিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও শনিবার রাতে সবকিছু ধসে যায়।’
স্থানীয় বনজীবীদের নেতা বাবলুর রহমান সমকালকে বলেন, শনিবার দুপুরে বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট অংশ নদীতে ধসে পড়ে। রোববার সকালের জোয়ারে আরও এক দফা ধসের পর বাঁধের অবশিষ্ট উচ্চতা এখন মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট। তিনি বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সিংহড়তলী, চুনকুড়ি, হরিনগর, যতীন্দ্রনগর, ছোট ভেটখালীসহ অন্তত সাতটি গ্রাম তাৎক্ষণিকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নীপা রানী সমকালকে বলেন, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ছয়টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সিংহড়তলীর অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বসতবাড়ির পাশে ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকাবাসী উদ্বাস্তু হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে একাধিকবার সর্বস্ব হারিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন সমকালকে বলেন, শনিবার বিকেলে ভাঙন কবলিত অংশে শতাধিক জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও তাতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন বাঁধের ভেতর দিয়ে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি জানান, রোববার রাতের মধ্যে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ শেষ করা গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন সমকালকে বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভাটার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। পানি নামলে শত শত গ্রামবাসীকে নিয়ে ভাঙন রোধে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে।’