চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে যান। এ নিয়ে ভারতীয়দের গর্বের শেষ নেই। সেদেশেই নবজাতক শিশু ও মায়েদের সুরক্ষায় বাংলাদেশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনুকরণ হচ্ছে! এমন ছোট্ট একটি পোস্টারের কারণে তুমুল আলোচনা চলছে। 

অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি তাদের জানা নেই। তাহলে কীভাবে এল এই পোস্টার, তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। 

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের আইসিইউর ঠিক পাশে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ারের পোস্টার। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর সেই সন্তানকে কীভাবে পরিচর্যা করা প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে সচেতনতার কথা লেখা রয়েছে এই পোস্টারে। 

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে শরীরে পেট্রোল ঢেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪

ভারতের সরকারি-বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালেই দেওয়া হয় ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার পোস্টার। তবে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে সেই পোস্টারের বাংলাদেশ সরকারের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু লোগো ব্যবহারই নয়, অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গোটা পোস্টার কপি করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের সুপার ধীমান মন্ডলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। তবে এ ধরনের লোগো ব্যবহার করা যায় না। কে লাগিয়েছে, কেন লাগানো হয়েছে, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” 

এরপর সেই পোস্টার সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়।

দুই দেশের শীতল কূটনৈতিক সম্পর্কের মাঝে এমন ছোট্ট ঘটনাতেও রাজনৈতিক রঙ লাগতে সময় লাগেনি। ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে হাসপাতালে হাজির হন বিজেপির চিকিৎসক সেলের সদস্যরা। সঙ্গে ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। সুপারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তারা। শেষ পর্যন্ত সুপার গাফিলতির কথা কার্যত স্বীকার করে নেন। 

ধীমান মন্ডল বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে কে পোস্টার লাগিয়েছে, তাকে খুঁজে বের করা হবে। পুলিশকেও জানানো হয়েছে। 

বিজেপির পক্ষ থেকে হাসপাতাল সুপার ধীমান্ড মন্ডলের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং দায়ীকে খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ধীমান মন্ডল। 

বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত। এখানে যে কোনো সরকারি হাসপাতাল বা সরকারি দপ্তরে কোনো পোস্টার দিতে হলে সেখানে ভারত সরকার বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পোস্টার দেওয়া উচিত। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের একটি পোস্টারে বাংলাদেশের লোগো ব্যবহার করা হলো। আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি। এই বিষয়টি কেন করা হলো, দেখা দরকার সরকারের প্রতিনিধিদের। যারা এই কাজ করল, তাদের কঠোর শাস্তিরও দরকার।” 

সমালোচনায় সরব হয়ে পাল্টা শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ধমান জেলার সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির পর থেকে এ রাজ্যকেও অশান্ত করার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। সরকারি হাসপাতালের ভেতরেও চক্রান্ত করে কেউ বাংলাদেশের লোগো লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা সুপারকে থানায় অভিযোগ জানানোর জন্য বলব। যে এই ঘটনার সাথে জড়িত, তার বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও পুলিশকে জানান হবে।”

দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের দেয়ালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো দেওয়া পোস্টার ঘিরে শুক্রবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ সরক র র ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ