ছয় দফা দাবিতে টিঅ্যান্ডটি ভবনের সামনে প্রবাসী শ্রমিকদের বিক্ষোভ
Published: 10th, February 2025 GMT
পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, দুবাইতে নো এন্ট্রি তুলে নেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য ফাউন্ডেশন গঠন করাসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত প্রবাসী শ্রমিকেরা।
আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কাছে টিঅ্যান্ডটি ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে জড়ো হন প্রবাসী শ্রমিকেরা। পরে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রওনা দেন।
প্রবাসী শ্রমিকেরা বলেন, জুলাই মাসে বাংলাদেশে যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন প্রবাসে থেকে তাঁরাও আন্দোলন করেছিলেন। এ কারণে তাঁদের জেলে যেতে হয়েছে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এতে তাঁদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন। কষ্টের কথাগুলো জানাতেই এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন।
আন্দোলনকারীদের একজন ছগির তালুকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে দুবাই বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আন্দোলন করার কারণে তাঁর যাবজ্জীবন শাস্তি হয়েছিল। পরে দেশে ফিরে এসেছেন। এখন আর দুবাই ফিরতে পারছেন না। দুবাইতে নো এন্ট্রি তুলে না নিলে তিনি আর দুবাই ফিরতে পারবেন না।
প্রবাসীদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো—
১.
২. সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ–ফেরত প্রবাসীদের নো এন্ট্রি দেওয়া হয়েছে। নো এন্ট্রি তুলে নিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া।
৩. একই মামলায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে এখনো গ্রেপ্তার চলমান রয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত গ্রেপ্তারি প্রক্রিয়া বন্ধ করা। এ ছাড়া ওই মামলায় এখনো সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগারে যেসব বাংলাদেশি প্রবাসী বন্দী আছেন, তাঁদের অতি দ্রুত মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনা।
৪. যাঁরা প্রবাসীদের নামের তালিকা বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দিয়েছিলেন, তাঁরাসহ সে সময়ের কূটনৈতিক, কনস্যুল জেনারেল বি এম জামালসহ জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করা।
৫. ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মতো একটি ট্রাস্ট গঠন করা, যাতে দেশের স্বার্থে ক্ষতিগ্রস্ত যেকোনো প্রবাসী একটি ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের তালিকায় কারা নির্যাতিত হয়ে দেশে আসা প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা।
৬. বিপদগ্রস্ত প্রবাসীদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের লক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চান প্রবাসীরা। সেই অনুষ্ঠানের জন্য সম্মতি দেওয়া ও আমন্ত্রণ পৌঁছানোর জন্য সাতজনের প্রতিনিধিদলকে সাক্ষাৎকারের অনুমতি দেওয়া।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নগর উন্নয়নে সবুজকে কেন্দ্রে রাখতে হবে
বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সবুজ অঞ্চল রাখতে হয়। এ জন্য সব সংস্থার সমন্বয়ে স্বল্প–মধ্য–দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। শুধু নগর নয়, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সারা দেশের জন্য প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান (নেচার–বেজড সলিউশন) দরকার। জীবনযাপনে যেন প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটাও একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে নগর উন্নয়নে প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিতে করণীয় বিষয়ক এক তথ্য সংকলন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন নগরবিশেষজ্ঞরা। প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট (আইইউসিএন) বাংলাদেশ এবং গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) যৌথভাবে সংকলনটি প্রণয়ন করেছে, যার অর্থায়ন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। এতে ২০টি বিস্তৃতভাবে প্রয়োগযোগ্য ‘নেচার–বেজড সলিউশন’ উদ্যোগ উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে শহর পরিকল্পনাকারী, নীতিনির্ধারক ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য একটি কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান বা নেচার–বেজ সলিউশন হচ্ছে প্রকৃতির কোনো ধরনের ক্ষতি না করে বা মাটি, বায়ু, পানিসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অটুট রেখে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন। তিনি বলেন, ‘এই সংকলন শুধু একটি নথি নয়, এটি আমাদের সবুজ ও নিরাপদ শহর গঠনের প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরে।’
প্রকৃতির কাছে আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত মন্তব্য করে ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ‘আমাদের জীবনযাপনে প্রকৃতি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক এস এম মেহেদি আহসান বলেন, নগরকে বাসযোগ্য করতে হলে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩০ শতাংশ অঞ্চল সবুজ রাখতে হয়। বাংলাদেশের জাতীয় লক্ষ্য সেটাই হওয়া উচিত।
বিষয়টি বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে এস এম মেহেদি আহসান বলেন, ‘আমাদের একটা বিল্ডিং কোড আছে। সেটা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থার দক্ষতার উন্নয়ন করার সুযোগ আছে। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যে ১ হাজার ৪০০ প্রকল্প আছে। সেগুলোকে যদি প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তাহলে একটা পরিবর্তন আসবে।’ তবে এটার জন্য সব মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ব্রিটিশ হাইকমিশনের ক্লাইমেট ও এনভায়রনমেন্ট উইংয়ের টিম লিডার নাথানিয়েল স্মিথ বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু অভিযোজন সব সময় তাঁদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে। বাংলাদেশের প্রকৃতি, জীবন–জীবিকার সুরক্ষা দিতে ব্রিটিশ সরকার স্থানীয় সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
জলবায়ু অভিযোজন খাতে অধিক বিনিয়োগ কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়ে ব্রিটিশ সরকার কাজ করছে জানিয়ে নাথানিয়েল স্মিথ বলেন, ‘আমরা সুন্দরবন, হাকালুকি হাওরের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় এগুলো রক্ষা করা জরুরি।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুর রশিদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের চলমান কিছু প্রকল্পে আমরা প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের চর্চা করি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ক্লাইমেট মিটিগেটেড নলেজ হাব তৈরি করেছি। পাশাপাশি জার্মান সরকারের অর্থায়নে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট লোকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্প চলছে।’ বাংলাদেশ সরকারের ১৩২টি প্রকল্প ও উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে ৩২টি প্রকল্পে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য দেন আইইউসিএনের বাংলাদেশের অ্যাক্টিং কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন এবং জিসিএর ইন্টেরিম কান্ট্রি ম্যানেজার এম ফয়সাল রহমান। মূল প্রবন্ধ পড়েন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক আলিয়া শাহেদ।