চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো পাঁচ দিনব্যাপী একুশে বইমেলা শুরু হয়েছে।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ বইমেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
‘বই হোক আনন্দ ও সচেতনতার উপকরণ, বইমেলায় সবাইকে আমন্ত্রণ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ মেলা চলবে আগামী শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এ বইমেলা। মেলায় ৩০টি স্টলে জাতীয়, আঞ্চলিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন প্রকাশনীর বই রয়েছে।
বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড.
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, “বইমেলায় আসা, গল্পগুজব করা এবং বই হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখাও বইমেলার একটি অংশ। প্রতি বছর বই প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বই লিখছেন। তবে আমি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, বইমেলায় মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “সম্প্রতি বাংলা একাডেমির এক জরিপে দেখা গেছে, একটি বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মানসম্মত। বাকি ৯০ শতাংশ বইয়ে ঠিকমতো সম্পাদনা, বিষয়বস্তু ও থিম নেই। এজন্য আমি বাংলা একাডেমির বিশৃঙ্খলাকে দায়ী করব।”
এদিকে মেলা ঘুরে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রকাশনীর স্টল দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাতিঘর প্রকাশনী, রাষ্ট্রচিন্তা প্রকাশনী, ছাত্রশিবিরের আইসিএস পাবলিকেশন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, প্রথমা প্রকাশন, অনুশীলন প্রকাশনী, তৃতীয় চোখ প্রকাশন ও ছোট কাগজ, সাহিত্য বিচিত্রা প্রকাশনা, আপন আলো প্রকাশনা, বলাকা প্রকাশনী, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, রঁদেভু প্রকাশনা পর্ষদ, কথাপ্রকাশ, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি, মুনলাইট প্রকাশন, হাওলাদার প্রকাশনী, স্বাধীন প্রকাশন, নন্দন বইঘর, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, অক্ষরবৃত্ত, আলোকধারা অন্যতম।
রাষ্ট্রচিন্তা প্রকাশনীর চবি শাখার সভাপতি এসবি ফররুখ হোসেন রিফু বলেন, “এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমি মনে করি এ ধরনের বইমেলা বছরে তিনবার হওয়া উচিত।”
মেলায় ঘুরতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাফওয়ান বলেন, “বইমেলা শুধু একটা মেলা না। আমাদের চিন্তা মননশীলতার ধারকও বটে। আমরা জাতি হিসেবে বই বিমুখ। আমরা সিস্টেমের জাঁতাকলে পড়ে বইয়ের কাছে যেতে পারি না।”
তিনি বলেন, “বইমেলাগুলো শহরে হয়। তখন আমাদের ওই মেলায় অংশগ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য ক্যাম্পাসে বইমেলা হওয়া আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো দিক। বইমেলায় এসে বই কিনতেই হবে, বিষয়টি এমন না।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য বইম ল য় আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?